জাতীয়

একুশে বইমেলায় স্পন্সর কোম্পানির কাছ থেকে কত টাকা আসে–!

  প্রতিনিধি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ১:৫৯:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।অমর একুশে বইমেলায় স্পন্সর কোম্পানির কাছ থেকে কত টাকা আসে,তার হিসাব নেই মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির কাছে।

মূলত মেলার দায়িত্ব পাওয়া ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান স্পন্সর কোম্পানির সাথে চুক্তি করে টাকা সংগ্রহ করে। সরকার থেকেও বইমেলার জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয় না।বাংলা একাডেমির বার্ষিক বাজেটের উৎসব খাত থেকে কিছু অংশ খরচ করা হয় বইমেলা পরিচালনায়।

এই প্রক্রিয়াটিকে ‘বিস্ময়কর’ বলছেন সাংস্কৃতিক সংগঠন, অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার বলেন, “ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান বইমেলার জন্য স্পন্সর সংগ্রহ করছে এবং কত টাকা স্পন্সর কোম্পানি থেকে নেওয়া হচ্ছে,তার হিসাব বাংলা একাডেমি জানছে না– এটা হওয়া উচিত নয়।মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমির কাছে অবশ্যই স্পন্সর থেকে আয়ের হিসাব থাকা উচিত।”

বইমেলার জন্য সরকারের তরফ থেকেও আলাদা বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,“একুশের চেতনাকে ধারণ করে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।এখানে বেসরকারি খাত থেকে স্পন্সর কেন নিতে হবে? সরকার তো পুরো খরচ বহন করতেই পারে।

“সরকার প্রতি বছর বইমেলার জন্য একটা আলাদা বরাদ্দ দিতে পারে।৪/৫ কোটি টাকা হলে তো মেলায় আর বেসরকারি খাতের স্পন্সর দরকার হয় না।বরং প্রকাশকদের প্রণোদনাও দেওয়া সম্ভব।বইমেলা এখন গণমানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে, সরকারের উচিত এর আর্থিক দায়িত্ব নেওয়া।”

বইমেলার আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,একুশে বইমেলার জন্য আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয় না সরকার। স্পন্সরশিপ,স্টল ভাড়া এবং বাংলা একাডেমির বার্ষিক বাজেট থেকে পাওয়া অর্থে মেলার ব্যয় মেটানো হয়।আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে স্টলের অবকাঠামো,প্রবেশদ্বার,মূল মঞ্চ নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট কিছু কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অবশ্য সেজন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে কোনো টাকা দেয় না একাডেমি।ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি স্পন্সর জোগাড় করে তাদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থে ওই খরচ মেটায়।এ ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাব বাংলা একাডেমিকে জানানো হয় না।লাভ বা লোকসান যাই হোক সব দায়িত্ব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির।

এবার বইমেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে রয়েছে ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। জানতে চাইলে এ কোম্পানির ম্যানেজার (অপারেশন্স) লিখন বলেন, “স্পন্সর থেকে কত টাকা আসে,সেটি আমরা গণমাধ্যমে প্রকাশ করি না।”

বইমেলায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাজ কি থাকে জানতে চাইলে লিখন বলেন,মেলার অবকাঠামো নির্মাণ, স্টল বিন্যাস,স্ট্রাকচার তৈরি (স্টলে যেন পানি না যায়),এছাড়া চারপাশের বাউন্ডারি তৈরি,ব্র্যান্ডিংসহ বেশ কিছু কাজ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান করে।

বইমেলা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন,বাংলা একাডেমি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আয়-ব্যয়ের অডিটের (নিরীক্ষা) ঝামেলায় যেতে চায় না।অনেকটা দায়িত্ব এড়ানোর জন্যই স্পন্সরের বিষয়টি পুরোপুরি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেয় তারা।যেহেতু ইভেন্ট ম্যানেজারকে কোনো টাকা দেওয়া হচ্ছে না,তারা স্পন্সর থেকে কত টাকা আনতে পারল, তার হিসাবও বাংলা একাডেমি জানতে চায় না।

গত বছর বইমেলায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিল ‘সিএনএস’ নামে একটি কোম্পানি।তার আগের বছর ছিল ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন্স।এর আগে পরপর তিনবার ‘নিরাপদ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স লিমিটেড’ ইভেন্ট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে।

নিরাপদ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে এই বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

স্পন্সরশিপ থেকে কত টাকা আসে তার হিসাব বাংলা একাডেমির কাছে না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বইমেলার সদস্য-সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “এটা এক ধরনের ‘গ্যাপ’।আমরা আগামী বছর থেকে এটা পরিবর্তন করব।স্পন্সর কোম্পনি মূলত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে মেলায় আসে।ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানই স্পন্সর নিয়ে আসে।তারা কত টাকা স্পন্সর পেল, সেটা আমাদের জানায় না।

“কিন্তু এবার আমরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে বলেছিলাম,যত টাকা নেওয়া হোক-সেটা আমাদের জানাতে হবে।চুক্তিটা আমাদের সামনে আনতে হবে।তারা এবারও সেটা করেনি।মেলা শেষে তারা তো আমাদের একটা প্রতিবেদন দেবে,সেখানে প্রসঙ্গটা তাদের কাছে তুলব।এখন বলতে পারছি না স্পন্সর থেকে কত টাকা এসেছে।তবে তারা জানালে সেটা আমরা মেলার পর বলতে পারব।”

এবার কারা স্পন্সর ছিল জানতে চাইলে কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন,এবার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ‘বিকাশ’, ‘আবুল খায়ের গ্রুপ’।আর টয়লেট পরিষ্কার,ঝাড়ু দেওয়া, মাঠে ময়লা পরিষ্কারের জন্য ডেটলকে রাখা হয়েছে।”

মেলার কফি শপ,খাবারের দোকানগুলো স্পন্সরের আওতায় থাকে না জানিয়ে মেলার সদস্য-সচিব বলেন,“খাবারের দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে স্টল বরাদ্দ নিয়েছে।”

সরকার থেকে বইমেলার জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ আছে কিনা জানতে চাইলে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “সরকার বা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বইমেলার জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই।বাংলা একাডেমির বছরব্যাপী যে বাজেট থাকে, সেখান থেকে কিছু টাকা বইমেলায় খরচ করা হয়।সেই বাজেট তো আর খুব বেশি থাকে না।যার জন্য বইমেলায় স্পন্সর দরকার হয়।ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিই মূলত স্পন্সর থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।”

তবে সরকারের কাছে বইমেলার জন্য আলাদা বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী,সচিব মহোদয় এবং আমাদের মহাপরিচালক মহোদয় মিলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন,যেন বইমেলার জন্য আলাদা একটি ‘কোটেশন’ খুলে আগামী দিনগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়।”

গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এবারের একুশে বইমেলার পর্দা নামবে মঙ্গলবার।বিকাল ৩টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। বিকাল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’ এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।

বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ,সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

অনুষ্ঠানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে।এছাড়া সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আরও খবর

Sponsered content