ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

এখনও বাজারে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল

  প্রতিনিধি ৪ আগস্ট ২০২৩ , ৫:৫১:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।বিক্রি বন্ধ হচ্ছে কিনা তা দেখতে ১ আগস্ট থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে অভিযান চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়।কিন্তু সঠিক তদারকির অভাবে এখনও বাজারে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল।তবে বিক্রেতারা বলছেন,খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করলে বিপাকে পড়বে নিম্ন আয়ের মানুষজন।তাই এই নির্দেশ আবার বিবেচনার অনুরোধ জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজারে মনোহারি পণ্যের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়,এখনও খোলা তেল বিক্রি চলছে। ‘বিল্লাল অয়েল’ নামে এক দোকানের বিক্রেতা বলেন,খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ থাকলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।বন্ধ হলে তো আমরাই বন্ধ করে দেবো।খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে দিলে আমাদের যেমন সমস্যা হবে,তেমনি গরিব মানুষেরও সমস্যা হবে।মাঝখান থেকে লাভ হবে বড় তেল কোম্পানিগুলোর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন,আমাদের কাছে নোটিশ এসেছে ১ আগস্টের পর থেকে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করলে জরিমানা করা হবে।কিন্তু এখনও জোরালোভাবে এটা কার্যকর হয়নি।তাই আমরা এখনও বিক্রি করছি।আর সরকার যদি একেবারেই না দেয় তাহলে তো আর আমরা বিক্রি করতে পারবো না।

বিক্রেতারা জানান,খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করতে পারলে বড় বড় তেল কোম্পানিগুলো এই ব্যবসা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।নিজেদের চলার পথটা আরও মসৃণ হবে।তাই তারা এটা বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে।

খোলা তেল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন,এখন যদি বাজারে খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয় তাহলে হয়তো কিছু দিন পর বড় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেবে। নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছেই থাকবে,আমাদের আর কিছু করার থাকবে না।

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন,আমাদের মনিটরিং চলছে।আগামী সোমবার (৭ আগস্ট) আমরা সবাইকে নিয়ে একটি মিটিং করবো।আলটিমেটলি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে।ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে বসে তারা যাতে আর না দেয় সয়াবিন,সে ব্যাপারে কথা বলবো। খোলা সয়াবিন আর থাকছে না।তারা যাতে সব তেলই প্যাকেটজাত করে সেটাই আমরা বলছি।

এখনও বাজারে খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে,তদারকি ঢিলেঢালাভাবে হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের মনিটরিং চলছে,অভিযান না।এখন যে তেলটা বাজারে চলে এসেছে সেটা যদি আমরা অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেই তাহলে সে তেলটার কী হবে।আমরা তো তিন বছর ধরেই চেষ্টা করছি।বিভিন্ন সময় টাইম বাড়ানো হতো।তাই আমরা এবার নির্দেশনা দিয়েছি।এখন মনিটরিং করে সোমবার (৭ আগস্ট) বসবো ইন্ডাস্ট্রিগুলোর সঙ্গে।তারা যাতে সব তেল প্যাকেটজাত করে এবং কতদিন সময় লাগবে সে ব্যাপারে আলোচনা করবো।

বিপাকে পড়বেন নিম্ন আয়ের মানুষ!

বিক্রেতারা জানান,খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ করা ঠিক হবে না।এতে গরিব মানুষ বিপদে পড়ে যাবেন।

এক বিক্রেতা বলেন,খোলা তেলটা শ্রমিক থেকে শুরু করে অনেক সচ্ছল মানুষও কিনে নিয়ে যায় আমার কাছ থেকে। এখন এটা যদি বন্ধ করে তাহলে যারা ভালো অবস্থানে আছে তাদের হয়তো সমস্যা কম হবে,তবে নিম্ন আয়ের মানুষ বা যারা শ্রমিক,বাসায় কাজ করে,রিকশা চালায়,তাদের অনেক ক্ষতি হবে।

মিরপুর দারুচিনি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আব্দুল মালেক বলেন, আমার হোটেলে তো খোলা সয়াবিন তেল ব্যবহার করি। যদি এটা বন্ধ করে তাহলে বোতলের তেলই ব্যবহার করতে হবে। আমার খরচ বেড়ে যাবে।তবে আমার মনে হয় খোলা তেল বন্ধ করে দিলে ভালোই হবে।এতে মানুষকে আরও ফ্রেশ জিনিসটা দিতে পারবো।এখন তো কম খরচের জন্য আমরা খোলা তেলটা ব্যবহার করি,তখন আর করা হবে না।

পোশাক শ্রমিক রাহেলা বলেন,খোলা তেল বিক্রি বন্ধ হলে আমার মতো মানুষের সমস্যা হয়ে যাবে।আমার তো অনেক সময় এক পোয়া (২৫০ মি.লি.) তেলও কিনতে হয়।কিন্তু যদি সব বোতলের তেল কিনতে হয় তখন আমরা কীভাবে কিনবো?

খোলা তেল বিক্রি হলে স্বল্প আয়ের মানুষের কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন,যেহেতু বাজারে কোনও খোলা তেল থাকবে না,সবই প্যাকেটজাত হবে; সেক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য মিনিপ্যাক তেল রাখার পরিকল্পনা আমরা করছি।এক্ষেত্রে ২০০,২৫০ বা ৫০০ মিলি লিটারের তেলের প্যাকেট থাকবে।

তিনি আরও বলেন,এখন তারা (স্বল্প আয়ের মানুষ) যে তেলটা সয়াবিন তেল ভেবে কিনছেন সেটা আসলে সয়াবিন তেল না।বিক্রেতারা সয়াবিন বলে বিক্রি করছে,আসলে সেগুলো পাম অয়েল বা সুপার পাম অয়েল।এটা সয়াবিনের দামে কিনে ক্রেতারা আরও প্রতারিত হচ্ছেন।

আরও খবর

Sponsered content