জাতীয়

ছোটমণি নিবাসের বেশির ভাগ শিশুর আইনি অভিভাবক নেই

  প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১১:২৬:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ময়মনসিংহে দুর্ঘটনার সময় সড়কে জন্ম নেওয়া শিশু ফাতেমাকে কয়েক মাসের মধ্যেই নিয়ে যেতে চান তার দাদা। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া অর্থসহায়তা দিয়ে পাকা ঘর তুলবেন তিনি। এরপর সেই ঘরে তুলতে চান নাতনিকে।

ছোট্ট ফাতেমা এখন রাজধানীর আজিমপুরে ছোটমণি নিবাসে। গত ২৯ জুলাই সেখানে তাকে রেখে যান দাদা মোস্তাফিজুর রহমান। ওই সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সরকার সব দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। নাতনির ভাত খাওয়ার বয়স হইলেই নিয়ে যাব। এখন আমার একটু সমস্যা চলছে।’

১৬ জুলাই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় নিহত হন শিশু ফাতেমার বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪২), মা রহিমা আক্তার ওরফে রত্না (৩২) ও বোন সানজিদা (৩)। মায়ের মৃত্যুর আগে সড়কেই জন্ম হয় ফাতেমার। তার বড় বোন জান্নাত (৮) ও ভাই এবাদুল্লাহ (৫) দাদা-দাদির সঙ্গে থাকে।

গত মঙ্গলবার দাদা মোস্তাফিজুর বলেন, নাতনির ভাত খাওয়ার বয়স পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন না। কয়েক মাসের মধ্যে বাড়িতে পাকা ঘর তুলে তাকে নিয়ে যাবেন।
রাজধানীর আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে ময়মনসিংহে সড়কে জন্ম নেওয়া শিশু ফাতেমা। গত শুক্রবার থেকে এই নিবাসের বাসিন্দা সে।

মোস্তাফিজুরের দুই ছেলে ছিল। ফাতেমার বাবা জাহাঙ্গীর দুর্ঘটনায় নিহত হন। আরেক ছেলে ১৩ বছর বয়সে মারা যায়। এখন তাঁর তিন মেয়ে আছে। গ্রামে তাঁর একটি চায়ের দোকান রয়েছে। টানাটানির সংসার আর চিকিৎসার কথা চিন্তা করে ফাতেমাকে ছোটমণি নিবাসে দিয়েছেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত ছোটমণি নিবাসে ফাতেমা এসেছে ১৫ দিন বয়সে। এখন বয়স দেড় মাস। সেখানে নবজাতক থেকে ৭ বছর বয়সী ২৮টি শিশুর সঙ্গে আছে ফাতেমা।

গতকাল দুপুরে ছোটমণি নিবাসে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা দোলনা ও বিছানায় সারিবদ্ধভাবে ঘুমাচ্ছে। জেগে রয়েছে কেবল তিনটি শিশু। তাদের একজন ফাতেমা। দোলনায় সে আপনমনে হাত-পা নাড়ছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়া ডান হাতে প্লাস্টার ছিল। এখন প্লাস্টার নেই।

ছোটমণি নিবাসের নার্স কাম মেট্রন তানিয়া সুলতানা বলেন, ৪ আগস্ট ফাতেমার হাতের প্লাস্টার খোলা হয়। হাতটি পুরোপুরি ঠিক হতে আরেকটু সময় লাগবে।

শিশুদের দেখভালে নিয়োজিত খালাম্মা সাবিরা বলেন, ফাতেমার খাওয়াদাওয়া, ঘুম সব ঠিক আছে। নিবাসের কর্মীরা বলেন, গত বুধবার তাকে দেখতে দাদা, বড় বোন ও ফুফু এসেছিলেন। ফাতেমার বোন যতক্ষণ ছিল, তাকে কোলে রেখেছিল।

মুঠোফোনে দাদা মোস্তাফিজুর বলেন, তিনি প্রতি সপ্তাহে নাতনিকে দেখতে আসেন। যতক্ষণ ইচ্ছা থাকতে পারেন। ফাতেমার ভাইবোন, দাদি, ফুফুরা সবাই দেখে গেছেন। দাদি সেলাই করা চারটি কাঁথা ও জামাকাপড় দিয়ে গেছেন।

অনেকে ফাতেমাকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গ টানলে মোস্তাফিজুর বলেন, ‘দত্তক দিতে চাই না। ফাতেমার ভাইবোন ওকে দেখলেই কাঁদে। ওকে নিজেদের কাছে রাখতে চাই। পাকা ঘর হলেই স্যারের (সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা) কাছে দরখাস্ত করব।’

সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ছোটমণি নিবাসের বেশির ভাগ শিশুর আইনি অভিভাবক নেই। এই শিশুর অভিভাবক তার দাদা। তিনি নাতনিকে পরিবারে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করলে সমাজসেবা অধিদপ্তর তাঁর আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করে শিশুটিকে হস্তান্তর করবে।

আরও খবর

Sponsered content