রাজনীতি

দাড়িপাল্লায় ভোট না দিলে কাফের—বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক

  প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৪:২১:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।”মুসলিম হয়েও যারা দাড়িপাল্লায় ভোট দেবে না, তারা কাফের”—এমন মন্তব্য করে নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন কৃষ্ণ নন্দী নামে এক বক্তা।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত,ভোটারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

কী বলেছেন কৃষ্ণ নন্দী

ভিডিও বক্তব্যে তাকে বলতে শোনা যায়,দাড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট না দিলে একজন মুসলমান ইসলামের বাইরে চলে যায়। বক্তব্যটি দ্রুত ভাইরাল হলে বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

ধর্মীয় প্রতিক্রিয়া

ধর্মীয় আলেম ও গবেষকদের মতে,ভোট একটি নাগরিক অধিকার; এটি ঈমান বা কুফরের মাপকাঠি হতে পারে না। তারা বলছেন,কাউকে কাফের ঘোষণা করা (তাকফির) ইসলামে অত্যন্ত সংবেদনশীল ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত বিষয়। রাজনৈতিক পছন্দের কারণে তাকফির করা শরিয়তসম্মত নয়।

আইনগত বিশ্লেষণ

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে,বক্তব্যটি একাধিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে—

১. দণ্ডবিধি, ১৮৬০

ধারা ২৯৫ ও ২৯৫(ক): ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার অভিযোগ প্রযোজ্য হতে পারে।

ধারা ৫০৫: জনমনে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি করলে এ ধারায় অপরাধ গণ্য হয়।

২. নির্বাচন সংক্রান্ত আইন

ভোটারকে ধর্মীয় ভয় দেখিয়ে নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করার চেষ্টা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।

নির্বাচন কমিশন এ ধরনের বক্তব্যকে অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তার হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।

৩. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (প্রযোজ্য হলে)

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানো হলে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হওয়ার নজির রয়েছে।

মানবাধিকার ও সংবিধানিক দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী—

প্রত্যেক নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে

তবে তা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি,নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করতে পারে না

আইনজ্ঞরা বলছেন,কাউকে কাফের আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের সীমা লঙ্ঘন করতে পারে।

সামাজিক ঝুঁকি

বিশ্লেষকদের মতে,এ ধরনের বক্তব্য—

ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়ায়

ভিন্নমতাবলম্বীদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে

নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি

বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও আইনজীবীরা দাবি জানিয়েছেন—

বক্তব্যটির তদন্ত

প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা

ভবিষ্যতে এমন বক্তব্য রোধে নির্বাচন কমিশনের কঠোর ভূমিকা

উপসংহার

বিশেষজ্ঞদের মতে,ধর্মকে ভোটের অস্ত্র বানিয়ে কাউকে কাফের আখ্যা দেওয়া শুধু সামাজিকভাবে বিপজ্জনক নয়, আইনগতভাবেও ঝুঁকিপূর্ণ।একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোটের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত অধিকার—তা ঈমানের সনদ হতে পারে না।

আরও খবর

Sponsered content