সারাদেশ

জনশুমারির মাঠ পর্যায়ের কমিটির সম্মানী ভাতা আত্মসাত করলেন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা

  প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৭:৩০:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

কুমিল্লা প্রতিনিধি।।কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা(অতিরিক্ত দায়িত্ব) জান্নাতুল বাকির বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাতের বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর এ সকল অনিয়মের প্রতিবাদ করলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিয়ে অফিসের কর্মকর্তাদের স্ট্যান্ড রিলিজ করিয়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লাকসাম উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জান্নাতুল বাকি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চলতি বছরের ২০ মার্চ চৌদ্দগ্রামে যোগদান করেন।

যোগদান করেই তিনি নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এরই মধ্যে সদ্য সমাপ্ত জনশুমারির সমন্বয় ও জোন কমিটির সম্মানী ভাতা না দিয়ে আত্মসাত করেছেন।

প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে, সরকার জনশুমারীর কাজ সঠিকভাবে তদারকি করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তাদেরকে নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি করে জোন কমিটি গঠন করে।

এ সকল কমিটিকে সম্মানী ভাতা হিসেবে ভ্যাট বাদে উপজেলা পর্যায়ে ৮৯০ টাকা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭২০ টাকা করে প্রদান করার কথা থাকলেও এসকল কর্মকর্তাদেরকে সম্মানী ভাতা প্রদান না করেই দুই লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করেন। এভাবে তিনি নাঙ্গলকোট, লালমাই, মনোহরগঞ্জ ও লাকসামের কর্মকর্তাদের টাকাও আত্মসাত করেছেন বলে জানা গেছে।

জোন কমিটির সাথে জড়িত বাতিসা মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছালেহ আহমেদ বলেন, আমি জনশুমারি কমিটির একজন সদস্য। শুনেছি আমাদের জন্য সরকার সম্মানী ভাতা ব্যবস্থা করেছেন। এখন পর্যন্ত আমরা কোন সম্মানী ভাতা পাইনি।

শ্রীপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবাদ মিয়া বলেন, আমি এ পর্যন্ত কোন সম্মানী ভাতা পাইনি। ওই ইউনিয়নের ভুমি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শুনেছি একটি সম্মানী ভাতা বরাদ্দ হয়েছে। অদ্যাবধি পর্যন্ত কোন সম্মানী ভাতা পাইনি।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, জান্নাতুল বাকি অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করার জন্য সরকারিভাবে মোটর সাইকেল ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও তিনি তা ব্যবহার না করেই জ¦ালানী তেলের জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেছেন। এরই মধ্যে তিনি মার্চ মাসে যোগদান করলেও ফেব্রুয়ারি মাসের জ¦ালানী তেলের বরাদ্দও তিনি তুলে নিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, তার এ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে অফিসের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ করলে তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিয়ে তাদেরকে অন্যস্থ বদলি করিয়ে নেন। জান্নাতুল বাকির অনিয়মের প্রতিবাদ করায় গত ৮ আগস্ট সোমবার আবু মুসা নামে এক জুনিয়র পরিসংখ্যান কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে আবু মুসার মুঠোফোনে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই, সময় করে আমার অফিসে আসলে বিস্তারিত আলাপ হবে। এছাড়া আমার স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি পরিসংখ্যান কর্মকর্তা বলতে পারবে’।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জান্নাতুল বাকি বলেন, জনশুমারির কোন টাকা আত্মসাত করা হয়নি। মন্ত্রণালয় চেক দিয়েছে, চেক অনুমোদন হওয়ার পরেই সকলকে টাকা প্রদান করা হবে। অফিসের বিবিধ খরচ ও মোটর সাইকেলের তেলের টাকা আত্মসাত সম্পর্কে বলেন, এ সম্পর্কে আপনাকে তথ্য দিতে বাধ্য নই। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলেই আমি আপনাকে তথ্য দিব।

আবু মুসার স্ট্যান্ড রিলিজ সম্পর্কে তিনি বলেন, রোববার আমার কাছে আবু মুসার বদলি সম্পর্কে একটি মেইল আসে এবং আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়-তাকে যেন সোমবার স্ট্যান্ড রিলিজ দেওয়া হয়। আমি শুধু উর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ পালন করেছি।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, আমি এ বিভাগে মাত্র যোগদান করেছি। এ আপনি প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেনের সাথে যোগযোগ করলে তিনি ভালো বলতে পারবেন।

প্রকল্প পরিচালক(জনশুমারি) দিলদার হোসেন বলেন, যদি কেউ জনশুমারি প্রকল্পের কাজে ব্যয়কৃত টাকা আত্মসাত করে, তাহলে সরকারি বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content