অপরাধ-আইন-আদালত

জঙ্গি আস্তানা থেকে চার তরুণ পালিয়ে র‌্যাবের কাছে গিয়ে সহায়তা চেয়েছেন-র্যাব

  প্রতিনিধি ৯ আগস্ট ২০২৩ , ৫:২০:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।পরিচিতজনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে হয়ে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেওয়া চার তরুণ পাহাড়ের আস্তানা থেকে পালিয়ে র‌্যাবের কাছে গিয়ে সহায়তা চেয়েছেন বলে জানিয়েছে এই বাহিনী।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান,মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়নে হাজির হয়ে ওই চারজন নিজেদের জামায়াতুল আনসারের পালিয়ে আসা সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন।বিভিন্ন জেলা থেকে নিখোঁজ তরুণদের তালিকায় এই চারজনের নাম পাওয়ায় তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়।

বুধবার ঢাকায় র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে মঈন বলেন,অন্যের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে তারা ওই সংগঠনে যোগ দিলেও পাহাড়ে গিয়ে তাদের ‘ভুল ভাঙে’।এরপর তারা সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলেন।কিন্তু মাঝে ধরা পড়ে নির্যাতনেরও শিকার হন।

“নিখোঁজ ৫৫ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ছয়জন স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছেন,আর ৪২ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,প্রাথমিকভাবে জানা যায়,তারা বিভিন্ন সময়ে বন্ধুবান্ধব,স্বজন বা পরিচিতজনের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন।পরে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা তাদের ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তথাকথিত হিজরতের কথা বলে বা চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ে নিয়ে যান।

“পাহাড়ে যাওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহযোগিতায় সংগঠনটির সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম ও চিন্তাভাবনা দেখে তাদের ভুল ভাঙে।এই চারজনসহ বেশ কিছু সদস্য সমতলে ফিরতে চাইলেও প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত সদস্যরা তাদের ফিরতে দেয়নি।”

ফিরে আসতে চাওয়ায় তাদের বন্দি রেখে নির্যাতন করা হত জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন,পাহাড়ে জোর করে তাদের জঙ্গি কার্যক্রমের রসদ পরিবহন,রান্নার কাজ, প্রশিক্ষণের গর্ত তৈরি ও ঘর বানানোসহ বিভিন্ন কাজ করানো হত।”

পালিয়ে আসা চারজন ২০২২ সালের জুনেও একবার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান র‌্যাবের মুখপাত্র।

“সেসময় সিপ্পি পাহাড় থেকে পালিয়ে রনিপাড়া এসে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তা খোঁজার সময় ‘কেএনএফ’ সদস্যদের হাতে তারা ধরা পড়ে।এরপর তাদের ধরে বন্দি করে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।ফের পালানোর চেষ্টা করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।”

র‌্যাব কমান্ডার মঈন বলেন,এ বছরের মার্চ মাসে পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা পালানোর পথ খুঁজতে থাকেন।একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে তারা অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পালিয়ে যান।মার্চ মাসের প্রথম দিকে তারা সমতলে চলে আসেন। ষএরপর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন।

“তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবারের পক্ষ থেকে র‌্যাবের কাছে যেতে উৎসাহ দেওয়া হয়।”

মঈন বলেন,ফিরে আসা ওই চারজনের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর আছে,যে নারায়ণগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছিল।২০২১ সালে তার শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই সংগঠনে যোগ দেয়। পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১২ জনের দলের সঙ্গে তৃতীয় ব্যাচে পাহাড়ে যায়।

তাদের মধ্যে ২৬ বছর বয়সী এক তরুণ আছেন,যিনি মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। ২০২১ সালে জামায়াতুল আনসারের শুরা সদস্য মায়মুনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে ওই সংগঠনে যোগ দেন।

২৬ বছর বয়সী এক তরুণের মধ্যেমে পরে সংগঠনে যোগ দেন ২৪ বছর বয়সী এক তরুণ,যিনি সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে পড়ছিলেন।২০২১ সালে তিনি জামায়াতুল আনসারে যোগ দেন। ওই বছরের নভেম্বরে বেশ করয়েকজনের সঙ্গে পাহাড়ে যান।

ফিরে আসা চতুর্থজন ২১ বছর বয়সী এক তরুণ,যিনি আগে মাদারীপুরে ঘড়ি মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন।২০২১ সালে সিরাজ নামে একজনের মাধ্যমে ওই সংগঠনে জড়ান।ওই বছরের নভেম্বরে পাহাড়ে চলে যান।

এর আগে নয়জন নারী জঙ্গিবাদ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে বলে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,ফিরে আসা চার তরুণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। সে কারণে তাদের আদালতে তাদের পাঠানো হবে।এরপর র‌্যাব প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাদের আইনি সহায়তা করবে।

আরও খবর

Sponsered content