শিক্ষা

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিনটি ছিল তারকাদের জন্য উৎকণ্ঠার

  প্রতিনিধি ২৬ নভেম্বর ২০২৩ , ৪:১৩:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।সাফা কবির,তাসনিয়া ফারিণ, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি,সাদিয়া আয়মান ও তটিনী।এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিনটি ছিল তাঁদের জন্য উৎকণ্ঠার।পরীক্ষায় কত পাবেন,আর কে কী বলবে,এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এই তারকারা।একসময় উৎকণ্ঠা কাটিয়ে হাসি ফোটে।সেই দিন যেন এখনো চোখের সামনে ভাসে।সেই স্মৃতিগুলো ভোলার মতো না। আজ দেশের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।এই দিনে সাফা কবির,তাসনিয়া ফারিণ, জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি,সাদিয়া আয়মান ও তটিনীরা যেন শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বললেন।ফিরলেন অতীতে।

অভিনেত্রী সাফা কবির এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার আগের রাতে ছিলেন নির্ঘুম।চিন্তায় ঘুম আসছিল না। অনেক নার্ভাস ছিলেন। কী হবে, এই চিন্তাই তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভাবায়। এ জন্য মন খারাপ ছিল। পরে দুপুরের দিকে ভয়ে ভয়ে যান ফলাফল জানতে। সাফা জানান, পড়াশোনায় তাঁর খুব বেশি মনোযোগ ছিল না। পড়তে ভালো লাগত না। শুধু মায়ের জন্যই তাঁর পড়তে যাওয়া।তাঁর ভাষায়,মায়ের জন্যই পড়াশোনায় যা মনোযোগ ছিল।সাফা বলেন,ফলাফল জানতে ভয়ে ভয়ে কলেজে গিয়েছিলাম।এদিকে রাত থেকে কী যে চিন্তা। ঘুমাতে পারিনি।সবাই জানতে চাইছেন কত পেয়েছি।পরে ভয়ে ভয়ে রেজাল্ট দেখে আমি খুব খুশি। আম্মুর কথা ভেবে আরও ভালো লাগল।কারণ,আম্মু এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলেন।আমার রেজাল্ট হলো কাঁটায় কাঁটায়, যা প্রত্যাশা করেছি, তা-ই।’ ২০১২ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। তিনি পড়াশোনা করতেন বিএফ শাহীন কলেজে।এইচএসসিতে ৪.৫০ পেয়েছিলেন।

‘সেই দিন ছিল আমার কাছে আতঙ্কের নাম।খুব ভয় লাগছিল।ফলাফল নিয়ে কী যে হয়,সেই চিন্তায় রাত জেগে ছিলাম।’ কথাগুলো বললেন তাসনিয়া ফারিণ।তার আগে বলে নেওয়া ভালো,ফারিণ কিন্তু মনোযোগী ছাত্রী।তবে সেবার এইচএসসি পরীক্ষার আগে হঠাৎ করেই একটা অঘটনা ঘটে গেল।রাত জেগে জীববিজ্ঞান পড়াশোনা করে পরীক্ষার হলে বিপদে পড়ে যান।রাতে কম ঘুমানোর কারণে পরীক্ষার সময়ে হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে পড়ে যান।আধা ঘণ্টা কী হয়েছে, সেটা তাঁর মনেই নেই।ফারিণ বলেন, ‘ফলাফলের আগে আমি শুধু বারবার বলেছি,আর কখনোই রাত জেগে পড়ব না।আল্লাহ যেন এবার মুখ তুলে তাকান।আমার রেজাল্ট যেন ভালো হয়।কারণ,আম্মার একটা ভয় ছিল।’

ফারিণ আরও জানান,পড়াশোনার ভালোর জন্য তাঁর মা তাঁকে চাপে রাখতেন।কখনো বলতেন,খারাপ করলে পড়াশোনা করে আর লাভ কী।বিকল্প ব্যবস্থা নেবেন।তখন তিনি চাপে পড়ে যেতেন।ফারিণ বলেনআমি তো মায়ের জন্য পড়েছি। মায়ের কড়াকড়ি ছিল এ বিষয়ে।একদম নিয়মের মধ্যে থাকতে হতো।এমনও হয়েছে,অনেক সময় পড়াশোনার বাইরে কিছুই চিন্তা করতাম না।যেন পড়াটাই ছিল আমার জীবন।আসলে প্রেশার না দিলে পড়তাম না,এটা সত্য।এ জন্য সব সময় ভালো ফল করেছি। এইচএসসির রেজাল্ট দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি।’ হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ফারিণ। তিনি এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।

২০১৭ সালের কথা।সেবার প্রায় প্রতিদিনই পরীক্ষার হলে যাওয়ার সময় জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি শুনেছেন,অনেকেই নাকি প্রশ্ন পেয়েছেন।বুঝতে বাকি থাকেন না,প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে।কেউ কেউ সেই প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করছেন।সেগুলো হিমিকে দিলেও তিনি না করে দিতেন।তাঁর কাছে মনে হতো, নিজের যোগ্যতায় খারাপ হলে হোক।সেভাবেই প্রশ্নের উত্তর দেন।মজার ব্যাপার হলো,পরে বন্ধুদের কাছে শুনতে পান, তাঁদের প্রশ্ন কমন পড়েনি।ভুলভাল উত্তর দিয়েছেন।তিনি বলেন,পরীক্ষার ফলাফলের দিন আমি ভয়ে ছিলাম।বলা যায়, পরীক্ষার ফলাফল দেখতে যাচ্ছি আর কাঁপছি।কারণ,যারাই ফলাফল দেখছে,তারা সবাই ৪ পয়েন্ট থেকে বড়জোর ৪.৫০ পেয়েছে।সবাই আমাকে বলছে, “তোর কী তোর কী?” শুনে তো আমার ভয় বেড়ে গেল। হয়তো আমিও এমনই পাব। পরে রেজাল্টে দেখি জিপিএ-৫ পেয়েছি।’

সেবার ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে হিমিই তাঁদের ব্যাচ থেকে একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।ফল শুনে আর কে পায় হিমিকে। খুশিতে আত্মহারা তাঁর পরিবার।হিমি জানান, তাঁকে নিয়ে পরিবার সব সময় গর্ব করত।তিনি তাদের মান রাখতে পেরেছিলেন।এটাই তাঁকে সবচেয়ে বেশি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করিয়েছে।তিনি বলেন,পরিবার থেকে আমাকে কখনোই কেউ বলেনি বা পড়াশোনা নিয়ে চাপ দেয়নি। তাদের কথা ছিল, “তোমার যে যোগ্যতা,তার চেয়ে খারাপ কিছু যেন না হয়।”’ হিমি তখন ধারাবাহিকে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতেন।এমনও হয়েছে,পরীক্ষার মধ্যে শুটিংয়েও অংশ নিয়েছেন।শুটিংয়ের ফাঁকে তিনি পড়াশোনা করতেন।

ফলাফলের আগে থেকেই সবার মতোই দুশ্চিন্তায় ছিলেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। সেদিন তিনি চাইছিলেন স্বাভাবিক থাকতে।কিন্তু ফলাফল তাঁকে স্বাভাবিক থাকতে দেয়নি। সাদিয়া আয়মান বলেন,আমি আমার মতোই পড়াশোনা করেছি। মনোযোগীই ছিলাম।রেজাল্ট নিয়ে সবার যা হয়,আমারও অভিজ্ঞতা তেমনই।পরে রেজাল্ট দেখে খুশি হয়েছি।ফলাফল নিয়ে আমারও এমনটাই ধারণা ছিল।কিন্তু আম্মু ভেবেছিলেন, আমি হয়তো এ প্লাস পাব।না পাওয়ায় কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল।কিন্তু পরিবার থেকে পড়াশোনা নিয়ে কখনোই চাপ দেয়নি।’ ২০১৭ সালে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তাঁর কলেজ ছিল বরিশাল মহিলা কলেজ।তিনি পরীক্ষায় ৪.৩৯ পেয়েছিলেন।

পড়াশোনার খুব মনোযোগ ছিল তানজিম সাইয়ারা তটিনীর। সারাক্ষণ নাকি বই নিয়ে বসে থাকতেন।বন্ধুরা বলতেন,তাঁর নামের সঙ্গে মেধাবীই মানানসই।তাই পরীক্ষায় কত পাবেন, সেটা বন্ধুরা আগেই বলে দিয়েছিলেন।তারপরও ফলাফল নিয়ে ভয় ও চিন্তায় ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী তটিনী।তিনি বলেন,আমি পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিলাম।সেই পড়াশোনার দিনগুলোর কথা মনে হলে এখনো ভয় লাগে। হয়তো এই জন্য বাড়তি চাপে থাকতাম।ভয়ের মধ্যে থাকতে হতো।ভয়ে ভয়ে রেজাল্ট দেখতে গিয়েছিলাম।পরে তো দেখি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি।তখন তো খুবই খুশি হয়েছি।’

পড়াশোনা করে চিকিৎসক হওয়ার কথা ছিল তটিনীর।তাঁর পছন্দ ছিল মেডিকেল সায়েন্স নিয়ে।অবশেষে তিনি হয়ে গেলেন অভিনেত্রী।তিনি বলেন,আমার অভিনয় নিয়ে কখনোই কোনো ইচ্ছা ছিল না।হঠাৎ করেই অভিনয়ে আসা।এখন তো অভিনয় করেই যাচ্ছি।কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার সময়ের সেই দিনগুলো এখনো চোখের সামনে ভাসে।রেজাল্টের আগে ভয় পেতাম আর পরে তো উৎসবের মতো মনে হতো।’তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন বরিশাল মহিলা কলেজ থেকে।

আরও খবর

Sponsered content