বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংবাদ

ফ্রিল্যান্সিং করে ২২ বছর বয়সী তানিয়ার মাসিক আয় লাখ টাকা

  প্রতিনিধি ২৯ নভেম্বর ২০২৫ , ৭:১৮:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।।অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল তানিয়া খলিলের (২২)।বিয়ের বছরখানেক পরই মা হন তিনি।এরই মধ্যে সংসার আর শিশুসন্তান সামলিয়েই তিনি হয়ে ওঠেন ফ্রিল্যান্সার।নিজে ফ্রিল্যান্সিং শিখে অন্যদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।এখন তাঁর মাসে আয় প্রায় এক লাখ টাকা।

তানিয়ার বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বাজারপাড়া এলাকায়।২০২১ সালে মাটিরাঙ্গা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়।স্বামী ইব্রাহিম খলিল পেশায় ফ্রিল্যান্সার। সেই সুবাদে তানিয়ারও এ জগতে চলা শুরু।২০২৩ সালের শুরুতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসেন। সেখানেই এখন দুজন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালান।

তানিয়া জানান,বিয়ের পর পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি।এর মধ্যেও ঘরে বসে কিছু করতে চাইতেন।এরপর স্বামী ইব্রাহিম খলিল তাঁকে ফ্রিলান্সিং শেখার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন।তিনিও সে সুযোগ হাতছাড়া করেননি।

তানিয়া খলিল বলেন,আমি প্রথমে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শেখা শুরু করি।রং,লে আউট,টাইপোগ্রাফি—সবই আমার কাছে নতুন ছিল।নিজের আগ্রহ থাকায় দ্রুত শিখে ফেলি। কয়েক মাসের মধ্যেই নিজেকে ফ্রিল্যান্সিং বাজারের জন্য তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হয়েছি।’

ফ্রিল্যান্সিং শেখার মধ্যেই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম কাজ পেয়েছেন তানিয়া।লোগো ডিজাইন করে সে মাসে তিনি ১৩ ডলার আয় করেছিলেন।এর পর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি তাঁকে।সেই স্মৃতি মনে করে তানিয়া বলেন,প্রথম আয় আমাকে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।মনে হয়েছিল সত্যিই কিছু করার সামর্থ্য আছে আমার।’

তানিয়া বলেন,লোগো ডিজাইনের পর ব্র্যান্ড আইডেনটিটি, বিজনেস কার্ড,লেটারহেড তৈরিসহ নানান ধরনের কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি।গ্রাহকদের খুশি করতে পারায় দ্রুতই আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম বাড়ে তাঁর।এরপর একের পর এক কাজ আসতে থাকে।আয়ও সমানতালেই বাড়তে থাকে। বর্তমানে তিনি ফাইভারের পাশাপাশি আপ ওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সের কাজ করেন।

সম্প্রতি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়,তিনতলা ভবনের দোতলায় প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের বিশাল কক্ষে সারিবদ্ধভাবে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন তরুণী। তানিয়া তাঁদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।একটু শুনতেই বোঝা গেল তানিয়া তরুণীদের গ্রাফিক ডিজাইন কীভাবে করতে হয়,তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

তানিয়ার জন্য এসব কাজ অবশ্য খুব একটা সহজ ছিল না। সময়মতো কাজ জমা দেওয়া,গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ, সন্তানকে দেখাশোনা—সব মিলিয়ে প্রতিদিনই ছিল চ্যালেঞ্জের। তানিয়া বলেন,পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।আমার স্বামী এখনো আমার সবচেয়ে বড় সহযোগী।’

ফ্রিল্যান্সার তৈরির কারিগর
শুধু নিজে ফ্রিল্যান্সিং করে থেমে থাকেননি তানিয়া।তিনি খাগড়াছড়ির অন্য তরুণীদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।২০২১ সাল থেকেই স্বামীর প্রতিষ্ঠান ‘খলিল আইটি’-তে যুক্ত রয়েছেন তিনি।সেখান থেকে প্রায় ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এ পর্যন্ত।তাঁদের অনেকেই এখন ঘরে বসে আয় করছেন।

২০২৩ সালে স্বামী-স্ত্রী মিলে মাটিরাঙ্গা থেকে খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসেন।তাঁদের দুজনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও নতুন করে সদরে শুরু হয়।বর্তমানে খাগড়াছড়ি গেট এলাকায়ও তাঁদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে।

সম্প্রতি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়,তিনতলা ভবনের দোতলায় প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের বিশাল কক্ষে সারিবদ্ধভাবে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন তরুণী। তানিয়া তাঁদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।একটু শুনতেই বোঝা গেল তানিয়া তরুণীদের গ্রাফিক ডিজাইন কীভাবে করতে হয়,তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী সুমা জান্নাত বলেন, ‘চার মাস শেখার পরই কাজ শুরু করি।এখন ঘরে বসে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারি।’আরেক শিক্ষার্থী তৃণা রোয়াজা বলেন,ফ্রিল্যান্সিং শিখে এখন নিজেই আয় করি।পরিবারের কাছে হাত পাততে হয় না।পড়াশোনার খরচও নিজে চালাতে পারছি।’

নিজের শিক্ষার্থীদের সাফল্যে খুশি তানিয়া খলিল।তিনি বলেন, ‘এখন অসংখ্য সুযোগ।একটি কম্পিউটার আর মনোযোগ থাকলেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।’তিনি এটিই সবাইকে বোঝাচ্ছেন।প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও করবেন।

খাগড়াছড়ি মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুস্মিতা খীসা বলেন,নারীদের আইসিটি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণে সরকার কাজ করছে।ডিজাইন,ডিজিটাল মার্কেটিং,ফ্রিল্যান্সিং—এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।তানিয়া খলিল নিজে দক্ষতা অর্জন করে অন্য নারীদেরও এগিয়ে নিচ্ছেন। আমাদের অনেক সময় অস্থায়ী প্রশিক্ষকের প্রয়োজন হয়। তখন তাঁর কথা বিবেচনা করা হবে।’

আরও খবর

Sponsered content