সারাদেশ

আল্লাহ ওয়াস্তে পাওয়া মাংস বিক্রি করে ঘর ভাড়া দেবে!

  প্রতিনিধি ১৭ জুন ২০২৪ , ৬:০১:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।মোহাম্মদ ইউনূস পেশায় রিকশাচালক। থাকেন চট্টগ্রাম নগরের শেরশাহ এলাকায়।আজ সোমবার সকালে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।নানা জায়গায় ঘুরে ৮-৯ কেজি মাংস সংগ্রহ করতে পেরেছেনসেখান থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য রেখেছেন তিন কেজির মতো।বাকি মাংস বিক্রি করতে এসেছেন সড়কে।

নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় যখন ইউনূসের সঙ্গে কথা হচ্ছিল,তখন শত শত মানুষের ভিড় ওই জায়গায়।কেউ কোরবানির মাংস বিক্রেতা,কেউ ক্রেতা।তবে দুই পক্ষের মিল একটাই—তাঁদের কেউই পশু কোরবানি দিতে পারেননি।সবাই প্রায় নিম্নবিত্ত।এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল ইউনূসের সঙ্গে।তিনি জানালেন,পশু কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই।বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই মাংস তিনি জোগাড় করেছেন।সেখান থেকে কিছুটা বাসার জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে চাল,ডালসহ বাজারসদাই করবেন।

ইউনূস বলেন,তাঁর বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়।বেশ কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরের থাকছেন।রিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন।তাঁর একমাত্র সন্তানের বয়স সাত বছর।এবার ঈদের পরপরই তাঁরা শহর ছেড়ে বাড়ি চলে যাবেন।কারণ জানতে চাইলে বলেন,শহরে অনেক খরচ।সংসার চালানো কঠিন।ঘরভাড়া বাবদ দিতে হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকা।

ইউনূসের কাছে হাড়,চর্বি ও মাংস মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কেজি হবে।তিনি দাম হাঁকছেন সাড়ে তিন হাজার।তবে ক্রেতারা কেউ দিতে চাইছিলেন ১ হাজার ৬০০,কেউ ২ হাজার।

২ নম্বর গেট মোড়ে ইউনূসের মতো আরও অর্ধশতাধিক মাংস বিক্রেতাকে পাওয়া গেল।তাঁদের বেশির ভাগই বাড়ি বাড়ি ঘুরে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে এনেছেন।তাঁরা কিছু অংশ রেখে বাকিটা বিক্রি করছেন।এ ছাড়া কাটাকুটির কাজ করে পাওয়া মাংসও বিক্রি করছিলেন কয়েকজন।নির্দিষ্ট একটি বা দুটি গরুর মাংস হলে দামও বেশি চাইছিলেন তাঁরা।আর বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাওয়া মাংস,যেগুলো মিশিয়ে ফেলা হয়েছে, সেগুলোর দাম কিছুটা কম পড়ছিল।

আরেক বিক্রেতা মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেনসকালে নগরের মেয়র গলি এলাকায় একটি গরু কাটাকুটি করে কিছু মাংস পেয়েছেন তিনি।আবার কয়েকটি বাড়ি থেকে কোরবানিদাতারা মাংস দিয়েছেন।এর মধ্যে দুপুরে বাসায় নিয়ে গেছেন চার কেজির মতো।বাকি তিন কেজি মাংস অন্তত দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারলে বাজার খরচটা হয়ে উঠে যাবে।

পরে সাইদুল এক ক্রেতার কাছে সেসব মাংস ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।কথা বলে জানা গেল,ওই ক্রেতার নাম গোলাম আজম।তিনি থাকেন ষোলশহর ২ নম্বর গেটের একটি বস্তিতে।গোলাম আজম বলেন,কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই।দিনমজুরিকরেন।কিন্তু প্রতিবছর ঈদের দিন এভাবে ছুটা মাংস কেনেন। এতে তাঁদের ঈদ কেটে যায়।

কথা হয় আরেক বিক্রেতা মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে।তিনিও এঘর-ওঘর ঘুরে মাংস এনেছেন।ফারুক জানান,ছয় থেকে সাত কেজি মাংস আছে তাঁর কাছে।মাংস পরিষ্কার।হাড় কম। দাম বলছেন সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।তখন পর্যন্ত দাম উঠেছিল সাড়ে তিন হাজার টাকা।

কথায় কথায় ফারুক জানান,তাঁর ঘরভাড়া তিন হাজার টাকা। ছোট পরিবার।তিনি একটি সেলুনে কাজ করেন।মাংস বিক্রি হলে ঘরভাড়ার টাকা উঠে যাবে।এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এভাবে মাংস বিক্রি হয় প্রতিবছর।

আরও খবর

Sponsered content