অপরাধ-আইন-আদালত

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান

  প্রতিনিধি ২৩ এপ্রিল ২০২৪ , ৩:৪১:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান। গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাকে দু’দিনের সময় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।এসময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ পাবেন তিনি।যদি তিনি সেটা না করেন ও সনদ জালিয়াতির তথ্য-প্রমাণ মেলে তবে চেয়ারম্যান আলী আকবরের বিরুদ্ধেও আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খানকে। পরে ডিবি কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

হারুন অর রশীদ বলেন,আগারগাঁওয়ের পীরেরবাগ, পাইকপাড়ায় সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামানের বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল।সেখানে তিনি জাল সনদের কারখানা তৈরি করেছিলেন।তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে সার্টিফিকেটের হাজার হাজার কাগজ এনে জালিয়াতি করতেন!

সনদ জালিয়াতির ঘটনায় আমরা ছয় জনকে গ্রেফতার করেছি।এর মধ্যে ৫ জন সব দোষ স্বীকার করে এ ঘটনায় আর কারা জড়িত ও দায় রয়েছে সে সম্পর্কে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে তিনি সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। শামসুজ্জামান ও কারিগরির চেয়ারম্যানের স্ত্রী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্য ওএসডি হওয়া চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে আমরা আজকে (মঙ্গলবার) ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।

আমরা জানতে চেয়েছি— কীভাবে সার্টিফিকেট চুরির পর ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আপলোড করে অনিয়ম করা হয়েছে দিনের পর দিন,মাসের পর মাস?তিনি একজন চেয়ারম্যান।তিনি এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন।সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ নিয়ে যাচ্ছে,সিসিটিভি আছে,তারা দেখছেন।তবু এই জালিয়াতি হলো!

আবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেটগুলোতে স্বাক্ষর করে গেছেন মাসের পর মাস।কলেজগুলোর পরীক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করার কথা,তিনি সেটি করেননি।

হারুন বলেন,এই ঘটনাগুলো অবহেলায় চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক করেছেন—নাকি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে করেছেন সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।আপনারা জেনেও কেন ব্যবস্থা নিলেন না?তখন চেয়ারম্যান ডিবিকে বলেছেন,আমাদের লোকবল কম ছিল।নজরদারি সম্ভব হয়নি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো,সার্টিফিকেট কেনাবেচা হচ্ছে,সার্টিফিকেট বানানোর পর কারিগরি বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড হচ্ছে। সার্টিফিকেট বেচাবিক্রি হচ্ছে—এসব জানার পরও দায় এড়াতে পারেন কিনা?তখন চেয়ারম্যান বলেন,সেই দায় ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত?অবহেলা নাকি পক্ষপাত? স্ত্রীর বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।তিনি সেটি জানতেন না দাবি করেছেন।

হারুন বলেন,কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নজিরবিহীন জাল-জালিয়াতির বিষয়টি ইতিহাসে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কিত ও কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করার মতো ঘটনা।আমি মনে করি,কারিগরির চেয়ারম্যান দায় এড়াতে পারেন না।কোনও সুযোগ নেই। আমরা এখন দেখবো,তিনি আসলে সনদ বিক্রির বিষয়টি জানতেন কিনা?তার তো জানার কথা?তিনি তো আসল সার্টিফিকেট বিক্রির মাধ্যমে শিক্ষা ও জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন।একটা মানুষ পরিশ্রম করেও ভালো রেজাল্ট করতে পারছে না, সেখানে পড়াশোনা না করেই টাকা দিয়ে আসল সার্টিফিকেট কিনে নিচ্ছে।এটা কাঙ্ক্ষিত না।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন,সনদ জালিয়াতির ঘটনায় তার দায় সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।প্রয়োজনে তাকে এক-দু’দিনের সময় দেবো।তিনি যদি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন আর আমরা যদি তার সংশ্লিষ্টতা বা অনৈতিক যোগসাজশের তথ্য-প্রমাণ পাই,তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

হারুন বলেন,পরীক্ষার হলে নকল প্রতিরোধে আমরা কাজ করেছি,অপরাধী চক্রকে গ্রেফতার করেছি।অথচ দুঃখজনক হলো,কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান,তার পরিবার, সিস্টেম অ্যানালিস্ট,পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিলে সিন্ডিকেট বানিয়ে যেভাবে প্রতারণা,সনদ জাল-জালিয়াতি করা হয়েছে তা নজিরবিহীন।এটা আসলে কাম্য হতে পারে না।তাই জড়িত সবাইকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।কাউকে ছাড় দেবো না।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চেয়ারম্যান জানার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা আরেকটু তদন্ত করবো।জানার পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? ইচ্ছাকৃত,অবজ্ঞা নাকি অনিচ্ছায় জেনেও ব্যবস্থা নেননি তা জানার চেষ্টা করবো।দায় এড়ানোর তো সুযোগই নাই।তিনি তো ইতোমধ্যে ওএসডি হয়েছেন।

তার আজকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট কিনা?স্ত্রীও গ্রেফতার?পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।তাহলে চেয়ারম্যান ও পরীক্ষক কেন গ্রেফতার হবে না—জানতে চাইলে হারুন বলেন, আসলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এই সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনা লজ্জাজনক।দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।স্ত্রী যে টাকাটা নিতেন সেটা তিনি জানেন কিনা?পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ লাগবে।

হারুন বলেন,সার্টিফিকেটগুলো কারা কিনেছেন,কোথায় কোথায় বিক্রি হয়েছে,সেটা দেখা হবে।বুয়েটের একটা পরীক্ষক দল আসবেন।বিশ্লেষণ করে দেখা হবে আসলে কী পরিমাণ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল,কী পরিমাণ টাকা লেনদেন করা হয়েছে।তদন্ত আরও চলবে।কারা টাকা দিয়েছে,কারা সনদ নিয়েছে।তারা কখন কাকে কী পরিমাণ টাকা দিয়েছেন! চেয়ারম্যান যদি এ ঘটনায় আর্থিকভাবে জড়িত থাকেন,সেটা খুঁজে বের করা হবে।সব কিছু তদন্ত করা হবে। ছেড়ে দেওয়া হলেও ডিবির নজরদারিতে থাকবেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওএসডি চেয়ারম্যান আলী আকবর খান।

যারা অন্যায় কাজ করেছেন,রক্ষক যদি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেন,সরিষার মধ্যে যদি ভূত থাকে,তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান ডিবি মহানগর প্রধান।

আরও খবর

Sponsered content