জাতীয়

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত সাইবার নিরাপত্তা বিলের কয়েকটি ধারায় সংশোধন ও কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত

  প্রতিনিধি ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৬:২১:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।সাংবাদিক নেতাদের আপত্তির কারণে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত সাইবার নিরাপত্তা বিলের কয়েকটি ধারায় সংশোধন ও কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিলটি চূড়ান্ত করে সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।

দুই-একদিনের মধ্যে সংশোধিত খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলেও জানা যায়।
বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে।

গেল মঙ্গলবার সাইবার নিরাপত্তা বিল ২০২৩ নামে এই বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এরপর বিলটি পরীক্ষা করে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বৃহস্পতিবার বিলটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনসুল হক অংশ নেন।

এ ছাড়া সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএফইউজে একাংশের মহাসচিব দীপ আজাদ, বিএফইউজে আরেকাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অনেক পরিবর্তন করেছি। ২১ ধারার বিষয়ে বিএফইউজে থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, আমরা তা নিয়েছি। ৩২ ধারার অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আমরা বাতিল করে দিয়েছি, এ আইনে এটি থাকবে না। মিথ্যা মামলার বিষয়ে যে পরামর্শ এসেছে, তা আমরা নিয়েছি। আজকের বৈঠকে এসব চূড়ান্ত হয়েছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। যে সব বিষয়ে সাংবাদিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে, সেসব আমরা কমিটিতে জানিয়েছি। তারা বলেছে, তারা এগুলো সংশোধন করবে। দুই-একদিনের মধ্যে সংশোধিত খসড়া ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ২১, ৩২ ধারাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সংশোধন এনেছে। ৪২ ধারায় সংজ্ঞায় কিছুটা সংশোধন আনা হয়েছে।

বৈঠকে ১৪ দফা দাবি জানিয়েছিল বিএফইউজে (একাংশ)। বৈঠক শেষে এই অংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, তারা কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছে। দুই-একটি জায়গায় ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে। তবে, আমরা এতে সন্তুষ্ট নই।

জাতীয় সংসদে ‍উপন্থাপিত বিলের খসড়ার ৩২ ধারায় বলা হয়েছিল, যদি কোনো ব্যক্তি অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন, তা হলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বছর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ধারাটি বাতিল করা হচ্ছে।

বিলের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা তাতে মদদ দেন, তাহলে তা হবে অপরাধ। এর সাজা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।

এই ধারায় কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই ধারায় বিএফইউজের প্রস্তাব ছিল ‘বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণা চালানো হবে অপরাধ’ এটি প্রতিস্থাপন করা। তাদের এই প্রস্তাবটি নিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

প্রস্তাবিত আইনের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন এটি বাতিলের দাবি জানিয়েছিল। তবে তা পুরোপুরি নেওয়া হয়নি। এখানে পুলিশ পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন, এমন সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মনজরুল আহসান বুলবুল বলেন, তারা কিছু বিষয়ে সংশোধনী এনেছে। ৪২ ধারায় সংজ্ঞাগত কিছু পরিবর্তন এনেছে। সাব- ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার স্থলে ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকতা করা হয়েছে। তবে আমরা এক্ষেত্রে সন্তুষ্ট নই। আমরা প্রেস কাউন্সিলের কথাই বলেছি।

এ বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে “সাইবার নিরাপত্তা বিল, ২০২৩” বিলের ওপর বিস্তারিত আলোচনা শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সংশোধিত, সংযোজিত ও পরিমার্জিত আকারে রিপোর্ট সংসদে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সদীয় কমিটির সভাপতির অনুপস্থিতিতে কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, আহমেদ ফিরোজ কবির, মো. নুরুল আমিন, মনিরা সুলতানা এবং জাকিয়া পারভীন খানম বৈঠকে অংশ নেন। সভাপতির বিশেষ আমন্ত্রণে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও বৈঠকে অংশ নেন।

আরও খবর

Sponsered content