প্রতিনিধি ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৬:১৭:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাত করার জন্য ভিন্ন একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসাবে বাংলাদেশে ঢোকেন এনায়েত করিম চৌধুরী।ইতোমধ্যে তিনি সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন।বর্তমান সরকার বদল করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করাই ছিল তার টার্গেট। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় পুলিশ।

রমনা মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সোমবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান রিমান্ডের আদেশ দেন।১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন ডিবি পুলিশের রমনা জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর আক্তার মোর্শেদ।
রিমান্ড শুনানিতে আক্তার মোর্শেদ বলেন,শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিন্টো রোডের মন্ত্রীপাড়া এলাকায় প্রাডো গাড়ি নিয়ে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় এনায়েত করিমকে।এ সময় তার গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। তার কাছ থেকে পাওয়া দুটি আইফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।৬ সেপ্টেম্বর কাতার এয়ারওয়েজে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট।
অভিযুক্ত জানান,অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছেন এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন।পরে তিনি গুলশানে অবস্থান করতে থাকেন।আগামী ২১ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় পুনর্বহাল করবেন বলে জানান এ আসামি।তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সেনাবাহিনী সমর্থিত নতুন জাতীয় সরকার অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।নতুন এই সরকারে কারা থাকবেন এবং সরকারপ্রধান কে হবেন তা একটি প্রভাবশালী দেশ নির্ধারণ করে দেবে বলেও জানান। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বলেন,তিনি নিজেকে সিআইএ’র এজেন্ট দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ‘র’-এর এজেন্ট।প্রতিবেশী রাষ্ট্র আমাদের বন্ধু নয়,সবচেয়ে বড় শত্রু। রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় রয়েছে তারা।দেশ যখন নির্বাচনমুখী,ন্যায়বিচার,আইনের শাসনের পথে হাঁটছিল, নির্বাচনের জন্য সবাই কাজ করছিল।কিন্তু একটা রাষ্ট্র এটা চায় না।বাংলাদেশকে ভারত তার অঙ্গরাজ্যে পরিণত করতে চায়।এ এজেন্ট বাংলাদেশে এসে পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে।তার ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করছি।
এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে অ্যাডভোকেট ফারহান মো. আরাফ রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন।তিনি বলেন,প্রথমে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়।যখন গ্রেফতার দেখানোর কিছু পেল না,পরে মামলা করে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাইল।গত ৬ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশে আসেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।তাকে গ্রেফতার করা হলো।তিনি আটক কেন?গাড়ি নিয়ে ঘোরাফেরা করার কারণে? বলা হচ্ছে,বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই,তিনি কোন দেশের এজেন্ট।বলা হচ্ছে,বর্তমান সরকারের পতনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।এজাহার, রিমান্ড ফরওয়ার্ডিংয়ে বলা আছে,সরকারের বিভিন্ন লোকের সঙ্গে মিটিং করেছেন।সরকার পতন করতে এসে সরকারের লোকজনের সঙ্গে মিটিং করবেন?তাহলে কীভাবে সরকার পতন করবে?এনায়েত করিম চৌধুরী রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সম্পৃক্ত হলে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে গ্রেফতার করা হতো।সেই ট্যাগের প্রচলন রয়ে গেছে। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হলো। কোনো কিছু না পেয়ে মামলা দিল।তার রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। পরে শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।

















