জাতীয়

গোয়েন্দা নজরদারিতে সাবেক সরকারের ডিসি-এসপি-পদস্থরা

  প্রতিনিধি ৪ মার্চ ২০২৫ , ৪:৫৪:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

নিজস্ব প্রতিবেদক।।গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের তিনটি আমলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বর্তমানে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থাকা কর্মকর্তারাও নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না,কারণ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আতঙ্ক তাদের তাড়া করছে।

বিশেষ করে,ওই সময়ে ডিসি (জেলা প্রশাসক),এসপি (পুলিশ সুপার) এবং সচিব পদে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা এখন গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল আসছে।যার ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তারা গত ১৭ বছর পদোন্নতি না পেয়েও বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন।সব মিলিয়ে প্রশাসনে পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে নতুন করে অস্থিরতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।

প্রশাসনে আতঙ্ক ও বদলির হিড়িক
বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সাবেক ডিসি,এসপি এবং সচিবদের ওএসডি করা ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কারণে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষত,যারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,স্থানীয় সরকার বিভাগ, মন্ত্রীদের পিএস (ব্যক্তিগত সচিব) এবং বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন,তাদের মধ্যে উদ্বেগ তুলনামূলক বেড়েছে।

যেসব কর্মকর্তারা নজরদারিতে
গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখার ক্ষেত্রে বিগত আওয়ামী লীগের সময় অনুষ্ঠিত ২০১৪,২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিরা রয়েছেন।তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এরই মধ্যে- ৬৫ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানো হয়েছে অথবা ওএসডি করা হয়েছে।তথ্যমতে,চাকরির ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া ২২ জন সাবেক ডিসিকে (বর্তমানে সচিব, অতিরিক্ত সচিব,যুগ্ম সচিব,উপসচিব) বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।আর ৩৩ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে।এর আগে আরো ১২ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছিল।কয়েকজন সচিবকেও ওএসডি ও অবসরে পাঠানো হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সহায়তাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত

সরকারি সূত্র জানায়,আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন-তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।এমনকি,অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারাও নজরদারির বাইরে থাকছেন না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,সরকারের উপদেষ্টা কমিটি আরো অনেক কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করেছে।যারা গত ১৭ বছরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে কাজ করেছেন তারা এই তালিকাভুক্ত বলে জানা যায়।এমনকি গত তিন মেয়াদে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের পিএস হিসেবে কাজ করেছেন- এমন অনেককে এরই মধ্যে ওএসডি করা হয়েছে।শিগগিরই তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

সরকারের এমন পদক্ষেপের পরও এখনো প্রশাসনে কাঙ্ক্ষিত গতিশীলতা ফেরেনি।সমন্বয়হীনতার কারণে সচিব,পিএসসির সদস্য,ডিসি পদে নিয়োগ দিয়েও তা বাতিল করতে হচ্ছে। বদলি ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া ঠিকমতো পরিচালনা করতে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা
বিএনপি আমলে বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ (ব্যাকডেটেড) পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়েছে।এর মধ্যে সচিব পদে ১১৯ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন,গ্রেড-১ পদে ৪১ জন,যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে ৪ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।

ডিসি পদে বড় পরিবর্তন আসছে
সূত্রে জানা গেছে,জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও পরিবর্তন আসতে চলেছে।বিসিএস ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হবে।বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে নতুনদের ফিটলিস্ট তৈরি করা হচ্ছে।

প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন
প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব পদ খালি- তা প্রশাসনের নিয়মিত কর্মকর্তাদের দিয়ে তা পূরণ করা হবে।আগের সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ দফতরে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি ও গুরুত্বহীন দফতরে পাঠানো হবে।

সরকার যা বলছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন,২০২৪ সালের নির্বাচনে যেসব ডিসি রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন- তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের সাথে জড়িতদের বিষয়ে আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে পুরো তালিকা দিয়েছি।ওখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমাদের যে ব্যবস্থা-যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম,তারা ওএসডি হবেন। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি,তারা বাধ্যতামূলক অবসরে যাবেন।

তিনি আরো বলেন,২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিদের মধ্য থেকে যেসব ডিসি ওএসডি হয়েছেন এবং বাধ্যতামূলক অবসরে গিয়েছেন তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে- তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে না।

তিনি আরো বলেন,অবসরে যাওয়ার পরেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে ছাড় নেই।দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) মামলা দেয়া হবে।’

সচিব জানান,সরকার কারো বিরুদ্ধেই অবিচার এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ করবে না।আওয়ামী লীগের সময়ে নির্বাচনে দায়িত্বে যেসকল কর্মকর্তা ছিলেন- তারা দোষী প্রমাণিত হলে উপদেষ্টা পরিষদের কমিটিতে যাওয়ার পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে সরকার।অপরাধ অনুযায়ী ওএসডি এবং বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হবে।তবে সরকার এ ব্যাপারে কারো সাথে অবিচার করবে না।

ধারণা করা হচ্ছে,প্রশাসনে এমন অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে বদলির পরবর্তী ধাপে আরো বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

সূত্র : ইউএনবি

0Shares

আরও খবর

Sponsered content

0 Shares