রাজনীতি

ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির মামলার বিচার এখনও চলছে

  প্রতিনিধি ১ মে ২০২৩ , ৪:৩৪:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক‌।।টাকার বিনিময়ে করোনার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ আটজনকে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।রায় ঘোষণার পর থেকেই ডা. আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং সাবরিনা চৌধুরী কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।এর মধ্যে ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির মামলার বিচার এখনও চলছে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে।

কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে,ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আরিফুল হক চৌধুরী সাধারণ বন্দিদের মতোই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কারাগারে রায় বন্দি হওয়ার পর থেকে তাকে কয়েদির পোশাক পরানো হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, কারাগারে ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন আরিফুল হক। ঘুম থেকে ওঠার পর কারাগারের সামনে পায়চারি করেন। এছাড়া নিয়মিত পত্রিকা পড়েন তিনি। সকালে নাস্তা খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করেন অন্য কারাবন্দিদের সঙ্গে। এভাবেই সকাল পেরিয়ে দুপুর আর দুপুর গড়িয়ে রাত আর এভাবেই কারাগারে সময় পার করছেন আরিফুল হক চৌধুরী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন,আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।কারাবিধি অনুযায়ী তিনি কারাগারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।’

২০২২ সালের ১৯ জুলাই প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ আটজনকে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন তাদের এই সাজা দেন।

মামলার বাকি ছয় আসামি হলেন- আরিফুলের বোন জেবুন্নেছা রিমা,সাবেক কর্মচারী হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারী,জেকেজির সমন্বয়ক আবু সাঈদ চৌধুরী,জেকেজির কর্মচারী বিপুল দাস ও শফিকুল ইসলাম রোমিও।

কাশিমপুর মহিলা কারাগারের একটি সূত্র জানায়, রায় ঘোষণার পর থেকেই ডা. সাবরিনা কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।কারাগারের একটি সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য বন্দিদের মতোই জীবন যাপন করে থাকেন। তবে কয়েদির পোশাক পরানো হলেও তাকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি।সাধারণ বন্দি হিসেবে যা করার তিনিও কারাগারে তাই করেন।সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নাস্তা করা,অন্য বন্দিদের সঙ্গে আড্ডা গল্প করে সময় কাটান তিনি। এছাড়া মাঝেমধ্যে ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে থাকেন ডা. সাবরিনা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ডা. সাবরিনা কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তিনি সাধারণ ওয়ার্ডে একজন সাধারণ বন্দির মতো জীবনযাপন করেন। তাকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি।’

আরিফ-সাবরিনা দম্পতিকে ১১ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১১ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় আদালত আসামিদের ভিন্ন ভিন্ন সাজা দেন।একটি সাজা শেষ হওয়ার পর অন্যটি শুরু হবে।

তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় (প্রতারণা) তিন বছরের কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা,অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড; ৪৬৬ ধারায় (ভুয়া প্রতিবেদনকে সত্য বলে চালিয়ে দেওয়া) চার বছরের কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা,অনাদায়ে আরও চার মাসের কারাদণ্ড এবং ৪৭১ ধারায় (জালিয়াতি) চার বছরের কারাদণ্ড ও চার হাজার টাকা জরিমানা,অনাদায়ে আরও চার মাসের কারাদণ্ডের সাজা দেন আদালত।দেশে করোনা জালিয়াতির মামলায় এটিই প্রথম রায়।

২০২০ সালের ২০ আগস্ট আদালত এই মামলায় আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।এর আগে ৫ আগস্ট পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।অভিযোগপত্রে বলা হয়, করোনা জালিয়াতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুল হক।মামলা থেকে মামুনুর রশীদ নামে এক আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।ওই বছরের ২৩ জুন কামাল হোসেন নামে একজন তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। করোনা পরীক্ষায় ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারীসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়। ওই দিনই হুমায়ুন,তানজিলা,আরিফুল হক চৌধুরী ও আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হুমায়ুন ও তানজিলা তাদের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে।সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন।পুলিশ গ্রেপ্তার করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

আরও খবর

Sponsered content