শিক্ষা

দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় চাকরি হারালেন-পবিপ্রবি,অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান

  প্রতিনিধি ১২ জুন ২০২৪ , ৩:৫০:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

পবিপ্রবি প্রতিনিধি।।শিক্ষিক নিয়োগে অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান।সেটিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য।শাস্তি হিসেবে তিনি বছরেরও বেশি সময় বরখাস্ত হয়ে আছেন।সুবিচারের আশায় এই অধ্যাপক ঘুরছেন দ্বারে-দ্বারে।দীর্ঘদিন চাকরি না থাকায় মেহেদী হাসানের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে কষ্টের।আদালতে অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার পরও কোনো রকম সমাধানে যাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান। মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ করেন তিনি।তার বিরুদ্ধেও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক পোস্টার টাঙানোর অভিযোগ তোলা হয়।

জানা যায়,ঘটনার সূত্রপাত ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের মাধ্যমে।বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশীষ মণ্ডল অনিয়ম ও ঘুষ লেনদেনের কারণে চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।গত বছর এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে, যাতে নতুন করে পুরো ঘটনাটি আবারও সামনে আসে।

এই ধারাবাহিকতায় গেলো বছরের মে মাসে দেবাশীষ মণ্ডলের হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত উল্লেখ করে বিচার চাওয়া পোস্টারে জড়িতদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবি করা হয়।এ পোস্টার লাগানোর ঘটনায় অধ্যাপক মেহেদী হাসানকে অভিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুকিত মিয়া বাদী হয়ে প্রশাসনের নির্দেশে দুমকি থানায় গত বছরের ২০ মে একটি জিডি করেন।

অধ্যাপক মেহেদী হাসানসহ কিছু ব্যক্তি উক্ত কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে এই মর্মে উক্ত জিডি করা হয়।জিডির পর ২৮ মে অধ্যাপক মেহেদীকে হঠাৎ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে,যার প্রধান করা হয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হককে।এই কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত পরিচালনা শেষে পরবর্তী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

কিন্তু এই তদন্ত কমিটি সাত মাস পর চলতি বছরের ৭ মার্চ অভিযুক্তের প্রথম সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরাও একে ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন।এ পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তারা জানান, বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে সাত মাস পর অভিযুক্তের ইন্টারভিউ গ্রহণ করা হয়েছে।তা ছাড়া জিডির বক্তব্য এবং অভিযোগনামা পরস্পর বিরোধী।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষক সমিতি অধ্যাপক মেহেদী হাসানের বরখাস্তের আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিও দেন।

পরবর্তীতে পবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের করা জিডির তদন্ত চেয়ে দুমকি থানা পুলিশ আদালতের অনুমতি চাইলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত ২০ মে অধ্যাপক মেহেদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রতীয়মান না হওয়ায় তদন্তের অনুমতি নামঞ্জুর করেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা দায়রা জজ আদালতে রিভিউ মামলা করলে জজ আদালত ২৩ অক্টোবর আদেশে উল্লেখ করেন- অভিযোগকারীর নালীশি দরখাস্তে কী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে- তার কোনো সুনির্দিষ্ট বর্ণনা উল্লেখ নেই।তাই সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত যে আদেশ প্রদান করেছেন,তা আইনসঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত এবং রিভিশনটি নামঞ্জুরযোগ্য।

তদন্ত প্রতিবেদনের আগেই একজন বরখাস্ত করাটা মেনে নিতে পারেননি অধ্যাপক মেহেদী হাসান।

আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন,যে পোস্টার বিতরণের কথা বলা হয়েছে কোথাও সেই পোস্টারের কোনো নিদর্শন নেই।’

তিনি দাবি করেন,সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তার প্রতি এই নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।

অধ্যাপক মেহেদী জানান,বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের ঘটনার তিনি বিচার চেয়েছিলেন বিভিন্ন ফোরামে। কিন্তু সেই অপরাধের বিচার না করে উল্টো তার বিচার শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে দেখা যায়,বরখাস্তের প্রায় ১৭ দিন পর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।এ ঘটনায় দুটি আদালতেই মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তদন্তের আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।

অন্যদিকে,মেহেদী হাসানকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির শর্ত পূরণের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল,সেই নির্ধারিত সময়ের ৯ মাস আগেই কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তোলে তিনি শর্ত পূরণ করেননি।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ বলেন, ‘অধ্যাপক মেহেদী হাসানকে নিয়ে যা হচ্ছে,তা অত্যন্ত দুঃখজনক।আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বারবার কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিলেও এর কোন সুরাহা হয়নি।’

অধ্যাপক মেহেদী হাসানের বিষয়ে জানতে কথা বলা হয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ফজলুল হকের সঙ্গে।তদন্ত প্রতিবেদন ঢিলে হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

তবে অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন,বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রতিবেদন দেরিতে তৈরি করা হয়েছিল।’

কিন্তু বিচারধীন থাকার পরও অধ্যাপক মেহেদী কেনো বরখাস্ত হবেন,এমন প্রশ্ন করলে ফজলুল হক এড়িয়ে যান।এবং বিষয়টি তার আয়ত্তের বাহিরে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে পবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্তকে অসংখ্যবার ফোনে কল দেওয়া হলেও ফোন রিসিভ করেননি।তবে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের বক্তব্য জানতে এ প্রতিনিধির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content