প্রতিনিধি ১ জুলাই ২০২২ , ১০:২৩:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ পিতার মৃত্যুর পরই চাচা ও ফুপু-ফুপা কূটকৌশলে জমিসহ বসতঘর দখলের মিশনে নেমেছে। জমির বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও রক্তের ওই সকল আত্মীয়-স্বজনরা পরিকল্পিতভাবে হয়রানীমূলক কার্যক্রম করে এলাকা থেকে তাড়ানো পাঁয়তার চালিয়ে যাচ্ছে। এমন ঘটনার অনুকূলে ন্যায্য বিচার চেয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরাবর গত ৬ জুন লিখিত আবেদন করেছেন পিতৃহারা দুই বোন। তারা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। আবেদনকারী দু’বোন হলেন আজলিনা শরীফ ও তাসমিম শরীফ। সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে বেড়িয়ে এসেছে মা ও দু’মেয়ের মানবেতর জীবন-যাপনের তথ্য।
বরিশাল-ঝালকাঠি নবগ্রাম রোড রুইয়ার পুল সংলগ্ন নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ড উত্তর সাগরদি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন মৃত শামসুল হোসেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি তার তিন ছেলে ও চার মেয়েকে দলিলমূলে জমি দিয়ে দেন। পিতার মৃত্যুর পর তার ছোট ছেলে এস.এম. শফিকুল আলম ও বড় মেয়ে নিলিমা বেগম পরলোক গমন করেন। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর শেবাচিম হাসপাতালে (হৃদরোগ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছিল শফিকুল আলম। মৃত্যুর তিন বছর পূর্বে শফিকুল আলম তার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে পৈতৃক সম্পতি দলিলমূলে দিয়ে দেয়। অথচ তার মৃত্যুর পর মরহুমের ভাই-বোন রফিকুল আলম হারুন, মাহবুব আলম বাবুল ও বোনরাসহ বোনের স্বামী গোলাম রসুল ও মিন্টু তালুকদার মরহুমার জমিসহ বসতঘর দখলে মেতে উঠে। এমনকি জমির সীমানার দেয়াল ভেঙ্গে ‘বায়তুস শরীফ জামে মসজিদ’ নামে জোরপূর্বক নির্মাণাধীন স্থাপনার কার্যক্রম শুরু করে। তাই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের দাবীতে সিটি মেয়র বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। কারণ, মসজিদের নামে জোরপূর্বক বাড়তি জমির অংশটুকু দিতে রাজি নয় আবেদনকারী দুই বোন। কেননা পিতার দলিলমূলে রেকর্ড হওয়া জমির বৈধ মালিক হলেন তারা দু’জন।
আবেদনকারী আজলিনা শরীফ ও তাসমিম শরীফ বলেন, পিতা মৃত্যুর পর এতিম হয়ে গেছি। মা বিধবা হয়ে গেছে। মা-মেয়ে মিলে মানবেতর জীবন-যাপন করতেছি। নানান কষ্টের মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। মায়ের নামে থাকা জমিতে রয়েছে বাবার নির্মাণ করা বসতঘর। করোনার সময় ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসে চাচা রফিকুল আলম হারুন। থাকার স্থান না পেয়ে তিনি ভাড়াটিয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আমাদের বসতঘরে উঠে আর নামছে না। এখন বলতেছে এ ঘর তার। ঘর নির্মাণের সময় বাবা শফিকুল আলমকে সকলের অগোচরে টাকা দেয়ার কথা বললেও চাচা উপযুক্ত কোন প্রমাণ দিতে পারেনি। শুধু বসতঘরই নয়, দুই বোনের নামে থাকা জমি মসজিদের নাম সামনে রেখে সীমানার বাউন্ডারী দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেছে। এবংনির্মাণাধীন স্থাপনার কাজ জোরপূর্বক শুরু করেছে। তাই ন্যায্য বিচার চেয়ে সিটির জননন্দিত মেয়র বরাবর আবেদন করেছি। আবেদনের অনুকূলে সিটি করপোরেশনের নির্দেশে মসজিদের নির্মাণাধীন কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। তবে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। মসজিদের নামে বাপ-চাচারা অনেক আগেই ৫ শতাংশ জমি দিয়ে দিয়েছে। সেই ৫ শতাংশ জমিতেই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ৫ শতাংশ জমি বুঝে পাওয়ার পরও এখন মসজিদকে সামনে রেখে জোরপূর্বক দু’বোনের জমি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চাচা-ফুপারা। মজসিদ কমিটির নামে তারাই এমন কার্যকলাপ করতেছে। যা ইসলাম বিরোধী।
দুই আবেদনকারীর মা অর্থাৎ মৃত শফিকুল আলমের স্ত্রী শিরিন আক্তার বলেন, বসতঘরের ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিল রফিকুল আলম হারুন। এখন বলতেছে তিনি কোন স্বাক্ষর করেনি। বসতঘরের সকল কাগজপত্র আমাদের নামে থাকার পরও রফিকুল আলম হারুন জোরপূর্বক নিজের বলে দাবী করতেছে। এমনকি তার অত্যাচারে নিজের বসতঘর রেখে দু’মেয়েকে নিয়ে অন্যত্র ভাড়া থাকি। প্রশ্ন উঠে তার যদি বসতঘর থাকে, তাহলে ২০২১ সালের ২২ জুন বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল হইতে একখানা ঘর পাওয়ার আবেদন” কেন করেছিল রফিকুল আলম হারুনের স্ত্রী মাহেনুর রফিক। এক এক স্থানে এক এক রকম স্বাক্ষর করে এবং নয় ছয় কথা বলে রফিকুল আলম হারুন। আর মসজিদের নামে দেয়া ৫ শতাংশ জমি দেয়া হলেও তারা জালিয়াতি পূর্বক বাড়তি জমি দাবী করছে। যা সাব-রেজিষ্টার অফিসে খোঁজ নেলেই যে কেউ এর সত্যতা জানতে পারবে। মোট কথা হল, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের তাড়ানো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এবং নানাভাবে হয়রানি পূর্বক কার্যক্রম করছে। যাতে বিরক্ত হয়ে আমরা মা-মেয়ে এলাকায় না আসি বা থাকি। সবই তারা পরিকল্পিতভাবে করতেছে।
রফিকুল আলম হারুন বলেন, তিনি আগে ঢাকা থাকতেন। করোনার পর গ্রামের বাড়িতে এসেছে। তাকে শিরিন আক্তারের বক্তব্যে ও তথ্য উপস্থাপন করলে তিনি যুক্তিগত উত্তর দিতে পারেনি। তিনিও স্বীকার করেন বসতঘর তার ভাই শফিকুল আলমের। তবে তিনি তার ভাইকে টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন পরিস্কার তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি। তার সাথে যে কেউ এ বিষয়ে কথা বললে ঘটনাচক্রে ফুটে উঠবে তিনিই উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে যাচ্ছেন। তিনি শিরিন আক্তারের পারিবারিক জীবনের নানা ঘটনার বর্ণনা ব্যক্ত করতে আগ্রহী। বসতঘর যদি আপনার থাকে তাহলে ২০২১ সালের ২২ জুন বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল হইতে একখানা ঘর পাওয়ার আবেদন” কেন করেছিল আপনার স্ত্রী ? এর সঠিক জবাব দিতে পারেনি।
মসজিদের সভাপতি ও সম্পাদককে খোঁজা হলে মিন্টু তালুকদার বলেন, তারা পুরো ঘটনা জানে না। এবং মসজিদের ইমামও নতুন। আমি মসজিদ কমিটির লোক কি জানতে চান আমাকে বলুন। মিন্টু তালুকদার বলেন, মৃত শামসুল হোসেনের তিন ছেলে মসজিদের নামে ৫ শতাংশ জমি দেয়ার পরও পরবর্তীতে আবারো নতুন করে মসজিদের নামে বাড়তি কিছু জমি ওয়াফা করে দিয়েছে। যার প্রামাণ আছে। অথচ বাড়তি অংশটুকু মেনে নিতে চায় না মৃত শফিকুল আলমের স্ত্রীসহ দু’মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শফিকুল আলম মৃত্যুর পরই তার সম্পত্তির দখলের লোভে অন্ধ হয়ে গেছে তারই ভাই-বোন ও বোনের স্বামীরা। যার জন্য এলাকাজুড়ে মৃত শফিকুল আলমের স্ত্রীর নামে আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে। যাতে তারা এলাকায় না আসে। এমনকি তারা এলাকায় আসলেও তাদের নানা ভাবে হুমকি প্রদান করে তাদের রক্তের আত্মীয় স্বজনরা। শফিকুল আলমের নির্মাণ করা বসতঘরে উঠতে পারতেছে না তার সন্তানরা । যা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে রফিকুল আলম হারুন। তারা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নানা ভাবে অসহায় বিধবা নারী শিরিন আক্তার কেসহ পিতৃহারা দুই মেয়েকে হয়রানী করে যাচ্ছে। যাতে তারা রাগ ক্ষোভ ঘৃন্নায় এলাকায় না আসে। তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ন্যায্য বিচারের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় অধিকাংশ বাসিন্দা।