লেখক ও কলামিস্ট এবং মন্তব্য কলাম:-

হাদীর মৃত্যু: একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য বিশ্লেষণ

  প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৫:৪৩:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

হাদীর মৃত্যু: একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য বিশ্লেষণ
১. ঘটনাটি কেন সাধারণ অপরাধ নয়
হাদীর মৃত্যু শুধু একজন ব্যক্তির প্রাণহানি নয়; এটি এমন এক সময়ে ঘটেছে,যখন দেশের রাজনৈতিক মাঠ ধীরে ধীরে নির্বাচনমুখী উত্তেজনায় প্রবেশ করছে।ইতিহাস বলে—নির্বাচনের প্রাক্কালে সংঘটিত সহিংসতা বা আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলো প্রায়ই রাজনৈতিক ফলাফল প্রভাবিত করার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এখানে মূল প্রশ্ন:
এই মৃত্যুর ফলে কার রাজনৈতিক লাভ হচ্ছে?
কার অবস্থান দুর্বল হচ্ছে?
২. “লাভ-ক্ষতি” তত্ত্ব: কারা সুবিধাভোগী
রাজনৈতিক বিশ্লেষণের একটি মৌলিক সূত্র হলো—
যে পক্ষ লাভবান, সন্দেহের কাঁটা সেদিকেই যায়।
হাদীর মৃত্যুতে যা ঘটছে:
জনমনে তীব্র আবেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি
রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়া
দোষারোপের রাজনীতি জোরদার হওয়া
যুক্তির জায়গা দখল করছে আবেগ
এই পরিস্থিতি সাধারণত স্থিতিশীল রাজনৈতিক শক্তির জন্য ক্ষতিকর, বরং উপকারী হয়—
যারা সংঘাত চায়
যারা সহানুভূতির রাজনীতি দিয়ে দ্রুত জনসমর্থন বাড়াতে চায়
যারা নির্বাচনকে আবেগনির্ভর করতে চায়
৩. আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানো: যুক্তির ঘাটতি
যৌক্তিকভাবে প্রশ্ন উঠছে—
হাদী যদি সত্যিই জনপ্রিয় ও জনসমর্থিত নেতা হন, তবে তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
অতীতে আরও বড় ও কঠিন রাজনৈতিক বিরোধীরা আওয়ামী আমলে সক্রিয় থেকেছে—অনেকে জীবিত, অনেকেই রাজনীতিতে প্রভাবশালী।
তাহলে হাদীকে হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কৌশলগত লাভ কোথায়?
এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর না থাকলে, একতরফা দায় চাপানো রাজনৈতিক প্রচারণা বলেই মনে হয়।
৪. “মাস্টারপ্ল্যান” ও জনমত ব্যবস্থাপনা
হাদীর মৃত্যু ঘিরে যে বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে—
দ্রুত একটি নির্দিষ্ট বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা
জনমতকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার কৌশল
আবেগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার প্রচেষ্টা
এ ধরনের কৌশল সাধারণত ব্যবহার করে তারা—
যারা জনগণের দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা নয়, তাৎক্ষণিক আবেগে বিশ্বাসী
যারা নির্বাচনকে নীতির লড়াই নয়, ঘটনার লাশের ওপর দাঁড় করাতে চায়
৫. ভারত প্রসঙ্গ ও বিভ্রান্তির রাজনীতি
জনমতকে বাইরের শক্তির দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন নয়।
এতে মূল লাভ হয়—
প্রকৃত পরিকল্পনাকারীরা আড়ালে থেকে যায়
তদন্ত ও জবাবদিহির দাবি দুর্বল হয়
রাজনীতি বাস্তব প্রশ্ন থেকে সরে গিয়ে আবেগী শ্লোগানে বন্দী হয়
৬. উপসংহার: সবচেয়ে বড় অস্ত্র—চিন্তা
হাদীর মৃত্যু যদি সত্যিই পরিকল্পিত হয়ে থাকে, তবে হত্যাকারীদের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য ছিল—
মানুষকে না ভেবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য করা
যুক্তির বদলে আবেগকে রাজনীতির চালিকাশক্তি বানানো
সুতরাং, হাদীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে—
নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলতে হবে
“কার লাভ, কার ক্ষতি”—এই প্রশ্নটি সামনে আনতে হবে
রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে অস্বীকার করতে হবে
👉 যে জনগণ চিন্তা করতে শেখে, তাকে আর কোনো ‘মাস্টারপ্ল্যান’ সহজে ব্যবহার করতে পারে না।

আরও খবর

Sponsered content