প্রতিনিধি ১৪ নভেম্বর ২০২২ , ১:০৭:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনার অংশ হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক সাতটি দলের সঙ্গে আলোচনা করবে বিএনপি। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ নিয়ে বৈঠক হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানিয়েছেন, মঞ্চের উদ্যোগেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করবেন তারা। এর আগে বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরামের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তারা।
মঞ্চের নেতারা জানান, মূলত বর্তমান সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, ক্ষমতা এবং নির্বাচনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। এই ইস্যুগুলোতে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইবেন তারা।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধি দলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ অনেকে থাকতে পারেন।
দুটো বিষয়ে বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান চাইবে গণতন্ত্র মঞ্চ
অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার (১৩ নভেম্বর) গণতন্ত্র মঞ্চের অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির অনুষ্ঠেয় মতবিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কী কী বিষয়ে আলোচনা করা হবে, কী থাকতে পারে, কয়জন নেতা অংশগ্রহণ করবেন, এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সাতদলীয় এই জোটের নেতারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি বাংলা বলেন, ‘বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। প্রত্যেকটি দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক প্রতিনিধি দলে থাকবেন। সব মিলিয়ে বৈঠকে ১৪ জন অংশগ্রহণ করবেন। আমরা বিএনপির কাছে তালিকা পৌঁছে দেবো।’
কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, এমন প্রশ্নে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি উল্লেখ করেন, মূলত বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেই সরকারের পরিস্থিতি পর্যালোচনা, শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের রূপরেখা, যুগপৎ আন্দোলনসহ দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন, আলোচনা একদিনে শেষ নাও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, ‘সব দল থেকে দুজন করে যাবেন। এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি কে কে যাবেন।’
আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে নুরুল হক বলেন, ‘আলোচনার মূল জায়গায় কী থাকবে—তা আমরা গতকাল (রবিবার) অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্পষ্ট করেছি। বিএনপি যে লাইনে দেশের বর্তমান অবস্থাকে দেখে, আমরা সেভাবে দেখি না। বিএনপি মনে করে শেখ হাসিনার পতনেই সমাধান। আমরা মনে করি, কেবল শেখ হাসিনার পতনেই নয়, একইসঙ্গে বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলে প্রকৃত সমাধান আসবে।’
ব্যাখ্যা করে নুরুল হক বলেন, ‘ব্যবস্থা বলতে গত ১৩ বছরে সরকার দেশের বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ব্যবস্থা নষ্ট করে ফেলেছে। ফলে তিন মাস পর ক্ষমতার পরিবর্তন এলে, যারা আসবে তারাও নিপীড়কই থাকবে। সে কারণে আমরা যদি প্রশাসন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার না আনি, তাহলে জনগণের কোনও লাভ নেই।’
‘এ কারণে আমরা আমরা চাই—বর্তমান সরকারের পদত্যাগের পর যে সরকার আসবে, সেটা অন্তর্বর্তী হোক বা নির্দলীয় যে নামেই হোক, তাদের পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতায়ন করা। তাদের পরিবর্তনের এখতিয়ার দিতে হবে। বিএনপি আগামী নির্বাচনে বড় অংশীজন। আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎসহ মৌলিক ইস্যুগুলোতে জোর দিতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী করবে, সেটা সেই সরকারকে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিতে হবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য দিতে হবে। বিএনপি যেন বিষয়টা উপলব্ধি করে। সংকট বিএনপি বা আওয়ামী লীগের না, রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংকট। দরকার সমঝোতা।’
বিএনপির চলমান রাজনৈতিক মতবিনিময় প্রথম শুরু হয় নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে। চলতি বছরের ২৪ মে দলটির সঙ্গে আলোচনার পর ২৭ মে লেবার পার্টি, ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলন, ১ জুন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ২ জুন কল্যাণ পার্টি, ৭ জুন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ৮ জুন জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ৯ জুন জাগপা, ১২ জুন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ভাসানী, ১৬ জুন অলি আহমদের এলডিপি, ১৯ জুন জমিয়ত (একাংশ), ২১ জুলাই রাতে ২০ দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দল, ২১ জুলাই ডেমোক্রেটিক দল, ২৪ জুলাই জেএসডি, ২৬ জুলাই ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), ২৬ জুলাই ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ২৬ জুলাই ইসলামিক পার্টি, ৩১ জুলাই বাংলাদেশ পিপলস লীগ, ৩১ জুলাই জাতীয় দল, বাংলাদেশ ন্যাপ (শাওন সাদেকীর সঙ্গে দায়িত্বশীলদের টেলিফোন), ২ আগস্ট গণফোরাম মন্টু ও ৩ আগস্ট গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে কথা বলে বিএনপি।
বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুর কবির খান জানান, দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছিল ২ অক্টোবর। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে গুলশানে চেয়ারপারসনের অফিসে মতবিনিময় করে বিএনপি। এরপর ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ৩ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রমের মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসায়, ৬ অক্টোবর সকাল ১০টায় লেবার পার্টি ও সকাল ১১টায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, ১০ অক্টোবর সকালে জাগপা (একাংশ) ও বিকালে মুসলিম লীগ, ১৮ অক্টোবর সকাল ১১টায় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এনডিপি ও দুপুর ১২টায় জমিয়ত, ২৩ অক্টোবর ন্যাপ ভাসানী ও পিপলস লীগ, ৯ নভেম্বর মাইনরিটি জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ (একাংশ) ও বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (একাংশ) সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি নেতারা।