জাতীয়

কোটি টাকা চাঁদা, চাকরিচ্যুতির আল্টিমেটাম ও অগ্নিসংযোগের হুমকিঃ-স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর সন্ত্রাসী চাপ?

  প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১২:৫৪:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য আরেকটি ভয়ংকর বার্তা হয়ে এসেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গ্লোবাল টিভিকে ঘিরে ওঠা সাম্প্রতিক অভিযোগ।চ্যানেলটির কর্তৃপক্ষের কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি,বার্তা প্রধান নাজনীন মুন্নীকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি,এমনকি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত নেতা রিফাত রশীদের বিরুদ্ধে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র,প্রত্যক্ষদর্শী ও চ্যানেল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে—এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়;বরং পরিকল্পিতভাবে একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে ভয়,চাপ ও অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা।

কীভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে

গ্লোবাল টিভি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অনুযায়ী,সম্প্রতি রিফাত রশীদ ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন তরুণ চ্যানেলটির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন।সেখানে তাঁরা বার্তা প্রধান নাজনীন মুন্নীকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার আল্টিমেটাম দেন।একইসঙ্গে জানিয়ে দেন—এই দাবি মানা না হলে ১ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,

> “এটি ছিল সরাসরি হুমকি।বলা হয়েছে—নাজনীন মুন্নীকে সরানো না হলে বা টাকা না দিলে অফিসে আগুন দেওয়া হবে।১৮ ডিসেম্বর প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ওপর হামলার উদাহরণ টেনে আমাদের ভয় দেখানো হয়।”

‘১৮ ডিসেম্বর’—ভীতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত

১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে একটি ভয়ংকর নজির। গ্লোবাল টিভি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ,সেই ঘটনাকে সামনে এনে তাঁদের বলা হয়েছে—“ওই পরিণতিই হবে গ্লোবাল টিভির”।

এই হুমকির পর চ্যানেলটির সাংবাদিক,ক্যামেরাপারসন ও সাধারণ কর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

টার্গেট কেন নাজনীন মুন্নী

চ্যানেলটির সাংবাদিকদের ভাষ্য,নাজনীন মুন্নী একজন পেশাদার সংবাদকর্মী। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, তদন্ত প্রতিবেদন বা প্রমাণ নেই।কেবলমাত্র ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ তকমা দিয়ে তাঁকে সরাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে—যা স্পষ্টতই চরিত্র হনন ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের চেষ্টা।

গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা বলছেন,সাম্প্রতিক সময়ে একটি নির্দিষ্ট কৌশল দেখা যাচ্ছে—
➡️ আগে ‘দোসর’ ট্যাগ
➡️ তারপর হুমকি
➡️ এরপর অর্থ বা পদত্যাগের চাপ
➡️ না মানলে হামলা

আইনি বিশ্লেষণ: একাধিক গুরুতর অপরাধ

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে,অভিযোগগুলো সত্য হলে এতে একাধিক ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে:

দণ্ডবিধি ৩৮৫/৩৮৬ ধারা: ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় (Extortion)

দণ্ডবিধি ৫০৬ ধারা: ফৌজদারি হুমকি

দণ্ডবিধি ৪৪১–৪৪৭ ধারা: অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অপরাধমূলক চাপ

সন্ত্রাসবিরোধী আইন,২০০৯: ভয় সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো

সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ: মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সরাসরি লঙ্ঘন

একজন সিনিয়র আইনজীবীর ভাষায়,

> “এটি শুধু চাঁদাবাজি নয়,এটি মিডিয়া সন্ত্রাস। রাষ্ট্র যদি কঠোরভাবে ব্যবস্থা না নেয়,তাহলে প্রতিটি মিডিয়া হাউস ঝুঁকিতে পড়বে।”

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট

৫ আগস্টের পর দেশে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও বাস্তবে উল্টো চিত্র ফুটে উঠছে।ছাত্র আন্দোলনের কিছু অংশের নাম ব্যবহার করে বা সরাসরি নেতাদের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ,ভীতি ও অর্থনৈতিক চাপে রাখার অভিযোগ বাড়ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা আগেও বলেছেন—সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে সংগঠন দায় নেবে না।কিন্তু যখন অভিযোগ সরাসরি পরিচিত নেতার বিরুদ্ধে, তখন সেই বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য—তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।

অভিযুক্তের বক্তব্য নেই,প্রশ্ন থেকেই যায়

এই গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে রিফাত রশীদের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।তবে নীরবতাও এই মুহূর্তে জনমনে সন্দেহ আরও গভীর করছে।

উপসংহার

গ্লোবাল টিভির ঘটনা একক নয়—এটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভয়ংকর সতর্কবার্তা।আজ যদি একটি টিভি চ্যানেলকে এভাবে হুমকি দেওয়া যায়,কাল যে কোনো সংবাদপত্র বা সাংবাদিকই টার্গেট হতে পারে।

প্রশ্ন এখন একটাই—
👉 রাষ্ট্র কি স্বাধীন গণমাধ্যমের পাশে দাঁড়াবে,নাকি ভয় ও চাঁদার রাজনীতি আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে?

আরও খবর

Sponsered content

আরও খবর: জাতীয়

২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অস্থিরতা: সম্ভাবনা ও আইনি-বৈধতার প্রশ্ন

ক্ষমতার অদৃশ্য যুদ্ধ: তারেক রহমানের এসএসএফ নিরাপত্তা, খলিলুর রহমানকে আটকাল সেনাবাহিনী

সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান-যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের চিঠি

কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা ঝুঁকির মুখে

ভারতের এজেন্ট খলিলুর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হতে পারে: দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ

কোটি টাকা চাঁদা, চাকরিচ্যুতির আল্টিমেটাম ও অগ্নিসংযোগের হুমকিঃ-স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর সন্ত্রাসী চাপ?