শিক্ষা

তোমরা হাতাহাতি করবা, আর তোমাদের ইলেকশন আমাকে করে দিতে হবে-মামার বাড়ির আবদার-বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য,সালেহ হাসান নকীব

  প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৫:২৫:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী প্রতিনিধি।।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু),হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির আন্দোলনে ছাত্রদল,সাবেক সমন্বয়ক ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন,তোমরা তালা দিবা,তোমরা হাতাহাতি করবা, আর তোমাদের ইলেকশন আমাকে করে দিতে হবে।মামার বাড়ির আবদার।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব আসন্ন রাকসু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন।এতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই মন্তব্য করেন।

উপাচার্য বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো কিছু হলে সেটা রাকসু নির্বাচনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন তিনি।

প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে গত রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাকসু কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা।একপর্যায়ে কার্যালয়ের একটি চেয়ার ভাঙচুর ও একটি টেবিল উল্টে দিয়ে ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মনোনয়নপত্র তুলতে গেলে তাঁদের ঘিরে ধরেন ছাত্রদলের কর্মীরা।দুপুরের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও কয়েকজন সাবেক সমন্বয়কের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে আসেন।

পরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে সেখানে যান।এতে কয়েক দফা ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা রাকসু ভবনের ফটকের তালা ভেঙে ফেলেন।চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বেলা দুইটার দিকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়।পরে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় এক দিন বাড়ানো হয়।

উপাচার্য রাকসুর নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যদের প্রশংসা করে বলেন,‘আমি আমার নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করছি।ওই দিন (রোববার) যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এবং তাদের সম্পর্কে যে কথাবার্তা এসেছিল,যে ভাষায় স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল,যাঁরা আছেন তাঁদের প্রশংসা করি।তাঁরা প্রত্যেকে উচ্চ নৈতিকতার মানুষ এবং অসম্ভব আত্মসম্মানবোধ আছে তাঁদের। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে ওনারা দায়িত্ব ছেড়ে দেননি।কিছু শিক্ষক আছেন,এই জঘন্য কথাবার্তা ও জঘন্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পরেও জায়গা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন না।আমাদেরও সুযোগ ছিল।তোমরা তালা দিবা, তোমরা হাতাহাতি করবা,আর তোমাদের ইলেকশন আমাকে করে দিতে হবে।মামার বাড়ির আবদার।’

অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন,যদি ছাত্রসুলভ আচরণ, নিয়মকানুনের ভেতরে তোমরা থাকতে না পারো,তোমরা নিজেদের রাকসুর অযোগ্য বলে প্রমাণ করছ। তোমাদের যোগ্যতার পরিচয় তোমরা দেবে না,আমি সালেহ হাসান নকীব দেব নাকি তোমাদের?ছাত্রদের দায়িত্ব নিতে হবে।সেদিন প্রক্টরিয়াল বডি কখনো ছিল,কখনো ছিল না। তারা একমুহূর্ত চুপ করে থাকে না।সব সময় কাজ করেছে এবং সংযম দেখিয়েছে।কোনো ড্রাস্টিক ব্যবস্থা নেয়নি বলেই আজ আমরা এই জায়গায় আছি।কাজেই আমি মনে করি না,তাদের তরফ থেকে কোনো সমস্যা ছিল।যাদের সমস্যার আলাপটা তাদের নিয়ে করা উচিত।’

অসভ্যতা ছড়ালে রাকসু অসভ্যতার শিকার হবে বলে মন্তব্য করেন উপাচার্য।তিনি বলেন,তারা যদি ভবিষ্যতে এই ধরনের আলাপ করে,আচরণবিধিতে যা কিছু আছে,আমরা সেটা ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করব।এটাকে আমি অসভ্যতা ছাড়া আর কোনো কিছু মনে করি না।যদি এই অসভ্যতা জারি থাকে,তাহলে রাকসু নির্বাচন অসভ্যতার শিকার হবে। এটার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।’

নির্বাচনে সেনা মোতায়ন–সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন,আমি নিজে খুশি হতাম,যদি সম্পূর্ণ আমাদের সামর্থ্য ও আমাদের ভেতরে যে সৌন্দর্য আছে,সেটা দিয়েই রাকসু নির্বাচন হয়ে যেত।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক এখানে অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। আমি পার্সোনালি মনে করি,এ ধরনের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যদি সেনাবাহিনী পর্যন্ত চলে আসে,তাহলে এইটা আমাদের ছাত্রসমাজসহ সবার জন্য একটা কষ্টকর ব্যাপার।আমি সেনাবাহিনী নিয়ে আপাতত কোনো চিন্তা করছি না।সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে কি না,সেই পরিস্থিতি তো নির্বাচন কমিশন, শিক্ষকমণ্ডলী তৈরি করবে না। যারা করবে,তারা ওই পর্যায়ে পর্যন্ত নামবে কি না,সেই উত্তর আসলে আমি দিতে পারব না।’

আরও খবর

Sponsered content