সম্পাদকীয়

সবচেয়ে বড় বিপদ কারা—অজ্ঞ জনতা,না জেনেশুনে অন্যায় করা শিক্ষিত স্বার্থপররা?

  প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ২:১১:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।সবচেয়ে বড় বিপদ কারা—অজ্ঞ জনতা,না জেনেশুনে অন্যায় করা শিক্ষিত স্বার্থপররা?
রাষ্ট্র কখন ভাঙে?
রাস্তায় স্লোগানে, না টেবিলে বসে সিদ্ধান্তে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের সামনে দুটি শ্রেণি দাঁড়ায়—
একটি মূর্খ ও অজ্ঞ জনসমষ্টি,
আরেকটি শিক্ষিত কিন্তু নৈতিকতাহীন স্বার্থপর গোষ্ঠী।
প্রথম শ্রেণিটি দৃশ্যমান।তারা চিৎকার করে,ভাঙচুর করে, উত্তেজিত হয়।সমাজের অস্থিরতার সময় তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ে।কিন্তু ইতিহাস বলে—তারা কখনোই সংকটের মূল পরিকল্পনাকারী নয়।তারা ব্যবহৃত হয়,পরিচালিত হয়,উসকানি পায়।আজ যাকে অনুসরণ করে,কাল তাকেই অস্বীকার করে।
রাষ্ট্রের জন্য এই শ্রেণি বিপজ্জনক—কিন্তু মরণঘাতী নয়।

মরণঘাতী বিপদ আসে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে—
যারা শিক্ষিত,সচেতন,ক্ষমতার ভাষা বোঝে—কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্নে সম্পূর্ণ দেউলিয়া।
এই শিক্ষিত স্বার্থপররা জানে কোনটা অন্যায়,তবু বলে—
“সময় উপযুক্ত নয়”,
“বাস্তবতা বুঝতে হবে”,
“এখন চুপ থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ”।
দার্শনিক হান্না আরেন্ট যাকে বলেছেন “Banality of Evil”—অর্থাৎ,অন্যায় সবচেয়ে ভয়ংকর হয় যখন তা স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত করে তোলা হয়—এই শ্রেণিই তার জীবন্ত উদাহরণ।

মূর্খ মানুষ ভুল করে আবেগে।
শিক্ষিত স্বার্থপর মানুষ ভুলকে নীতিতে রূপ দেয়।
নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই শ্রেণি সবচেয়ে অপরাধী।কারণ তারা অজ্ঞ নয়,তারা জানে।তারা বোঝে—আইন কী, সংবিধান কী,মানবাধিকার কী।তবু সুবিধা হারানোর ভয়ে তারা অন্যায়ের পাশে দাঁড়ায়,অথবা আরও ভয়ংকরভাবে—নীরব থাকে।
রাজনৈতিকভাবে এরা সবচেয়ে শক্তিশালী।
কারণ এরা রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে ঢুকে পড়ে—প্রশাসনে, বিচারব্যবস্থায়,মিডিয়ায়,একাডেমিয়ায়।এরা বন্দুক হাতে নেয় না,কিন্তু এমন কাঠামো তৈরি করে যেখানে বন্দুক তোলাই বৈধ মনে হয়।

একটি রাষ্ট্র মূর্খ জনগণের কারণে অস্থির হতে পারে,
কিন্তু শিক্ষিত স্বার্থপরদের কারণে রাষ্ট্র চরিত্রহীন হয়ে পড়ে।
নৈতিকতা হারানো রাষ্ট্র শুধু ক্ষমতা টিকিয়ে রাখে,ন্যায়বিচার নয়।আর যেখানে ন্যায়বিচার নেই,সেখানে স্থিতিশীলতা কেবল বিভ্রম।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়—
স্বৈরশাসকরা একা ক্ষমতায় আসে না,
তাদের পেছনে থাকে একদল শিক্ষিত সুবিধাবাদী—যারা কলম দিয়ে,যুক্তি দিয়ে,নীরবতা দিয়ে স্বৈরতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখে।
তাই প্রশ্নের উত্তর দ্ব্যর্থহীন—
মূর্খ সম্প্রদায় সমস্যার লক্ষণ,
কিন্তু শিক্ষিত ও স্বার্থপর সম্প্রদায়ই সমস্যার মূল।
কারণ তারা শুধু অন্যায় করে না—
তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অন্যায়কে “স্বাভাবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা” বানিয়ে যায়।
এবং যে রাষ্ট্রে অন্যায় স্বাভাবিক হয়ে যায়,
সে রাষ্ট্র টিকে থাকলেও—আর রাষ্ট্র থাকে না।

আরও খবর

Sponsered content