অপরাধ-আইন-আদালত

ক্ষমতার ছায়ায় প্রতিশোধের রাজনীতি:একের পর এক মিথ্যা মামলায় বিপর্যস্ত এএসপি আসিফ আল হাসান—আইনের শাসন কোথায়?

  প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৮:২৩:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

ক্ষমতার ছায়ায় প্রতিশোধের রাজনীতি:একের পর এক মিথ্যা মামলায় বিপর্যস্ত এএসপি আসিফ আল হাসান—আইনের শাসন কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর একজন তরুণ কর্মকর্তা—৩৮তম বিসিএসের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আসিফ আল হাসান।অথচ আজ তিনি ও তার পরিবার কার্যত অসহায়—আইনের আশ্রয় নিয়েও ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।ডিভোর্সের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রতিহিংসাপরায়ণভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন থানায় একের পর এক সাজানো ও মিথ্যা মামলায় তাকে জড়িয়ে হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছেন তার সাবেক স্ত্রী সুবর্ণা সুলতানা সুমী—এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের ধরন,মামলার ধারাবাহিকতা ও পুলিশের ভূমিকা দেখে প্রশ্ন উঠছে—
👉 এটি কি ব্যক্তিগত বিরোধ,নাকি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ছত্রছায়ায় সংগঠিত নিপীড়ন?

বিয়ের শুরু,ভাঙনের বীজ

২০২১ সালের ৪ মার্চ আসিফ আল হাসানের সঙ্গে সুবর্ণা সুলতানা সুমীর বিয়ে হয়।পারিবারিক সূত্র জানায়,বিয়ের এক মাস না যেতেই দাম্পত্য জীবনে অশান্তি চরমে ওঠে।একটি হোটেলে অবস্থানকালে সুমীর মোবাইলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আপত্তিকর কথোপকথনের আলামত পাওয়ার পর ডিভোর্সের প্রস্তাব সুমী নিজেই দেন—এমন দাবি আসিফের পরিবারের।

পরবর্তীতে আসিফ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণে থাকাকালে সুমী সরকারি বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান এবং নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে বসবাস শুরু করেন বলে অভিযোগ।

পুলিশ প্রশাসনে অবাধ যাতায়াত ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ

প্রশিক্ষণ শেষে আসিফ ডিএমপিতে পদায়িত হলে অভিযোগ ওঠে—
🔴 সুমী বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন
🔴 আসিফের অনুমতি ছাড়াই বদলি ও সরকারি বাসস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করেন
🔴 একাধিকবার আসিফকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিব্রত হতে হয়

পরিবারের দাবি,এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললে সুমী চাকরি শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিতেন।

ডিভোর্সের আগেই মামলা-নাটক

২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর সুমী নিজেকে এএসপির স্ত্রী পরিচয়ে পল্লবী থানায় একটি জিডি (নং-৪০৫) করেন।তদন্তে ওই জিডির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।বরং বেরিয়ে আসে—
➡️ অভিযোগের ব্যক্তিকে সুমী নিজেই একাধিকবার ফোন করেছিলেন
➡️ একজন পুলিশ সুপারকে জড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

৯ নভেম্বর পারিবারিক বৈঠকে ডিভোর্সে সম্মতি দিলেও পরদিনই পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অভিযোগ,এরপর ২৪ নভেম্বর পুনরায় একই অভিযোগ।অবশেষে ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ডিভোর্স কার্যকর হয়।

ডিভোর্সের পর শুরু হয় ‘মামলা সন্ত্রাস’

ডিভোর্সের পর সুমী এক কোটি টাকা দাবি করেন—না দিলে মামলা করে চাকরি শেষ করে দেবেন বলে হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

➡️ ১ জানুয়ারি ২০২৫ শাহজাহানপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা
➡️ সেদিনই পুলিশের উপস্থিতিতে ১৪ লাখ টাকার মালামাল সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
➡️ ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন
➡️ পরদিন হাতিরঝিল থানায় মারধর ও চাঁদাবাজির জিডি—তদন্তে মিথ্যা
➡️ কোতোয়ালি থানায় জিডির ভিত্তিতে বিতর্কিত চার্জশিট
➡️ গাজীপুরে ধর্ষণ মামলার চেষ্টা—প্রাথমিক তদন্তে ভিত্তিহীন
➡️ সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ রাজশাহীতে তিন বছরের পুরোনো ঘটনায় মামলা

অথচ বহু ঘটনায় আসিফের মোবাইল লোকেশন ঘটনাস্থলে না থাকার প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে।

আইনি বিশ্লেষণ: এখানে আইনের গুরুতর ব্যত্যয় ঘটছে

আইনজ্ঞদের মতে—

🔴 নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ব্যক্তিগত প্রতিশোধের অস্ত্র হতে পারে না
🔴 একই ঘটনার পুনরাবৃত্ত অভিযোগ ও ভিন্ন ভিন্ন থানায় মামলা আইনের অপব্যবহার
🔴 তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত জিডি ও অভিযোগে ব্যবস্থা না নেওয়া দায়িত্বে অবহেলা
🔴 মোবাইল লোকেশন, অডিও ক্লিপ উপেক্ষা করে চার্জশিট দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থী

আইন বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “এ ধরনের মামলা-চাপ আইনের শাসনের কফিনে শেষ পেরেক।”

ভিডিও ক্লিপ ও ভয়ংকর বার্তা

প্রতিবেদকের কাছে আসা একটি ভিডিওতে সুমীকে বলতে শোনা যায়—“আমার কাছে আইজি স্যারসহ সবার নাম্বার আছে।আমি এখনই মামলা রেকর্ড করাবো।”

যদি এই বক্তব্য সত্য হয়,তবে প্রশ্ন উঠছে—
👉 আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভেতর কি অদৃশ্য ছায়া-ক্ষমতা কাজ করছে?

পাল্টা বক্তব্য

সুবর্ণা সুলতানা সুমী বলেন,“আসিফ আমার হাজব্যান্ড।আমি তাকে চিনি।পুলিশ যাচাই করেই মামলা নিয়েছে।”

আইজিপির প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন,“আমি কখনো আইজিপি স্যারের প্রভাব খাটাইনি।”

তবে ভিডিও ক্লিপ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।

শেষ প্রশ্ন

যে পুলিশ কর্মকর্তা জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার শপথ নিয়েছেন—তিনি যদি নিজেই মিথ্যা মামলার চক্রে পড়ে নিঃস্ব হন,ক্যান্সার আক্রান্ত পিতাকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার না পান—

👉 তাহলে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা কোথায়?

এই মামলাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এটি শুধু একজন কর্মকর্তার নয়—
পুরো বিচার ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত।

আরও খবর

Sponsered content