প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১১:১৪:০২ প্রিন্ট সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি।।একজন আইনজীবী—যার কাজ ন্যায়বিচার রক্ষা করা।আর সেই আইনজীবীই যদি আইনের ফাঁক, রাজনৈতিক পরিচয় ও সামাজিক প্রভাবকে অস্ত্র বানিয়ে একটি গৃহবধূর জীবনকে ধ্বংস করে দেয়—তবে প্রশ্ন উঠে যায়,আইন আসলে কার জন্য?

চাঁদপুরে চাঁদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এইচ এম হেলাল ওরফে আইটি হেলালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কেবল একটি ধর্ষণ মামলা নয়; এটি আইন,রাজনীতি ও ক্ষমতার ভয়ঙ্কর অপব্যবহারের প্রতিচ্ছবি।
ক্ষমতার ছদ্মবেশে শিকার বানানোর নীলনকশা
ভুক্তভোগী তাছলিমা (ছদ্দনাম),দুই সন্তানের জননী। অভিযোগ অনুযায়ী—
অভিযুক্ত নিজেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা পরিচয়ে পরিচিত করে রাজনৈতিক প্রভাব দেখান
পারিবারিক ভাঙনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে
ভিকটিমের স্বামীকে জোরপূর্বক তালাক দিতে বাধ্য করেন
বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া করেন
এবং টানা চার মাস ধরে যৌন নিপীড়ন চালান
এটি কোনো “সম্পর্ক” নয়,এটি ছিল একটি পরিকল্পিত শোষণ।
হত্যা সাজিয়ে আত্মহত্যা: অপরাধের ভয়াবহ স্তর
ভুক্তভোগীর বর্ণনা অনুযায়ী, সর্বশেষ অভিযুক্ত তাকে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
এটি প্রমাণিত হলে ঘটনাটি আর শুধু ধর্ষণে সীমাবদ্ধ থাকে না—এটি সরাসরি হত্যাচেষ্টার মামলা।
ডিবি ও মডেল থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও অভিযুক্তকে আটক করা না হলে, হয়তো আরেকটি “রহস্যজনক আত্মহত্যা” হিসেবেই ঘটনাটি চাপা পড়ে যেত।
আইনি বিশ্লেষণ: এখানে একাধিক গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে
🔴 ১. ধর্ষণ (দণ্ডবিধি ৩৭৬)
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের স্থির অবস্থান—
বিয়ের মিথ্যা আশ্বাসে সম্মতি আদায় মানেই সম্মতি নয়।
এই কারণে দীর্ঘ সময় ধরে যৌন সম্পর্ক হলেও তা আইনত ধর্ষণ।
🔴 ২. প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গ (ধারা ৪২০)
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিকটিমের দাম্পত্য জীবন ধ্বংস করা সরাসরি প্রতারণা।
🔴 ৩. জোরপূর্বক তালাক করানো
এটি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র,ভয়ভীতি ও মানসিক নির্যাতন—যার আওতায় ১০৯/৩৪ ধারা প্রযোজ্য হতে পারে।
🔴 ৪. হত্যাচেষ্টা ও আলামত নষ্টের চেষ্টা
৩০৭ ধারা: হত্যাচেষ্টা
২০১ ধারা: অপরাধ ঢাকতে আলামত নষ্ট
🔴 ৫. আইনজীবীর পেশাগত অপরাধ
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বিধিমালা অনুযায়ী—
লাইসেন্স স্থগিত
স্থায়ী বহিষ্কার
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা—সবই আইনি ভাবে বাধ্যতামূলক
এই মামলায় বার কাউন্সিল যদি নীরব থাকে,তবে সেটিও হবে আরেকটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা।
মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ: এটি শুধু এক নারীর কাহিনি নয়
এই ঘটনা সরাসরি লঙ্ঘন করেছে—
সংবিধানের ২৭ ও ৩২ অনুচ্ছেদ (সমতা ও জীবনের নিরাপত্তা)
CEDAW (নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ)
মানব মর্যাদার মৌলিক অধিকার
একজন নারীকে তার দাম্পত্য সম্পর্ক,শরীর ও জীবন নিয়ে জিম্মি করা রাষ্ট্রের চোখে একটি মানবাধিকার সংকট।
রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য কঠিন প্রশ্ন
❓ অভিযুক্ত যদি আইনজীবী না হতেন, তাহলে কি এতদিন অপরাধ চালাতে পারতেন?
❓ রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলে কি ভিকটিম এতটা অসহায় হতেন?
❓ আইন কি এখনও প্রভাবশালীদের ঢাল?
শেষ কথা: এই মামলা নজির হতে হবে
এই মামলা যদি “মীমাংসা”, “চাপ” বা “প্রভাব”-এ থেমে যায়, তবে— আরও অনেক তাছলিমা নীরবে নিঃশেষ হয়ে যাবে।

















