সারাদেশ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না

  প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২৩ , ২:৩২:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীকে মারধরের পর একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে সংস্থাটি।মারধরের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও তাঁদের কালোতালিকাভুক্ত করা এবং কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তায় করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

যাঁর ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা সেই প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীকে জানানো হয়নি।আর তিনিও সিটি করপোরেশনে আর না আসার ব্যাপারে অনড়।হামলার ৪০ দিন পার হলেও এর মধ্যে এক দিনের জন্যেও সিটি করপোরেশন আসেননি তিনি।তবে ঢাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে বসে কাজ করছেন তিনি।

গত ২৯ জানুয়ারি নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীর কক্ষে প্রবেশ করে তাঁকে মারধর করেন এক দল ঠিকাদার।উন্নয়নকাজ ভাগাভাগি করে দিতে ঠিকাদারেরা তদবির করলেও তাতে সায় দেননি তিনি। নিয়ম মেনে উন্নয়নকাজের ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।এতে কাজ পাচ্ছে না জেনে আওয়ামী লীগ–বিএনপি সমর্থিত এক দল ঠিকাদার জোট বেঁধে তাঁকে মারধর করেন।

এতে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।হামলার ঘটনা ঘটিয়ে ঠিকাদারেরা বিনা বাধায় প্রধান কার্যালয় ছেড়ে যান।সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তাকর্মী সহ কেউ তাঁদের বাধা দেননি,আটকও করেননি।

প্রকল্প পরিচালককে এভাবে মারধরের ঘটনায় সিটি করপোরেশেনর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।গত ১২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে,তার বিস্তারিত জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রকল্প পরিচালককে মারধরের পর যে ব্যবস্থা নিল চসিক
প্রকল্প পরিচালককে মারধরের পর কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,তা গত ২০ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানান সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।

এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়,প্রকল্প পরিচালককে মারধরের ঘটনায় ওই দিন রাতে নগরের খুলশী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।আর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আদলে নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।এ জন্য সিটি করপোরেশেনর আইটি কর্মকর্তা ও একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বন্দর কর্তৃপক্ষের সিস্টেম অ্যানালিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রক্রিয়া ঠিক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর বাইরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১০ ঠিকাদারের ১২টি প্রতিষ্ঠানকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে চসিক।সিটি করপোরেশনে প্রবেশ করতে হলে মূল ফটকে নিবন্ধনখাতায় নাম লিপিবদ্ধ করতে হয়।সেখানে কার কাছে বা কোন দপ্তরে যেতে চান,তা উল্লেখ করতে হয়। তবে তা চলছে ঢিলেঢালাভাবে।আগে যে যাঁর ইচ্ছেমতো প্রবেশ করতে পারতেন।কোনো নিবন্ধনপ্রক্রিয়া ছিল না।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন,বন্দর কার্যালয়ে পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেন না।আর যদি কারও পরিচয়পত্র না থাকে,তাহলে নির্দিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মীর অনুমতি সাপেক্ষে তাঁকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।এখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেও এই ধরনের ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া চলছে।

এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইটি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হাসান বলেন,চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আদলে নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু করতে ইতিমধ্যে ওই সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করেছেন।এই ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা চালুর জন্য যেসব যন্ত্রপাতি লাগবে,তারও দরদামের একটি তালিকা করেছেন। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

না আসার বিষয়ে অনড় প্রকল্প পরিচালক:-মো. গোলাম ইয়াজদানী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌলশী।তাঁকে গত বছরের আগস্টে প্রেষণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব দেয় মন্ত্রণালয়।তবে হামলার দিন রাতেই ঢাকায় চলে যান তিনি। এর পর থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) অফিস করছেন।

সিটি করপোরেশনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো যথাযথ কি না, জানতে চাইলে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে মো. গোলাম ইয়াজদানী বলেন,এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,তাঁকে কেউ অবহিত করেননি।তাই তিনি জানেন না, আসলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সিটি করপোরেশনে আসবেন কি না,জানতে চাইলে তিনি বলেন,এখনো বলতে পারছি না।এই ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’সিটি করপোরেশনে না এলে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের বিষয়ে তিনি বলেন,ওরাই দেখবে।আমার তো আর দেখার দরকার নেই।’

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবু ছালেহ বলেন, প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানী চট্টগ্রামে না এলেও ঢাকায় বসে কাজ করছেন।মেয়রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে।

আরও খবর

Sponsered content