রাজনীতি

চাঁদাবাজি–নারী কেলেঙ্কারি–অভ্যন্তরীণ কোন্দলঃ এনসিপিতে ‘সম্প্রীতির সংকট’ কীভাবে সহিংসতায় গড়াল

  প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১২:৪৬:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব অনুসন্ধান(পর্ব-১)ডেস্ক রিপোর্ট।।খুলনায় এনসিপি নেতাকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনার পর তদন্তে উঠে আসছে দলের ভেতরের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব,অর্থনৈতিক স্বার্থ,নারীঘটিত অভিযোগ এবং সংগঠন নিয়ন্ত্রণের লড়াই।লপুলিশ ও দলীয় একাধিক সূত্রের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সহিংসতা হঠাৎ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে নয়; বরং নিজ দলের ভেতরের কোন্দলই মূল চালিকাশক্তি হতে পারে।

১) দ্বন্দ্বের শিকড়: ‘অর্থ–প্রভাব–নিয়ন্ত্রণ’

তদন্তসংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলে এনসিপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে—

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক সংগঠন ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ,

পদ-পদবি ও সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গ্রুপিং,

অর্থ বণ্টন ও নেতৃত্ব নির্ধারণে অস্বচ্ছতা—
এসব ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছিল।

একাধিক সূত্রের দাবি,এই দ্বন্দ্বে বারবার নিজ দলের কর্মীরাই হুমকি ও হামলার শিকার হয়েছেন।

২) নারীঘটিত অভিযোগ: নৈতিক সংকট ও ব্ল্যাকমেইল

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে জানা যায়,দলের কয়েকজন নেতাকে ঘিরে নারীঘটিত অভিযোগ ও ভিডিও/চ্যাট সংক্রান্ত ব্ল্যাকমেইলের গুঞ্জন ছড়ায়।এসব ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ সালিশ ও ‘মীমাংসা’র নামে চাপ সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

একজন স্থানীয় সংগঠক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,
“নৈতিক প্রশ্নে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট না থাকায় বিষয়গুলো ব্যক্তিগত শত্রুতায় রূপ নেয়।”

৩) সহিংসতার পথ: নিজের কর্মীই লক্ষ্য

পুলিশের প্রাথমিক মূল্যায়নে রাজনৈতিক কর্মসূচির চেয়ে ব্যক্তিগত বিরোধ ও দলীয় কোন্দলকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন—

ঘটনার আগে একাধিক হুমকি ও তর্ক-বিতর্কের তথ্য মিলেছে,

অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে পরিচিতির যোগসূত্র রয়েছে,

ব্যবহৃত অস্ত্র ও গতিবিধি পেশাদার রাজনৈতিক হামলার চেয়ে ব্যক্তিগত আক্রোশের ইঙ্গিত দেয়।

৪) আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ

সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ—অভ্যন্তরীণ চাপ ও হুমকির কারণে অতীতে একাধিক কর্মী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন। স্থানীয় সূত্রের দাবি,এর মধ্যে অন্তত একটি ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছিল,যদিও বিষয়টি এখনো আইনি নিষ্পত্তিতে পৌঁছায়নি।

আইনজ্ঞরা বলছেন,এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি দলীয় শৃঙ্খলা নয়,ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

৫) পুলিশের তদন্ত: কী কী খতিয়ে দেখা হচ্ছে

পুলিশ সূত্র জানায়,তদন্তে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে—

আর্থিক লেনদেন ও চাঁদাবাজির অভিযোগের নথি

নারীঘটিত অভিযোগে ব্ল্যাকমেইল বা চাপের প্রমাণ

কল রেকর্ড,সিসিটিভি ফুটেজ,ডিজিটাল আলামত

দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধের টাইমলাইন

এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,
“এটি একক কোনো ঘটনা নয়।পেছনের সম্পর্ক ও স্বার্থ বিশ্লেষণ করেই চার্জশিট দেওয়া হবে।”

৬) দলীয় নীরবতা ও ভাঙনের আশঙ্কা

এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি।দলের ভেতরের একাংশ মনে করছে,অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান ছাড়া সংকট কাটবে না।অন্য অংশ বলছে,অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।

৭) বিশ্লেষণ: নতুন দলের পুরোনো রোগ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,

> “অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র,আর্থিক স্বচ্ছতা ও নৈতিক গাইডলাইন না থাকলে নতুন দলেও পুরোনো রাজনৈতিক ব্যাধি ফিরে আসে।তখন প্রতিপক্ষ নয়,নিজের লোকই সবচেয়ে অনিরাপদ হয়ে ওঠে।”

উপসংহার

খুলনার ঘটনাটি যদি সত্যিই দলীয় কোন্দল থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে,তবে এটি শুধু একটি অপরাধ নয়—একটি রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। তদন্তের ফলই নির্ধারণ করবে,এনসিপি এই সংকট থেকে শিক্ষা নেবে,নাকি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

আরও খবর

Sponsered content