অপরাধ-আইন-আদালত

দেশের মালিক জনগণ- হাইকোর্ট

  প্রতিনিধি ৩০ জুলাই ২০২৩ , ৩:৩৩:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।এক মামলায় আগাম জামিনপ্রাপ্ত আসামি আটকের ঘটনা ঘিরে শুনানিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন,দেশের মালিক জনগণ।আপনারা নিজেরাই মালিক হয়ে গেছেন? জামিন দেওয়ার পর আসামি কোর্টে তুলবেন,এ কারণে কী দেশ স্বাধীন হয়েছে?’

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার দুই পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এসব কথা বলেন।দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমান।

‘জামিন নেওয়া শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার,আদালতে মুক্তি’ শিরোনামে গত ২০ মে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। পরদিন প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। গত ২১ মে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।একই সঙ্গে ব্যাখ্যা জানাতে পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুরকে ১৮ জুন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।ধার্য তারিখে তাঁরা হাজিন হন।আগের ধারাবাহিকতায় রবি ও সোমবার তাঁরা আদালতে হাজির হন।ওই ঘটনার জন্য তাঁরা লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষের আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান শুনানিতে অংশ নেন।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।শুনানি নিয়ে আদালত ৩০ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।

এর আগে শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেছিলেন, যখন ধরে নিয়ে যাওয়া হয়,তখন আসামি তাঁকে ফোন দেন। আসামির ফোনে এসআইয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়।আসামি আগাম জামিনে আছেন,জানানো সত্ত্বেও তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।থানায় নেওয়ার পর ওসিকে ফোন দেওয়া হয়। তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেন।এ বিষয়ে সোমবার আদালতে হলফনামা আকারে তথ্যাদি দাখিল করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।

যখন জানলেন,তখন কী করলেন?
শুনানিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান বলেন,হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে রাতে লঞ্চে করে আসামি পটুয়াখালী যান।সকালে সার্টিফিকেট (জামিন মঞ্জুর–সংক্রান্ত আইনজীবীর দেওয়া সার্টিফিকেট) থানায় দেবেন।থানায় দাখিল করলে ওয়ারেন্ট অফিসার যেতেন না।

তখন আদালত বলেন,আগাম জামিন দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী সার্টিফিকেট দিয়েছেন।যখন নলেজে এল (জানলেন),তখন কী করলেন?আসামির আইনজীবীর সঙ্গে টেলিফোনেও কথা হয়েছে,এটি সত্য কি মিথ্যা?’

দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী বলেন,ওসিকে ফোন দিয়েছিলেন।তিনি মিটিংয়ে ছিলেন,বিষয়টি দেখবেন বলেছেন।

আদালত বলেন,আইনজীবীর সার্টিফিকেট অভিযুক্ত ব্যক্তি দেখিয়েছেন,এটি উপেক্ষা করেছেন।টেলিফোনে কথোপকথনের ভার্সন (সংস্করণ) কল করি,দেখি কী কথা হয়েছে?’তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী বলেন,বলছি,কথা বলেছেন।’ তাঁরা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান বলেন,সবকিছুর জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন,সেখানে অনেক ভুলই হতে পারে। তাঁদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল,ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকবেন।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘দেশের মালিক জনগণ।সবারই কাজ জনগণের যাতে কষ্ট না হয়।এভাবে আপনি (ওসি) লাইন কেটে দিলেন।’ তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী বলেন,ফোনলাইন কাটেননি।মিটিংয়ে ছিলেন।আদালত বলেন, ‘আপনারা কি নিজেরাই মালিক হয়ে গেছেন?’ তখন পুলিশের দুই কর্মকর্তার আইনজীবী বলেন,অবশ্যই নয়। আদালতের প্রতিটি আদেশ আমরা মেনে চলতে বাধ্য।’

এ সময় আদালত বলেন,মিটিং শেষ হওয়ার পরও প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেননি।আইনজীবী বলেন, সেখানে ভুল হয়েছে।আদালত বলেন, ‘এ দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে।জামিন দেওয়ার পর কোর্টে তুলবেন,এ কারণে কি দেশ স্বাধীন হয়েছে? মালিক হয়ে গেছেন?’তখন পুলিশের দুই কর্মকর্তার আইনজীবী বলেন, ‘না, মাই লর্ড।’

এর একপর্যায়ে আদালত বলেন,আগাম জামিনের বিষয়টি জানার পরও আদালতে হাজির করলেন।যাচাইও করলেন না, খবর নিলেন না।পরে আদালত রোববার পরবর্তী দিন রাখেন। সেদিন পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলেছেন আদালত।

গত ২০ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,পটুয়াখালী সদর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়া কলেজশিক্ষার্থী মো. আশ্রাফুল হাওলাদারকে আটক করে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।বৃহস্পতিবার রাতে (১৮ মে) আসামির বাড়ি থেকে আটকের পর শুক্রবার (১৯ মে) সকালে আদালতে পাঠানো হয়।এ সময় পুলিশকে হাইকোর্টের জামিন–সংক্রান্ত কপি দেখালে তা আমলে নেয়নি বলে দাবি আসামির পরিবারের।পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে,তা দিতে না পারায় পুলিশি ক্ষমতার বলে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। যদিও হাইকোর্টের জামিননামা দেখে শুক্রবার দুপুরে (১৯ মে) আসামিকে ছেড়ে দেন পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট।

আরও খবর

Sponsered content