প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১:২৪:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে তদন্তে যে তথ্যগুলো ধীরে ধীরে সামনে আসছে,তা একটি সাধারণ খুনের বয়ানকে ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র,অর্থপ্রবাহ ও প্রভাব খাটানোর ভয়াবহ ইঙ্গিত দিচ্ছে।গোয়েন্দা নথি ও বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের দাবি অনুযায়ী,হত্যার আগে পরিকল্পিত পরিচয়,পরে অর্থনৈতিক লেনদেনের ট্রেইল,আর শেষে গ্রেপ্তার না করে ‘এনকাউন্টার’-এর শঙ্কা—সব মিলিয়ে মামলা এখন রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতার পরীক্ষায় দাঁড়িয়েছে।

নথিভিত্তিক অভিযোগ ১: পরিচয়পর্ব—কে করাল,কেন করাল?
গোয়েন্দা নথিতে উল্লেখ আছে বলে সূত্রের দাবি,গত মাসের শেষদিকে মির্জা ইয়াসীর আব্বাস (বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের পুত্র) ফয়সাল করীম মাসুদকে ওসমান হাদির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।পরিচয়ের সময় নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে ‘সর্বোচ্চ সহযোগিতা’ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়—এমন বক্তব্যও নথিতে উদ্ধৃত বলে দাবি।
> প্রশ্ন: একটি রাজনৈতিক আশ্বাস কি পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের পথ প্রশস্ত করেছিল?
সূত্র বলছে,পরিচয়টি আসে প্রভাবশালী ও বিশ্বাসযোগ্য চ্যানেল দিয়ে হওয়ায় হাদির মনে তৎক্ষণাৎ সন্দেহ তৈরি হয়নি।
নথিভিত্তিক অভিযোগ ২: জনপ্রিয়তা বনাম ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি,স্থানীয় রাজনীতিতে হাদির জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছিল।নথিতে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার চাপ এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বের উল্লেখ রয়েছে—যা হত্যার সম্ভাব্য মোটিভ হিসেবে বিবেচনায় এসেছে।
> প্রশ্ন: জনপ্রিয়তার এই উত্থানই কি তাকে টার্গেটে পরিণত করেছিল?
নথিভিত্তিক অভিযোগ ৩: অর্থপ্রবাহ—১৪ অ্যাকাউন্ট,১২৭ কোটি,৫৩ লেনদেন
সবচেয়ে গুরুতর তথ্যটি এসেছে অর্থনৈতিক ট্রেইল থেকে। গোয়েন্দা নথির বরাতে সূত্রের দাবি—
ফয়সাল করীম মাসুদের নামে ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
১২৭ কোটি টাকা সমপরিমাণ ৫৩টি লেনদেন
লেনদেনের বড় অংশ চেকের মাধ্যমে
কয়েকটি লেনদেন মির্জা আব্বাসের মালিকানাধীন/সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত—এমন তথ্য নথিতে উল্লেখ আছে বলে দাবি
> প্রশ্ন: এই টাকার উৎস কী,উদ্দেশ্য কী,এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এর যোগসূত্র কোথায়?
নথিভিত্তিক অভিযোগ ৪: গ্রেপ্তার নয়—‘এনকাউন্টার’?
তদন্তে আরেকটি ভয়ংকর শঙ্কা উঠে এসেছে।সূত্রের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসামির অবস্থান জানে,তবু গ্রেপ্তার বিলম্বিত।এর বিপরীতে ‘এনকাউন্টার’-এর আশঙ্কা নিয়ে নথিতে উদ্বেগ নোট করা হয়েছে বলে দাবি।
> প্রশ্ন: খুনি জীবিত থাকলে কি অস্বস্তিকর সত্য বেরিয়ে আসার ঝুঁকি আছে?
এই প্রশ্নটি আরও তীব্র হয়,যখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণার সময়রেখা তদন্তের টাইমলাইনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়—এ কথা বিশ্লেষকদের।
আইনি বিশ্লেষণ (নথিভিত্তিক)
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এই নথিভিত্তিক অভিযোগগুলো যদি প্রাথমিক তদন্তেও সত্যতা পায়,তাহলে সম্ভাব্য আইনি ধারা হতে পারে—
দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪: পরিকল্পিত হত্যা
দণ্ডবিধি ১০৯: প্ররোচনা
দণ্ডবিধি ১২০বি: ফৌজদারি ষড়যন্ত্র
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন: সন্দেহজনক অর্থপ্রবাহ
সন্ত্রাসবিরোধী আইন,২০০৯: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংসতা
ফৌজদারি কার্যবিধি: আসামিকে জীবিত গ্রেপ্তার করে জবানবন্দি গ্রহণের বাধ্যবাধকতা
একজন সিনিয়র আইনজীবীর মন্তব্য:
> “এনকাউন্টার হলে সেটি কেবল একটি জীবন নয়—পুরো মামলার সত্যকে হত্যা করবে।আইনের শাসন মানে গ্রেপ্তার, রিমান্ড,নথি যাচাই ও খোলা আদালতে বিচার।”
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক—চাঁদাবাজি ও অস্ত্র মামলার জামিন প্রশ্ন
নথিভিত্তিক অনুসন্ধানে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে—
চাঁদাবাজি মামলার আসামিদের আইনি সহায়তা
অস্ত্রধারী শুটারদের জামিনে ভূমিকা—এমন অভিযোগ নথিতে উল্লেখ আছে বলে দাবি
> প্রশ্ন: দলীয় প্রভাব কি বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে?
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট: বিচার না ‘ম্যানেজমেন্ট’?
এই মামলা এখন কেবল হাদি হত্যার নয়—এটি বিচারব্যবস্থা বনাম রাজনৈতিক ম্যানেজমেন্ট-এর লড়াই।
গ্রেপ্তার,আর্থিক নথি সিল,ব্যাংকিং ফরেনসিক,কল ডিটেইল রেকর্ড—সবকিছু খোলা তদন্তে না গেলে রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।
উপসংহার: রাষ্ট্রের কাছে পাঁচ দফা প্রশ্ন
১) আসামিকে জীবিত গ্রেপ্তার কবে?
২) ১৪ অ্যাকাউন্টের ফরেনসিক অডিট কবে প্রকাশ?
৩) পরিচয় করানো ব্যক্তিদের জবানবন্দি কবে?
৪) ‘এনকাউন্টার’ নয়—খোলা আদালতে বিচার হবে তো?
৫) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হবে কি?
উত্তর না এলে,এই নথিই সাক্ষ্য দেবে—কে বিচার চেয়েছিল, আর কে সত্য চাপা দিতে চেয়েছিল।

















