প্রতিনিধি ২ জুলাই ২০২২ , ১২:৪৪:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:- চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউপির আট নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার বাড়ির মনির আহমেদের চার মেয়ে। এর মধ্যে দ্বিতীয় আরিফা মনি ওরফে আনিকা। তিন মাস আগে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়েছিল রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউপির চার নম্বর ওয়ার্ডের মো. নাছির উদ্দিনের সঙ্গে। নাছির উদ্দিন পেশায় ফার্নিচার মিস্ত্রি।
পেশায় দিনমজুর মনির আহমেদের পক্ষে টাকা খরচ করে মেয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
বিয়ের পর থেকে বেশ ভালোভাবেই সংসার করছিলেন আনিকা। কিন্তু এর মধ্যেই আসে তার আত্মহত্যার খবর। বৃহস্পতিবার সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে আনিকার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পক্ষ থেকে এটিকে আত্মহত্যা বলা হলেও আনিকার স্বজনদের দাবি- কোরবানির ঈদে ছাগল দাবি করেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ছাগল না পেয়ে তারা পরিকল্পিতভাবে আনিকাকে হত্যা করেন।
আনিকার চাচাতো ভাই মো. বাদশা বলেন, বড় আব্বুর চার মেয়ে। কোনো ছেলে সন্তান নেই। দিনমজুরের কাজ করে মেয়ে বিয়ে দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এলাকার মানুষের সহযোগিতায় তিন লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে দেওয়া হয়। সামনে কোরবানির ঈদ, তাই আনিকার শ্বশুরবাড়ি থেকে ছাগল দাবি করা হয়েছিল। সামর্থ্য না থাকায় দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন বড় আব্বু। কিন্তু কিন্তু তারা এ বছর না দিলে আগামী বছর হলেও দিতে বলেন। এতেও বড় আব্বু রাজি হননি। এর জের ধরে তারা আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। পরে আমাদের কাছে সে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দেয়। আমরা গিয়ে তার লাশ নিচে নামানো অবস্থায় পাই। তার কানে-নাকে ছিল রক্ত। আমরা এটির সঠিক তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তি চাই।
নিহতের স্বামী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, চার-পাঁচদিন আগে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আম-কাঠাল নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। চলে যাওয়ার সময় আমার শাশুড়ি কি যেন নিয়ে আমার মাকে গালাগালি ও আনিকাকে বকাবকি করেন। এর পর থেকেই আনিকা তার বাবার বাড়ির কারো ফোন আসলে রিসিভ করতো না। শুনেছি আনিকা ফোন করে আম-কাঁঠাল নিয়ে আসতে বলায় তার মা এমন করেছিলেন। তবে আমরা কেউ তাকে আম-কাঁঠালের কথা বলিনি। সে নিজেই বাড়িতে ফোন করে।
নাছির আরো বলেন, বাড়িতে যোগাযোগ না রাখলেও আমাদের সঙ্গে হাসিখুশিতেই ছিল আনিকা। ঘটনার দিন আমি ঘুমে ছিলাম। সকাল ৭টার দিকে আমার মা ও ভাবিদের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি- অন্য একটি রুমে ঘরের বিমের সঙ্গে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলে আছে আনিকার লাশ। সে বেঁচে আছে ভেবে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লাশ নামানোর পর দেখি মারা গেছে। পরে পুলিশকে জানালে তারা এসে লাশটি নিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর কেউ কেউ বলছেন কোরবানির ছাগল নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল দুই পরিবারের মধ্যে। আবার কেউ বলছেন মৌসুমি ফল নিয়ে দ্বন্দ্ব। আসলে সঠিক বিষয়টি তদন্ত করলে জানা যাবে।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মাহবুব মিল্কী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে সেটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে জেনেছি। লাশের শরীরেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।