সারাদেশ

৩১টি গরু বিক্রি পরেও আলাউদ্দিনের মুখে হাসি নেই

  প্রতিনিধি ২৮ জুন ২০২৩ , ৩:৫৬:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।।কুষ্টিয়া থেকে ৪০টি গরু নিয়ে এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী পশুর হাটে এসেছিলেন ব্যাপারী মো. আলাউদ্দিন শেখ।আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত তাঁর ৩১টি গরু বিক্রি হয়েছে।অবিক্রীত রয়ে গেছে ৯টি। রাতের মধ্যে বাকি গরুগুলো বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা তাঁর। ৩১টি গরু বিক্রি পরেও তাঁর মুখে হাসি নেই।প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় হতাশ তিনি।

আলাউদ্দিন শেখের সঙ্গে কথা হয় আজ বুধবার বিকেলে। তিনি বলেন,শুরুতে মনে হয়েছিল এবার বাজারে গরুর ভালো দাম পাওয়া যাবে।তাই শেষ মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলেন।কিন্তু কোরবানির আগমুহূর্তে গরুর দাম কমে যায়। তাই কোনোটি ন্যূনতম লাভে,কোনোটি লোকসান দিয়ে বিক্রি করে দিতে হয়েছে।এভাবে বিক্রি না করলে তখন এসব গরু আবার কুষ্টিয়া নিয়ে গিয়ে লালন-পালন করতে হতো।ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া আর লালন-পালন করা অনেক টাকা খরচ।আবার ঝামেলার কাজও।তাই দাম যা পেয়েছেন,তা দিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু করার নেই।

মো. আলাউদ্দিন শেখ একা আসেননি,তাঁর সঙ্গে এসেছেন ১৩ জন।আলাউদ্দিন শেখের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর লোকজন একটি গরু বিক্রি করেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। আক্ষেপ করে আলাউদ্দিন শেখ বলেন,তিন দিন আগেও এই গরু ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দর দিয়েছিলেন এক ক্রেতা।আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে তখন দেননি। এখন অনেক কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

শুধু আলাউদ্দিন শেখ নন,চট্টগ্রামের বাকলিয়ার নূর নগর হাউজিংয়ের কর্ণফুলী পশুর হাটে গরু বিক্রি করতে এসে অনেক ব্যাপারী ও খামারি হতাশ।তাঁরা বলছেন,যে প্রত্যাশা নিয়ে এসেছেন,তা পূরণ হয়নি।প্রত্যাশিত দরের চেয়ে অনেক কম দরে গরু বিক্রি করতে হয়েছে।

চট্টগ্রামে কয়েক দিন ধরে ছোট থেকে মাঝারি আকারের গরু বিক্রি হয়েছে বেশি।এমন গরুর দাম ছিল ৭০ হাজার থেকে পৌনে ২ লাখ টাকা।গরুর দাম কিছুটা কমায় গত দুদিন মাঝারি আকারের গরু বিক্রি বেড়েছে।দেড় থেকে তিন লাখ টাকার মধ্যে মাঝারি আকারের গরু পাওয়া যাচ্ছিল হাটে। অবশ্য বড় গরুর প্রতি আকর্ষণ এবারও কম ছিল।
আজ বুধবার চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

সকালের দিকে মানুষের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা গড়াতেই হাট আসতে থাকেন ক্রেতারা।এতে বিকেলের মধ্যে জমজমাট হয়ে ওঠে হাট।ব্যাপারীদের হাঁকডাক,গরু নিয়ে ছোটাছুটি,হাটের স্বেচ্ছাসেবকদের দৌড়ঝাঁপ—সব মিলিয়ে মুখর হয়ে ওঠে হাট।

গরু বিক্রি নিয়ে ব্যাপারীদের মধ্যে হতাশা ভর করলেও কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন ক্রেতারা।শুরুতে গরুর দাম এত চড়া ছিল যে দরদাম করে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে অনেককে।আজ অবশ্য এই চিত্র চোখে পড়েনি।

আজ বিকেলে কর্ণফুলী পশুর হাট থেকে গরু কিনে বের হচ্ছিলেন চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের মো. রাশেদ। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় মাঝারি আকারের একটি গরু কেনেন।তিনি বলেন, ‘গরুর যে দাম ছিল তাতে শেষ পর্যন্ত কিনতে পারব কি না,তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।’এই হাটে আগেও একবার এসে ফিরে গেছেন।বাড়ির পাশে হাটে এবং হাটহাজারীর চৌধুরীহাটেও গিয়েছিলেন গরু কিনতে।কিন্তু বাজেটের সঙ্গে মিলছিল না।পরে কর্ণফুলী পশুর হাটে দ্বিতীয়বার এসে পছন্দের গরু পেয়েছেন।তিন দিন আগেও এই গরুর দাম ছিল আড়াই লাখ টাকা।

নগরের পশ্চিম মাদারবাড়ী থেকে আসা মিরাজুল ইসলাম গরু কিনেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার টাকায়। তিনি বলেন,গরুর দাম একটু কমেছে।না হলে গরু কেনা কঠিন হয়ে যেত।

বাকলিয়ার তুলাতুলি এলাকার রহিম মিয়া গরু কিনেছেন ৬৩ হাজার টাকায়।তাঁর মতে,গরুর দাম মোটামুটি আছে।

প্রত্যাশিত দামের চেয়ে কম দাম দেওয়ার পরও ক্রেতা পাচ্ছেন না বলে জানান চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের খামারি মো. ইছহাক, মনির হোসেন ও সাতকানিয়ার আবদুর রশিদ।তাঁরা বলেন, লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করা সম্ভব নয়।ন্যূনতম লাভ করতে হবে। লস দিলে আগামীবার ব্যবসা করা যাবে না।আর গরু বিক্রি না হলেও চিন্তা নেই।

খামারে নিয়ে যাবেন।পরে বিক্রি করবেন।তবে দূর থেকে আসা ব্যাপারীদের সে সুযোগ নেই।তাঁদের কম দামে গরু ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় অস্থায়ী কর্ণফুলী পশুর হাটের ইজারাদার পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. রফিক বলেন, তাঁদের হাটে গরুর দাম এখন সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে।

মানুষ এখন গরু কিনতে পারছেন।শুরুতে তা সম্ভব হয়নি।এ জন্য দুদিন ধরে প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে।অন্তত পাঁচ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে মঙ্গল ও বুধবার বিকেল পর্যন্ত। রাতের মধ্যে আরও তিন হাজার গরু বিক্রি হওয়ার আশা রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content