প্রতিনিধি ১৩ আগস্ট ২০২২ , ৭:১০:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:-ছোট বেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন এমন কিছু করার যা দিয়ে মানুষের সেবা দেয়া যায়। পরীক্ষার খাতায় রচনা লেখার সময় তিনি ডাক্তার বা শিক্ষক হতে চাই বলে ইচ্ছা পোষণ করতেন। তবে সেটা ছিল ফ্রেমে বাধা স্বপ্ন। বইয়ে ছিল বলেই লিখতেন। সেটা তার স্বপ্ন ছিল না। তার ইচ্ছা বড় হয়ে দেশের সেবা করা। সেই ইচ্ছা থেকেই নিজের স্বপ্নকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তিনি। ৩৬তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। তবে এএসপি হওয়ার আগে তাকে সামাল দিতে হয়েছে সংসার।
শ্বশুরবাড়ি থেকে পড়াশোনা করে নিজের ভাগ্য গড়েছেন তিনি। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের মেয়ে মেশকাতুল জান্নাত রাবেয়ার সফলতার গল্প এটি। কিভাবে স্বপ্নকে ছুঁয়েছেন তিনি শুনুন তাঁর নিজের মুখেই- জানালেন নেত্রকোনা জেলার হাওর-বাওর খ্যাত ভাটি বাংলার রাজধানী মোহনগঞ্জের বাত্তারগাতি গ্রামেই তার শৈশবকাল কেটেছে। মাইলোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকেই স্বপ্নের বীজ রোপন করেছেন তিনি। জান্নাত বলেন, বাবা পেশায় স্কুল শিক্ষক। বাবা তার ছাত্রছাত্রীদের সফলতার গল্প প্রায়ই আমাকে বলতেন আর তৃপ্তি পেতেন। আর সেই সব গল্প শুনেই নিজের মনে ইচ্ছে জাগে বাবার সফল ছাত্রছাত্রী নয়, এবার নিজের মেয়ে হয়েই বাবাকে তৃপ্তি দেব।
স্কুল জীবনে পড়াশুনা নিয়ে তেমন বেশি সচেতনতা না থাকলেও কলেজে ভর্তি হয়ে নতুন স্বপ্নের ডানা মেলতে শুরু করি। নতুন উদ্যমে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করি। তাই কলেজ জীবনটা কেটেছে জীবন গড়ার সময় হিসেবেই। কলেজের স্যারদের প্রিয় পাত্র ছিলাম আমি। কলেজ জীবন শেষ করার পর স্বপ্ন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। সুযোগ পাই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তির। ওই বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্সে ১ম বিভাগের সঙ্গে উত্তীর্ণ হই। আগেই থেকেই স্বপ্ন দেখতাম দেশের সেবা করার।
তাই বিসিএসে পড়াশুনা প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। এদিকে মাস্টার্স শেষ হতে না হতেই বিয়ে হয়ে যায় আমার। ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক উৎকণ্ঠার সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করলাম। কিন্তু জীবনসঙ্গীর আগ্রহে ভয় ও উৎকণ্ঠ একসময় উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় রূপ নিল। পরীক্ষা দেই জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা এর সহকারী পরিচালক পদে। কিন্তু ভাবতেই পারিনি একসময় রাত জেগে মাসুদ রানা আর তিন গোয়েন্দা পড়া সেই মেয়েটি নিজেই গোয়েন্দা বনে যাবে। বর্তমানে আমি এনএসআইতে চাকরি করছি। আর এটাই আমার জীবনের প্রথম চাকরি।
সংসার, চাকরি এসব মানিয়ে খুব কষ্ট করেই বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিলাম। ৩৫তম ভাইভা দিয়ে আশাবাদী ছিলাম। তবে হয়নি, তাই বলে আশাহত হয়নি, আস্থাও হারাইনি। এরপর ৩৬তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। তাতে যতটানা খুশি হয়েছি তার চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। সবসময়েই পরিশ্রমের সাথে ধৈর্য ধারণ করেছি। পড়াশোনা তেমন করার সময় পাইনি কিন্তু ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছি। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় আমি বাবা-মা, শাশুড়ি, স্বামীসহ পুরো পরিবার থেকে সহযোগিতা পেয়েছি।
তারপরেও সমাজ, সংসার, চাকরির তাল বজায় রেখে আজকের এই লক্ষ্যে পৌঁছাটা আমার জন্য একটু কঠিনই ছিল। অধ্যবসায়, অনুপ্রেরণার আর চেষ্টার ফলে তা অর্জন করতে পেরেছি। এনএসআইয়ের চাকরির সুবাধে দেশের সেবা করায় নিয়োজিত ছিলাম এবং নতুন করে পুলিশের মত মহান পেশায় যোগদান করতে যাচ্ছি। সে লক্ষ্যে সকলের দোয়া ও আর্শিবাদ চাই। নতুনদের জন্য বলবো ধৈর্য্যরে সঙ্গে অধ্যবসায় করুন এবং নিজের উপর আস্থা রাখুন। অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাবেন। বিজয় আপনার হবেই হবে ইনশাল্লাহ। আমি সকলের দোয়া প্রার্থী।