রাজনীতি

রাষ্ট্র বনাম ন্যায়বিচার: তারেক রহমানের ১৭ বছরের নির্বাসন ও রাষ্ট্রীয় বিতর্ক

  প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১১:৫১:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।২৫ ডিসেম্বর ২০২৫—১৭ বছরের নির্বাসনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরেছেন।তবে এই প্রত্যাবর্তন শুধুই রাজনৈতিক নয়; এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা,রাষ্ট্রীয় নীতি এবং সংবিধানকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।আমরা এই প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট মামলার বিশ্লেষণ,রাষ্ট্রপতির আদেশের বৈধতা এবং ন্যায়বিচারের অবক্ষয় অনুসন্ধান করেছি।

১. নির্দিষ্ট মামলা ও রায় বিশ্লেষণ

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মোট ৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।তাদের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ:

১. মামলা #৬৭/২০০৭ – অর্থপাচার ও জালিয়াতি মামলা

আদালতের রায়: দীর্ঘতম বিবেচনার পর ২০১৮ সালে স্থগিত ঘোষণা।

বিচার বিশ্লেষণ: মামলাটি জামিনের আগে দীর্ঘ সময় স্থগিত ছিল; রাষ্ট্র মামলা কার্যকর করতে ব্যর্থ।

২. মামলা #২২/২০০৮ – রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও সরকারি অর্থ অনিয়ম

আদালতের অবস্থান: বিদেশে থাকার কারণে অব্যাহতি।

আইনি প্রশ্ন: CrPC ধারা ৩২০ অনুযায়ী জেল হেফাজতের বাইরে থাকা আসামি বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও রাষ্ট্র ব্যর্থ।

৩. মামলা #৪১/২০০৯ – সম্পত্তি লঙ্ঘন ও দুর্নীতি

রায়: রাষ্ট্রপতির দয়াকেন্দ্রিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ‘খালাস’।

আইনি বিশ্লেষণ: আদালতের কার্যকারিতা এভাবে রাষ্ট্রপতির আদেশে সীমিত করা সংবিধানের ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন।

> এই মামলাগুলোর প্যাটার্ন দেখায় যে,রাষ্ট্র দীর্ঘ সময় মামলা চলমান রাখার পরও হঠাৎ রাজনৈতিক সুবিধার জন্য খালাস দিয়েছে।

২. রাষ্ট্রপতির আদেশ: সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ

গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে তারেক রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে।কিন্তু এই হস্তক্ষেপের সাংবিধানিক সীমা কী?

সংবিধান ৪৯ অনুচ্ছেদ: রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা প্রদানের ক্ষমতা দেয়—সাজা মওকুফ,কিন্তু বিচারিক ‘খালাস’ নয়।

সাংবিধানিক প্রশ্ন:

রাষ্ট্রপতি কি বিচার বিভাগের নিরপেক্ষ রায়কে প্রভাবিত করতে পারেন?

যদি পারেন, তাহলে ‘ক্ষমতার বিভাজন নীতি’ (Separation of Powers) ভেঙে যায়।

আইন বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন,

> “যদি রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারেন,তাহলে এটি একপ্রকার রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থার আত্মহত্যা।”

৩. রাষ্ট্র বনাম ন্যায়বিচার: বড় প্রশ্ন

তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন নিম্নলিখিত গুরুতর ন্যায়বিচারের প্রশ্ন তোলে:

১. বিচারের দীর্ঘ বিলম্ব: ১৭ বছর ধরে বিচার না হওয়া মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন (সংবিধান অনুচ্ছেদ ৩১, ৩৫)।

২. বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি শূন্যীকরণ: বিএনপির নেতৃত্বহীন দশক,রাজনৈতিক বিচারবহির্ভূত ক্ষমতার ব্যবহার।

৩. বিশেষ সুবিধা বনাম সাধারণ নাগরিক: রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ও নিরাপত্তার সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের সমতা প্রশ্নবিদ্ধ।

৪. আইন এবং সংবিধানের অপব্যবহার: সাজা মওকুফ বনাম খালাস,রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ বনাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।

> সংক্ষেপে,এই ঘটনা কোনো ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন নয়; এটি রাষ্ট্র বনাম ন্যায়বিচার এর পরীক্ষা,যেখানে রাষ্ট্র নিজের আইন ও সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

৪. অনুসন্ধানী উপসংহার

আইনগত ব্যর্থতা: রাষ্ট্র ১৭ বছরের মামলাগুলো কার্যকর করতে ব্যর্থ।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: রাষ্ট্রপতির খালাস আদেশ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সমতার ভঙ্গ: সাধারণ নাগরিক বনাম প্রভাবশালী রাজনীতিকদের জন্য আইনের প্রয়োগের দ্বৈত মানদণ্ড স্পষ্ট।

ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত: যদি এমন precedents চালু থাকে, দেশের ন্যায়বিচার ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হবে।

> এটি রাষ্ট্রের জন্য শিখার মুহূর্ত—ব্যক্তি নয়,ন্যায়বিচারকে ক্ষমতার ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি।

আরও খবর

Sponsered content