প্রতিনিধি ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৯:৩৩:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি।।নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দলীয় কার্যালয়ের ফটকে দেওয়া তালা তৃতীয় দিনেও ঝুলছে।সদ্য ঘোষিত ১৭টি ওয়ার্ড কমিটিতে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ তুলেছে দলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।এই ঘটনায় দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ হয়েছে বলে দাবি করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় শহরের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলছিল।তবে ভবনের নিচতলায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় খোলা অবস্থায় ছিল।এ সময় সেখানে কোনও নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।
এর আগে,শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।ওই সভায় বক্তব্যের এক অংশে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র আইভী বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে আমাদের ছোট ভাই এপন আর চঞ্চলকে নেতা বানায়া দিলো।ওরা যদিও নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে।কিন্তু আনোয়ার কাকা (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি) প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়ে এই কমিটি দিয়েছেন।তিনি দেওভোগকে বুঝিয়েছেন,উনি যা চাইবেন তা হবে এখানে।যেই দেওভোগে পূর্বপুরুষেরা নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগের,তাদের অসম্মানিত করেছেন তিনি।আজকে এখানে দাঁড়িয়ে দেওভোগের মানুষ হিসেবে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম আমি।’
ওই দিন রাতে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়।এ সময় সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এবং তাকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়।
জানা গেছে,গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ থেকে ২৭ নম্বর পর্যন্ত ১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়।মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা মহানগর আওয়ামী লীগের এই কমিটি ঘোষণা করেন। এরপর থেকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন।দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাইনাস করে বিতর্কিতদের কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন।
এদিকে তৃতীয় দিনেও আওয়ামী লীগ অফিসে তালা ঝুলছে। বিষয়টি নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।কার্যালয়ের তালা খোলা হবে না উল্লেখ করে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগর বলেন,তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাপে আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে তালা দিয়েছি।কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই তালা খোলা হবে না।রাজাকারপুত্র,নবাগত নেতৃবৃন্দ দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি করা হয়েছে।সভাপতির কথামতো যে চলে তাকে সে কমিটিতে রাখে।কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে এই পদে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।’
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত বলেন,এবার ১৭টি ওয়ার্ডে কমিটি দেওয়া হয়েছে।সেখানে যাদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে তাদের অনেককে আমরা চিনি না। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও এই ওয়ার্ডের কমিটির বিষয়ে কিছুই জানি না।মেয়র আইভীসহ আমাদের আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়নি।এটা জঘন্য কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ তো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি না।ঘোষিত কমিটির মধ্যে রাজাকারের সন্তান সভাপতি হয়েছে।এই কমিটি আওয়ামী লীগের কমিটি হতে পারে না।এরা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে কবরস্থ করার চেষ্টা করছে।অথচ দীর্ঘদিন যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত রয়েছে তারা কেন বঞ্চিত হলো?এ নিয়ে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ক্ষোভ চলছে।এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সাহেবকে জানাবো।দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবকে জানাবো।’
এই ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ হয়েছে উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকান সাহা বলেন,কমিটি পছন্দ না হলে দলীয় মিটিংয়ে তারা বলতে পারতো।কিন্তু তারা এমনটি করেনি।এটা গঠনতন্ত্রবিরোধী। তাদের কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।বিষয়টি আমি দলীয় ফোরামে ব্যাখ্যা করবো।ইতোমধ্যে বিষয়টি কেন্দ্রের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে।দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।আর যে বা যারা তালা দিয়েছে,তারা তালা খুলে দেবে।নতুবা দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন,কমিটি আমি এককভাবে ঘোষণা করিনি।দলের সাধারণ সম্পাদক ও আমি মিলে কমিটি ঘোষণা করেছি।তবে স্বার্থে আঘাত লাগার কারণে তারা আমার ওপরে দোষারোপ করছে।যোগ্যদের কমিটিতে রাখা হয়েছে।আর বিতর্কিতদের কমিটিতে রাখা হয়নি।’
মেয়র আইভীর ক্ষোভ ও তালা ঝোলানো নেতাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি প্রার্থী ছিল মনোয়ার হোসেন মনা।তার অতীতের কর্মকাণ্ড ভালো না।তার এক ছেলে বিএনপির রাজনীতি করে।সে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ডুবিয়ে ফেলেছে।এ কারণে সভাপতি ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে যাকে ভালো মনে হয়েছে তাকে সভাপতি করেছি।আর এই মনা সম্পর্কে মেয়র আইভীর মামা হয়।এ কারণে স্বার্থে আঘাত লাগায় এই অভিযোগ তুলেছে।সাধারণ সম্পাদকের বেলায় যাকে যোগ্য মনে হয়েছে তাকে করেছি।সাগর সেক্রেটারি পদ পায়নি বলে আমার ওপরে ক্ষোভ ঝেড়েছে।’
তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,এটা আওয়ামী লীগ অফিস।আমার ব্যক্তিগত অফিস নয়।বিষয়টি আওয়ামী লীগ দল দেখবে।আওয়ামী লীগ তো আর আমি একা করি না।দল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’