জাতীয়

জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূলনীতির প্রতি কটাক্ষ করায় ৪৮ বিশিষ্ট নাগরিকের নিন্দা

  প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫:১৬:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয় সংগীতসহ জনসাধারণের আবেগ ও অনুভূতি নিয়ে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী।এর বিরুদ্ধে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৮ নাগরিক।

গণমাধ্যমে পাঠানো এই বিবৃতিতে এই নাগরিকরা বলেন, একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এমনকি জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখাতে পরিকল্পিত প্রচার শুরু করেছে।কয়েকদিন আগে জামাতে ইসলামীর আমির জাতিকে অতীতের সবকিছু ভুলে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন।অনুমান করা যায়,অতীত বলতে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস,সেই সময়ে তার দলের ভূমিকার কথাই বুঝিয়েছেন।তিনি যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই বোঝাতে চেয়েছেন,তা আরও পরিষ্কার হলো গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সংবিধান ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা থেকে। আমরা তার এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত,সাম্প্রদায়িক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

তারা বলেন,মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয়,যেখানে যা খুশি তাই বলা।যে উদ্দ্যেশ্যে তিনি ৩ সেপ্টেম্বরের সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন,তার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূলনীতির প্রতি কটাক্ষ করে তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত করেছেন।

সবার মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে তরুণ,ছাত্র,কৃষক-শ্রমিক-সেনা-পুলিশ সদস্যসহ সর্বস্তরের বিভিন্ন ধর্ম-জাতি-বর্ণ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ জীবনপণ লড়াইয়ে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের আমাদের এই প্রিয় দেশটিকে স্বাধীন করেছিলেন। এর জন্য বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর জামাতসহ বিভিন্ন দলীয় ঘাতক বাহিনীর অবর্ণনীয় বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষ নারী-পুরুষ, ছাত্র-শিক্ষক,বুদ্ধিজীবী-লেখক,শিল্পী,সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের অগণিত ব্যক্তি ও পরিবারকে।সেই ইতিহাস এই দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষ মনে রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও মনে রাখবে। এই ইতিহাস ভুলে যাবার কথা বলার অধিকার কিংবা দুঃসাহস কারোরই থাকার কথা নয়।

আর জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েই মুক্তিযোদ্ধারা জীবনপণ লড়াইয়ের শপথ নিয়েছেন,যুদ্ধ করেছেন।তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন,অনেকে শারীরিক পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন।অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যে যুদ্ধ করেছেন, জাতীয় সংগীত ছিল তাদের প্রেরণার সার্বক্ষণিক উৎস।তাই জাতীয় সংগীতটি কার্যত যুদ্ধের মধ্য দিয়েই লক্ষ শহীদের রক্তে নতুনভাবে আমাদের প্রাণের সংগীত হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।একে নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা।একে কোনোভাবেই এই দেশের মানুষ দলমত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়,সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা গুমের শিকার হয়ে রাষ্ট্রীয় সামরিক গোয়েন্দাবাহিনীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গোপন আটককেন্দ্র ‘আয়নাঘর’-এ দীর্ঘ আট বছরে বন্দি ছিলেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তিসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের দাবিতে আমরা বরাবরই সোচ্চার ছিলাম,এখনো আছি।আমরা চাই সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তাসহ যারা ‘আয়নাঘর’-এ আটক ছিলেন,নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা সবাই ন্যায়বিচার যেন পান। আমরা আশা করব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের ন্যায়বিচারের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করবেন। কিন্তু তার সঙ্গে জাতীয় সংগীত কিংবা মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক।

তাই যারা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কিংবা জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চেষ্টা করছেন কিংবা অসত্য তথ্য প্রচার করছেন তাদের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।অন্যথায় এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরও বৃহৎ কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।

শত শত শিক্ষার্থী,শিশু,কিশোরী-কিশোর ও জনতার প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্রের যে বিজয় অর্জিত হলো,তাকে সংকীর্ণ দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো সাম্প্রদায়িক অথবা অন্য গোষ্ঠী যাতে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে সদা সতর্ক,সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে,বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশি কবীর,অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী,সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।আরও সই করেন পারভীন হাসান,উপাচার্য,সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি; অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী,সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অধ্যাপক ড. মো: হারুন-অর-রশিদ,সাধারণ সম্পাদক,মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী পরিষদ; অ্যাডভোকেট তবারক হোসেন,সিনিয়র আইনজীবী; ড. শহিদুল আলম,আলোকচিত্রী; শামসুল হুদা,নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি;রেহনুমা আহমেদ,লেখক; ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রোবায়েত ফেরদৌস,অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী,অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ঈশানী চক্রবর্তী, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; জোবায়দা নাসরিন,অধ্যাপক,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক মাহা মির্জা,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সামিনা লুৎফা,অধ্যাপক,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. সাদাফ নুর,গবেষক, ল্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়; ড. নূর মোহম্মদ তালুকদার,সভাপতি,বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় তালুকদার; মাযহারুল ইসলাম বাবলা,নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত; এ এস এম কামালউদ্দিন,সভাপতি,বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র; মফিদুর রহমান লাল্টু,সাধারণ সম্পাদক,বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র; অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; সালেহ আহমেদ,সাধারণ সম্পাদক,সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন; মনিন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ;রেজাউল করিম চৌধুরী,নির্বাহী পরিচালক,কোস্ট ট্রাস্ট; ফারহা তানজীম তিতিল,সহযোগী অধ্যাপক,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়; তাসনীম সিরাজ মাহবুব,সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; জাকির হোসেন,প্রধান নির্বাহী,নাগরিক উদ্যোগ; অ্যাড. সাইদুর রহমান,প্রধান নির্বাহী,এমএসএফ; ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ব্যারিস্টার শাহদাত আলম,আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. নাজমুল হুদা,আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. এম এম খালেকুজ্জামান,আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. মো: আজিজুল্লাহ ইমন, আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. প্রিন্স আল মাসুদ,আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. উম্মে কুলসুম,আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; অ্যাড. শায়লা শারমীন,আইনজীবী,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট;তাপসী রাবেয়া, মানবাধিকার কর্মী; অ্যাড. আজমীর হোসেন,আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; দীপায়ন খীসা,মানবাধিকার কর্মী; বাপ্পী মাশেকুর রহমান,মানবাধিকার কর্মী ও সংগীত শিল্পী; হানা শামস আহমেদ,আদিবাসী অধিকার কর্মী; মুক্তাশ্রী চাকমা,কোর গ্রুপ, সাঙ্গাত; শামসুল হুদা,নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি।

আরও খবর

Sponsered content