অপরাধ-আইন-আদালত

এমপি আজীম হত্যার পরিকল্পনা বুঝতে পেরে চলে যেতে চেয়েছিলেন

  প্রতিনিধি ২৭ জুন ২০২৪ , ৪:২০:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশে অপহরণের মামলায় চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতাউল্লাহ রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়,হত্যার পরিকল্পনা বুঝতে পেরে চলে যেতে চেয়েছিলেন এমপি আজীম।এসময় আসামি ফয়সাল ভুক্তভোগীকে পেছন থেকে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মেশানো রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে।এবং মোস্তাফিজ,শিমুল ভুঁইয়াদের সহযোগিতায় অজ্ঞান করার পর ভুক্তভোগীকে হত্যা করা হয়।

দুই আসামি হলেন- ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকির।এদিন দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।

রিমান্ড আবেদনের পক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল শুনানি করেন।তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।শুনানি শেষে বিচারক তাদের ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তাদের চট্টগ্রামের ভোজপুর থানার মা পাতাল কালি মন্দির থেকে তাদের আটকের কথা জানায় ডিবি।এরপর তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়,এর আগে গ্রেপ্তারকৃত এবং আদালতে সোপর্দকৃত আসামি শিমুল ভুঁইয়া আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।ওই জবানবন্দি পর্যালোচনা ও তদন্তকালে জানা যায় যে, ভুক্তভোগী আনোয়ারুল আজিম আনারকে অপহরণ পূর্বক হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান ভাড়াটে খুনি শিমুল ভূঁইয়ার কিলিং মিশনের সহযোগী হিসেবে আসামি ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের (ভাড়াটে খুনি) সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ উঠে আসে এবং ফয়সাল,মোস্তাফিজ ও জিহাদকে নিয়েই শিমুল ভুঁইয়া কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করে।

তদন্তকালে আরও জানা যায়,ভাড়াটে খুনি শিমুল ভুঁইয়া ও আক্তারুজ্জামান শাহীন পরিকল্পনা মোতাবেক ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে বড় অংকের অর্থ দেবে বলে গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় নিয়ে হোটেলে রাখে।তারপর হোটেল থেকে মোস্তাফিজ ১০ মে এবং ফয়সাল ১২ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনের বাসায় উঠে।

এদিকে ভুক্তভোগী এমপি আনার ১২ মে কলকাতায় যান এবং ১৩ মে অন্য আসামিদের প্রলোভনে আসামি ফয়সাল ও শিমুল ভুঁইয়ার সঙ্গে সঞ্জিবা গার্ডেনের বাসায় যান।পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘাতক দলের প্রধান শিমুল ভুঁইয়ার নির্দেশে অন্য সদস্যরা ফয়সাল,মোস্তাফিজ,জিহাদ এমপি আনারকে হত্যার কার্যক্রম শুরু করে।বিষয়টি বুঝতে পেরে চলে যেতে চেয়েছিলেন এমপি আজীম।এসময় আসামি ফয়সাল ভুক্তভোগীকে পেছন থেকে চেতনানাশক ক্লোরোফর্ম মেশানো রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে।এবং মোস্তাফিজ,শিমুল ভুঁইয়াদের সহযোগিতায় অজ্ঞান করার পর ভুক্তভোগীকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ভিকটিমের লাশ গুম করার উদ্দেশে শিমুল ভুঁইয়ার নেতৃত্বে ও নির্দেশে মরদেহ কেটে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ভিকটিমের লাশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়।

ভিকটিমকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশ থেকে কলকাতার নিউটাউনের বাসায় নেওয়া ও হত্যা করে লাশ গুম করা পর্যন্ত ভাড়াটে খুনি শিমুল ভুঁইয়া,ফয়সাল,মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ সকলে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে।এমপি আনারকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশিত হলে আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজ নিজেদের নাম ধর্মীয় পরিচয় ও চেহারার আকৃতি পরিবর্তন করে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে।তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় আসামি ফয়সাল আলী সাহাজী ওরফে শার্জী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরদেরকে খুঁজে বের করা ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হয়।

এ মামলায় আগে গ্রেপ্তার তিনজন আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।এর মধ্যে গত ৩ জুন আসামি শিলাস্তি রহমান,৪ জুন তানভীর ভুঁইয়া,৫ জুন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া এবং ১৪ জুন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু উক্ত মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন।

এছাড়া ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে ১৩ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছিল।জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৬ জুন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুনের উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন

আরও খবর

Sponsered content