শিক্ষা

জাবি’র ভবন করতে গিয়ে আরও কয়েক শ গাছ কাটার আশঙ্কা

  প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২৩ , ৬:০৫:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

জাবি প্রতিনিধি।।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন আরেকটি ভবন করতে গিয়ে আরও কয়েক শ গাছ কাটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এবার গাছ কাটা পড়বে প্রাণ–বৈচিত্র্যে ভরপুর ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ১০০ মিটার দক্ষিণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কারখানাসংলগ্ন এলাকায়।সেখানে আইবিএর নতুন একটি ভবন উঠবে। ইতিমধ্যে ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়ে গেছে।

 এভাবে গাছ কেটে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।গাছ না কেটে যথাযথ পরিকল্পনা করে ভবন নির্মাণের দাবি তাঁদের

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ছালেহ আহমদ বলেন,ওই অঞ্চলে প্রায় ১৫০ প্রজাতির গাছ আছে। এর মধ্যে বন খেজুর, বনজাম, ভুঁই ডালিম, বড়চাল্লি, ভুঁই ক্যাপসুল, ভুইচাঁপা, গান্ধী গজারি, পিরালু, বিরঙ্গী, অমলকুচি, মুচকন্দ ও বনজুঁইসহ কয়েকটি দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে।তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি দল সম্প্রতি যে অঞ্চলে ভবনগুলো করা হবে, সেই এলাকায় জরিপ করেছে। জরিপে সেখানে ৫০০ বৃক্ষ কাটা পড়বে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছপালা বেশি দৃশ্যমান ওই অঞ্চলেই। সেখানকার শালগাছগুলো অন্তত না কাটা উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২২টি অবকাঠামো ও ১টি সার্কুলার রোড নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই প্রকল্পের আওতায় কিছু অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে, আরও কিছু বাকি আছে। আগের প্রকল্পেই কয়েক শ গাছ কাটা পড়েছে। ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) জন্য নতুন ভবন করা হলে পাঁচ শতাধিক গাছ কাটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় আইবিএ ভবনের জন্য আট বিঘা জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে নিজস্ব অর্থায়নে ভবন নির্মাণ করবে ইনস্টিটিউটটি। ২৩ মে আইবিএর ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এর পাশেই ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএস এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ভবন নির্মাণের জন্য ৬ বিঘা করে আরও ১২ বিঘা জমি বরাদ্দ দেওয়া আছে।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা ওই এলাকায় ছোট-বড় তিন শতাধিক শালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ শতাধিক গাছ রয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় ৫ থেকে ৭ ফুট দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে শালগাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে।

তবে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক জাহিদুল হকের দাবি, ওই অঞ্চলে ৮ বিঘা জমি দেওয়া হলেও সেখানে প্রাথমিকভাবে ১৮ কাঠা জমির ওপর ভবন করা হবে। এতে ১৫০টির মতো গাছ কাটা যেতে পারে।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলছেন, ওই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে গুইসাপ, কাঠবিড়ালি, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর প্রজাপতি আছে। গাছগুলো কাটা হলে এসব প্রাণী হুমকির মুখে পড়বে।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার খেলার মাঠ নির্মাণে গাছ কাটা চলছে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছপালা ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবি

জাবিতে গাছ কেটে হল নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

 

এর আগে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের তিনটি করে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ছয়টি হলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশে ছেলেদের জন্য তিনটি হল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেখানে হল নির্মাণ করা হলে সাত শতাধিক গাছ কাটা পড়বে এই আশঙ্কায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ আপত্তি জানায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও ২০১৯–এর ২৩ আগস্ট সকালে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলে প্রশাসন। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গিয়ে বাধা দিলে গাছ কাটা বন্ধ করে সংশ্লিষ্টরা।

এরপর বাধ্য হয়ে স্থান পরিবর্তন করে হল তিনটি করোনাকালে ২০২০ সালে শহীদ রফিক-জব্বার হলের দুই পাশে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় মেয়েদের তিনটি হল নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির ২০৭টি গাছ ছিল। প্রতিবাদ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো কেটে সেখানে হল নির্মাণ করেছে প্রশাসন।

 

গাছ কেটে ভবন নির্মাণ বন্ধ করা এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নসহ অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ২৪ মে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা এবং পরদিন বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। একই দিনে আইবিএ ভবনের জন্য নির্বিচারে গাছ কেটে নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় পরিবেশবাদী সংগঠন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক কনজারভেশন ফাউন্ডেশন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা পুনর্নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’। প্ল্যাটফর্মটির সমন্বয়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কেউ কোনো একটি উৎস থেকে একটা বাজেট এনে নিজস্ব অর্থায়নে কোনো ভবন করতে চাইবে আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের একটা জায়গা ছেড়ে দেবে, এটা হতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গাছ কাটতে নিষেধ করেছি। আমি তাদের বলেছি গাছ না কেটে যেভাবে সম্ভব সেভাবে ভবন করার জন্য।’

আরও খবর

Sponsered content