প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ২:৩০:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।গত মাসের শেষের দিকে ঘটে যাওয়া ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে নতুন করে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর ও বিস্ফোরক অভিযোগ।বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে জানা গেছে,হত্যাকাণ্ডের আগে একটি পরিকল্পিত পরিচয়পর্ব,এরপর রাজনৈতিক আশ্বাস, আর সবশেষে রক্তক্ষয়ী পরিণতি—এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ এখন নতুন করে তদন্তের দাবি তুলছে।

পরিচয়ের সূত্র: মির্জা ইয়াসীর আব্বাস ও ‘খুনি’ ফয়সাল
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের দাবি অনুযায়ী,গত মাসের শেষের দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ছেলে মির্জা ইয়াসীর আব্বাস ওসমান হাদির সঙ্গে ফয়সাল করীম মাসুদ নামে এক ব্যক্তির পরিচয় করিয়ে দেন।এই ফয়সালকেই পরবর্তীতে হাদির হত্যার সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট মহল।
সূত্র জানায়,ওই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—
> “নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।”
পরিচয়টি আসে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও পরিচিত সূত্রের মাধ্যমে হওয়ায় হাদির মনে তেমন কোনো সন্দেহ তৈরি হয়নি বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে কেন মির্জা আব্বাস?
গোয়েন্দা সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী,হাদির জনপ্রিয়তা স্থানীয় রাজনীতিতে দ্রুত বাড়ছিল।এই অবস্থায় বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতার পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছিল—এমন অভিযোগও তদন্তে উঠে এসেছে।
একাধিক সূত্রের দাবি,
হাদির জনপ্রিয়তা রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে
এরপরই তাঁকে ঘিরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়
হত্যাকাণ্ডের সময় ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ মিলিয়ে দেখলে বিষয়টি আরও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে
তবে এসব অভিযোগ এখনো আদালতে প্রমাণিত নয়—এ কথা তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও স্বীকার করছেন।
‘এনকাউন্টার’ নাকি বিচার?—নতুন শঙ্কা
সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগগুলোর একটি হলো—
> হাদির কথিত হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের বদলে ‘এনকাউন্টার’-এ হত্যা করার পরিকল্পনা করা হতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানে আসামি কোথায় আছে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত অভিযান হয়নি। প্রশ্ন উঠছে—
👉 এটি কি সময়ক্ষেপণ,নাকি প্রমাণ চাপা দেওয়ার কৌশল?
এই অভিযোগের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুক্ত করা হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণাকে। কিছু বিশ্লেষকের মতে,
> “খুনি জীবিত থাকলে অনেক অস্বস্তিকর তথ্য প্রকাশের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”
১২৭ কোটি টাকা ও ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট—অর্থপ্রবাহের রহস্য
গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে আরও জানা গেছে,
ফয়সাল করীম মাসুদের নামে ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
এসব অ্যাকাউন্টে ১২৭ কোটি টাকার ৫৩টি লেনদেন
লেনদেনের বড় একটি অংশ চেকের মাধ্যমে
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মধ্যে কয়েকটি মির্জা আব্বাসের মালিকানাধীন বা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বলে দাবি
এই অর্থপ্রবাহ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও অর্থনৈতিক যোগসূত্র খুঁজতে তদন্তকারীদের নতুন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে।
আইনি বিশ্লেষণ: অভিযোগ সত্য হলে কী দাঁড়ায়?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে,এসব অভিযোগ যদি প্রাথমিক তদন্তেও সত্য প্রমাণিত হয়,তাহলে সম্ভাব্য অপরাধগুলো হতে পারে—
দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪: পরিকল্পিত হত্যা
দণ্ডবিধি ১০৯: হত্যায় প্ররোচনা
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন: সন্দেহজনক অর্থপ্রবাহ
সন্ত্রাসবিরোধী আইন: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংসতা
ফৌজদারি ষড়যন্ত্র: সংগঠিত অপরাধের অভিযোগ
একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মন্তব্য,
> “এনকাউন্টার হলে তা বিচারিক সত্যকে চিরতরে হত্যা করবে। আইনের শাসনের স্বার্থে গ্রেপ্তার ও স্বচ্ছ বিচারই একমাত্র পথ।”
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক,জামিন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
এদিকে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদককে ঘিরেও প্রশ্ন উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে,
বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি মামলার আসামি
অস্ত্রধারী শুটারদের জামিনে সহায়তার অভিযোগ
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলার গতিপথ প্রভাবিত করার অভিযোগ
দলটির ভেতরেই এ নিয়ে অস্বস্তি ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি ব্যক্তিগত অপরাধ নয়—এটি এখন
➡️ রাজনীতি
➡️ অর্থ
➡️ ক্ষমতা
➡️ বিচার ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা
এই চারটির সংঘাতের প্রতীক হয়ে উঠছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত ব্যাহত হয়, তাহলে তা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আইনের শাসনের জন্য ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
উপসংহার: প্রশ্নগুলো রয়ে গেল
হাদির হত্যার পেছনে কি সত্যিই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে?
অর্থপ্রবাহের উৎস কারা?
আসামিকে কেন এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি?
‘এনকাউন্টার’ কি প্রমাণ লোপাটের পথ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখন রাষ্ট্র,তদন্ত সংস্থা ও বিচার ব্যবস্থার ওপর।

















