প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৫:৪৮:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।ইতিহাস বারবার সতর্ক করে দেয়—পরাশক্তির রঙিন স্বপ্ন ছোট রাষ্ট্রের জন্য প্রায়ই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।ইউক্রেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ।এক সময় পশ্চিমা বিশ্ব,বিশেষ করে মার্কিন ডিপ স্টেট ও ন্যাটো,ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দেখিয়েছিল অতি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।বলা হয়েছিল,রাশিয়াকে চাপে ফেললে ইউক্রেন হবে ইউরোপের নায়ক।বাস্তবে হয়েছে ঠিক উল্টো—রাশিয়াকে ক্ষেপিয়ে যুদ্ধ ডেকে এনে জেলেনস্কি নিজ দেশকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।

আজ ইউক্রেন একটি বিধ্বস্ত রাষ্ট্র।লক্ষ মানুষের প্রাণহানি, কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত,অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত,ভূখণ্ড সংকুচিত। পশ্চিমা সহানুভূতি ও প্রতিশ্রুতি ইউক্রেনকে রক্ষা করতে পারেনি।বরং দেশটি এখন কার্যত বৈশ্বিক ক্ষমতার খেলায় একটি ব্যর্থ দাবার ঘুঁটি।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতা গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। সমালোচকদের মতে,ড. ইউনুস আজ সেই বিপজ্জনক পথেই হাঁটছেন—যে পথে হাঁটতে গিয়ে জেলেনস্কি নিজের দেশকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।অভিযোগ উঠছে,আমেরিকা–পাকিস্তান অক্ষের কৌশলগত ফাঁদে পড়ে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে রঙিন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এবং আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করার খেলায় জড়িয়ে পড়ছেন।
ভারতকে উসকানি দেওয়া বা আঞ্চলিক সংঘাতে জড়ানো কোনো দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনীতির অংশ হতে পারে না।বাংলাদেশ ভৌগোলিক,অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাগতভাবে এমন অবস্থানে নেই যে সে পরাশক্তির সংঘাতের ভার বহন করবে।ইউক্রেনের মতো বাংলাদেশও যদি কারও ‘প্রক্সি রাষ্ট্রে’ পরিণত হয়, তবে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে—অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে,সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুর্বল হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের ইতিহাস বলে,এই জাতি যুদ্ধ নয়—স্থিতিশীলতা চায়।উন্নয়ন,গণতন্ত্র ও সংস্কার বিদেশি চাপ বা ভূরাজনৈতিক দুঃসাহসের মাধ্যমে আসে না; আসে বাস্তববাদী কূটনীতি, অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে।
আজ তাই সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার—
বাংলাদেশ কি অন্যের শত্রুকে নিজের শত্রু বানাবে?
নাকি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে শান্তিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ পথে এগোবে?
ড. ইউনুসের সামনে এখন দুটি পথ খোলা।একটিতে আছে জেলেনস্কির পরিণতি—ধ্বংস,বিভাজন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অন্যটিতে আছে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনায়কত্ব—যেখানে বাংলাদেশ কারও খেলায় ঘুঁটি নয়,বরং নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই নির্ধারণ করবে।
এই সিদ্ধান্তের দায় ইতিহাস এড়াতে দেবে না।

















