রাজনীতি

ক্ষমতায় না আসতেই বরিশাল দখলে নেমেছেন বিএনপি নেতা জিয়া সিকদার

  প্রতিনিধি ৫ মার্চ ২০২৫ , ৪:৫৬:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

রবিউল ইসলাম রবি॥দেশ ও দলের অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা না করে নিজ স্বার্থের অনুকূলে চলমান অবস্থার প্রেক্ষাপট বুঝে পরিকল্পিতভাবে রাজনীতি করে আসছেন বরিশাল মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার।

আ.লীগ শাসনামলে শ্বশুরবাড়ির ওয়ারিশ সূত্রে হয়ে উঠে ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ আর বিএনপির সময় হয় ‘জিয়া সৈনিক’। দেশ পরিচালনায় রাজনৈতিক দল রদবদল হলেও সকল আমলেই জিয়ার দখল বাণিজ্যে সহ স্বৈরাচারিতা চলমান থাকে।বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দলের শাসনামলে নগরীর ২৪ ও ২৫ নং ওয়ার্ডে জিয়া ও তার শ্বশুররা জমি,বাজার,স্টল ও বাসস্ট্যান্ড দখলে প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন।

গত ৫ আগস্টের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ছবি দিয়ে ব্যানার টানিয়ে ‘বিএনপি পার্টি অফিস’ সাজিয়ে পার্শ্ববর্তী বাসস্ট্যান্ড ও বাজার থেকে চাঁদা উত্তোলন শুরু করে।এমনকি রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে দখল নিতে প্রকাশ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে ওই জিয়া। তার প্রকাশ্যে এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বচ্ছতা ও নীতি-নৈতিকতার বক্তব্য নিয়ে।

বরিশাল মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন,সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ করলে অভিযোগের বিষয়টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কেন্দীয় কমিটির কাছে প্রেরণ করবো।তারপর কেন্দ্র থেকেই ব্যবস্থা নিবে।একই মতামত ব্যক্ত করলেন মহানগর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরীন

সূত্র জানায়,আ.লীগ সরকার পতনের পর গত ৩০ আগস্ট রাতে বরিশাল মহানগর বিএনপি সদস্য সচিবের নেতৃত্বে ‘জিয়ার সৈনিক এক হয়ে লড়াই কর’ প্রকাশ্যে এ স্লোগান দিয়ে নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে চালক-শ্রমিকসহ বিএনপি দলের সমর্থকদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে কুপিয়ে রক্ত নিয়ে হলি খেলায় মেতে উঠে।হামলায় আহত ১২ জনের মধ্যে ৭ জন বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এরপর জিয়ার নেতৃত্বে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বরিশাল জেলা পরিষদের মার্কেট অবৈধভাবে দখল নিয়ে নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর ছবি দিয়ে ব্যানার টানিয়ে ‘বিএনপি পার্টি অফিস’ সাজিয়ে চাঁদা উত্তোলন শুরু করে নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান ও ২৪ নং ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক সাইদুর রহমান চুন্নু।বিষয়টি সম্পর্কে নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক নওশাদ আহমেদ নান্টু কিছুই জানেন না।তিনি বলেন,ওয়ার্ডে নতুন করে ‘বিএনপি পার্টি অফিস’ হলে অবশ্যই মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানবেন। খোঁজ নিয়ে শুনেছি মহানগর থেকে কোনো অনুমতি দেয়নি।

বরিশাল বহুমুখী সিটি মার্কেট (কাঁচা বাজার) এর ১৭ ও ১৮ নং স্টলের ভাড়াটিয়া আবু মিয়া বলেন,স্টল দুইটির মালিক হলেন তারেক বিন ইসলাম।তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বরিশাল মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার দখলে নিয়ে গেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনে গেলে কর্তারা বলেন- মেয়র বসার পর সব ঠিক হয়ে যাবে।ধৈর্য ধরেন।এদিকে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের একটি আবাসিক হোটেল,চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার দখলে নেয় জিয়া সমর্থিত ওয়ার্ড বিএনপির কয়েক নেতাকর্মী।

একাধিক নেতাকর্মী বলেন,বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের সকল নেতা কর্মীদের প্রতি যখন দেশের মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েন সেই মুহূর্তে জিয়া ওই সব সহ নানা প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম চলমান রেখেছিলেন।এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া কিছু শিক্ষার্থীকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড দখলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাড়া অর্ধেক করার ঘোষণা দেন।

নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ড ধান গবেষণা সড়কের বাসিন্দা মো. মিলন হাওলাদার (৪২) বলেন,তারা বাবা রহম আলী হাওলাদার মৃত্যুর পর তাদের ১৫০.৭৫ শতাংশ সম্পত্তি জাল কাগজপত্র তৈরি করে অবৈধভাবে জোর পূর্বক ক্ষমতার জোড়ে ভোগ দখল করে আসছেন মো. রাইভিউল কবির স্বপন।এই স্বপন হলেন-বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মো. জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়ার আপন চাচা শ্বশুর। তাদের ফ্যামিলি দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দলের সাথে বিভক্ত।আ.লীগ শাসনামলে জিয়াউদ্দিন সিকদার তার আপন চাচা শ্বশুরদের ক্ষমতায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে।আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জিয়া হয়ে উঠেন বরিশাল বিএনপির সেনাপতি।শ্বশুরদের সাথে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় মো. জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বাদী হয়ে সম্প্রতি আমাকে বরিশালে শেখ হাসিনা সহ ৫৬০ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে আমাকে ৩৬৫ নং আসামি করেছে।অথচ জিয়া ভাইয়ের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক এবং বিষয়গুলো তিনি জানেন।তাছাড়া নানাভাবে একের পর এক মামলা মোকাবেলা করে আসছি। মামলা চালাতে চালাতে জীবন শেষ।

আ.লীগ শাসনামলে গত ৮-২-২০২১ইং তারিখে “বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি-র মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ’র স্বাক্ষরিত” রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড কমিটিতে দেখা যায়- সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মো. কাওছার হোসেন শিপন,সহ-সভাপতি মো. নাসির মৃধা ও এইচ.এম.এ. মান্নান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আল-আমিন হোসেন সহ ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি।নামধারী এই চারজনই হলেন- বরিশাল মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের আপন চাচাতো শ্বশুর।আর আপন শ্বশুর ফিরোজ আহম্মেদ কে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে ২০২৩ সালের ৩ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রেজভী স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে লিখিতভাবে ‘আজীবন বহিষ্কার’ এর ঘোষণা দিয়েছেন।তারপর থেকে বরিশালে আ.লীগ রাজনীতিতে চাঙ্গা হয়ে উঠেন ফিরোজ আহম্মেদ।এমনকি বিএনপি বিরোধী আ.লীগের আয়োজিত সকল প্রোগ্রামে অংশ নেন।

আরও খবর

Sponsered content