প্রতিনিধি ৯ আগস্ট ২০২৫ , ৪:১০:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।কর্মকর্তারা বলছেন,মূলত ডলারের দ্রুত দরপতন ঠেকাতে বাজারের সিগন্যাল রেট নির্ধারণে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

টাকার বিপরীতে ডলারের দরপতন রোধ এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতকে চাঙা করতে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে এক মাসেরও কম সময়ে চার দফায় নিলামের মাধ্যমে ৫৩৯ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে,্গতকাল বৃহস্পতিবার ডলার কেনার জন্য নিলাম আহ্বান করে বাংলাদেশ ব্যাংক।এ নিলামে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১২১.৩৫ থেকে ১২১.৫০ টাকা দরে ৪৫ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে।এর আগে ২৩ জুলাই ১২১.৯৫ টাকা কাট-অফ রেটে ১০ মিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই হিসাবে কাট-অফ রেট আগের চেয়ে অন্তত ৪৫ বেসিস পয়েন্ট কমেছে।
এই ধারাবাহিক হস্তক্ষেপ শুরু হয় ১৩ জুলাই।সেদিন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে ১২১.৫০ টাকা রেটে ১৭১ মিলিয়ন ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এরপর ১৫ জুলাই ব্যাংকগুলোর কাছে থেকে নিলামে একই দামে আরও ৩১৩ মিলিয়ন ডলার কেনে।কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ডলারের দ্রুত দরপতন ঠেকাতে বাজারের সিগন্যাল রেট নির্ধারণে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিলাম কমিটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বলেন,ব্যাংকগুলো প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিক্রির প্রস্তাব দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার কিনেছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন,ডলারের দর খুব কমে যাওয়া বা খুব বেড়ে যাওয়া ভালো সংকেত দেয় না।আমরা বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি, যাতে করে আমাদের রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স-প্রেরকদের সহায়তা করা যায়,’ বলেন তিনি।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য করেন,ব্যাংক খাতে বর্তমানে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলারের প্রবাহ রয়েছে।
তিনি বলেন,বর্তমানে আমরা প্রতি মাসে গড়ে ২.৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এবং ৪ বিলিয়ন রপ্তানি করছি।অর্থাৎ আমাদের মাসিক প্রবাহ প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন ডলার।অন্যদিকে বর্তমানে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত আমদানি কমে যাওয়ায় আমাদের মাসিক আমদানি বিল ৪ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।
‘সবমিলিয়ে ব্যাংক খাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রবাহ হওয়াতে ডলারের রেট কমছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কেনায় রেটের পতন থামিয়ে রাখা যাচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই হস্তক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ বিশেষজ্ঞদের
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সাম্প্রতিক উদ্যোগকে জোরালো সমর্থন জানান।তিনি বলেন, ‘নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহকে উৎসাহিত করছে; একইসাথে রপ্তানির প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাও ধরে রাখছে।’
তিনি বলেন,বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নিয়মিতই মুদ্রাবাজারে এ ধরনের হস্তক্ষেপ করে।প্রায়ই বৃহত্তর অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে এ কৌশল কাজে লাগানো হয়।
ডলারের দর দ্রুত কমে যাওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে নাসের বলেন, ‘বিনিময় হার হুট করে কমে গেলে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব পড়তে পারে।যেমন, জুলাইয়ে যখন ডলারের দর অনেকটা পড়ে গিয়েছিল,তখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ লক্ষণীয়ভাবে কমে যায়—যা হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
‘তাছাড়া রপ্তানিকারকরা প্রায়ই ফরওয়ার্ড-লুকিং এক্সচেঞ্জ রেটের ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেন।প্রকৃত দর যখন অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যায়,তখন তারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন।তাই রেমিট্যান্স ও রপ্তানি উভয় খাতের জন্যই বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অপরিহার্য।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে বলেন,বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এখনও নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি ছাড়া চলার মতো যথেষ্ট পরিণত হয়নি।
তিনি মনে করেন,কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ‘বাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’।
ফাহমিদা বলেন,অনেক উন্নয়নশীল দেশই এই কৌশল অবলম্বন করে।ডলারের রেট বেশি থাকলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাত উৎসাহ পায়।অন্যদিকে ডলারের রেট বেশি কমলে আমদানি বাড়ে।ফলে আমাদের এখানে ব্যালেন্স করে এগোতে হবে, এটাই একটা ভালো মুদ্রানীতির স্ট্যান্ডার্ড,’ বলেন তিনি।

















