অপরাধ-আইন-আদালত

১৪টি চোরাই ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার

  প্রতিনিধি ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ , ১:৪৩:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ঢাকার কয়েক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪টি চোরাই ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক জানান, গোপন খবরের ভিত্তিতে রোববার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও ও সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তারা দলটিকে ধরতে পেরছেন।

গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন-মো. কামাল হোসেন কমল (৩৫), মো. রাশেদ (২৮), মো. আলম হাওলাদার (৩৬), মো. কাজল (৩৬), মো. ফজলু (৩০) ও মো. সাজু (২৫)।

তাদের কাছ থেকে রিকশা ছাড়াও আরও ১৮টি রিকশার চার্জার ব্যাটারি জব্দ করেছে র‍্যাব।

ফারজানা হক সাংবাদিকদের জানান সংঘবদ্ধ এই দলটি ঢাকায় গত সাত বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি ও ছিনতাই করেছে, যার প্রতিটি তারা বিক্রি করেছে পাঁচ থেকে ১২ হাজার টাকায়।

রিকশা চুরিতে এই দলটি রিকশাচালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খাইয়ে তাকে অজ্ঞান করেছে বা নির্জন কোনো স্থানে নিয়ে গিয়ে মারধর করে হাত-পা বেঁধে রেখে রিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে।আবার ভিন্ন কায়দায় রিকশা হাতিয়ে নিয়ে পরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করে রিকশা ফেরতও দিয়েছে বলে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা।

ফারজানা হক বলেন, “সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে খিলগাঁও ও সবুজবাগ এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভেতরে চোরাই ও ছিনতাই করা বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারিচালিত চোরাই এনে রিকশা মজুদ করে।এবং পরবর্তীতে রং পরিবর্তন করে বিক্রি করে আসছে।“

রিকশা চুরির কায়দাকানুন

ফারজানা হক জানান,এই দলটির নেতা হলেন মো. কামাল হোসেন কমল।১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে তিনি ঢাকায় আসেন এবং এক পর্যায়ে রিকশা চালানো শুরু করেন।
একদিন কমলের রিকশাটি চুরি হয়ে যায়।কিন্তু ওই রিকশার মালিক কমলের কাছ থেকে চুরি যাওয়া রিকশার দাম আদায় করে।ওই টাকা শোধ করতে কমলকে সেময় ধারদেনাও করতে হয়েছিল বলে র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন।

এরপর কমল তার চুরি যাওয়া রিকশাও খুঁজতে থাকে।সেই খোঁজাখুঁজির দিনগুলোতে কমলের প্রথমবারের মতো অপরাধ জগতের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয় বলে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা।ধীরে ধীরে কমল ওই জগড়ে জড়িয়ে যান জানিয়ে ফারজানা বলেন,একটা সময়ে এসে কমল রিকশা চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।কমল গত ১২ বছর ধরে রিকশা চুরি,ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।”

চুরির পর নির্ধারিত গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে রিকশার রং পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় সেটি বিক্রি করে দেওয়া হত।
কমল কীভাবে দল গড়ে তোলেন-সে প্রসঙ্গে ফারজানা হক বলেন,প্রথমে কমল নিজেই রিকশা চুরি করত।সে নতুন রিকশায় উঠে রিকশাচালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খেতে দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত।
“আবার কখনও রিকশাচালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভেজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা চুরি করত।পরে কমল কয়েকজনকে নিয়ে রিকশা চুরির জন্য একটি চক্র গড়ে তোলেন,যারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন।

ফারজানা বলেন,
দলের সদস্য সাজু রিকশা চালিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত আর সিটে বসত কমল। পথে নতুন রিকশা পেলে সেটির উপর তারা নজর রাখত। তারপর কোনো একটি রিকশাকে টার্গেট করে কমল সেটির চালককে বলত একটি বাসা থেকে আমার কিছু মাল তুলতে হবে এবং তার মোবইল নম্বরও সংগ্রহ করত।

“এরপর সেই বাসা থাকে মাল তুলে চালককে বলত, কাছাকাছি আরেকটি বাসায় পৌঁছে দিতে হবে,এ কাজে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দেওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হত চালককে।ওই চালক বেশি ভাড়া পাওয়ার কথা শুনে কমলের কথায় রাজি হয়ে যেত।তারপর কমল আগে থেকেই ঠিক করে রাখা একটি বাসার সামনে রিকশা থামিয়ে চালককে বলত তার সঙ্গে বাসার ভেতরে ঢুকে মালামাল নিয়ে আসতে।রিকশাচালক ঢুকলেই দলের আরেক সদস্য ফজলু এসে দ্রুত রিকশাটি নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যেত।”

ফারজানা বলেন,চুরি যাওয়া রিকশা রাশেদ,আলম হাওলাদার ও কাজল একটি গ্যারেজে নিয়ে লুকিয়ে রাখত।এরপর রিকশার মালিককে মোবাইলে ফোন দিয়ে কমল টাকা চাইতেন।টাকা পেলে রিকশা দিয়ে দিতেন।

এছাড়া কমল ও তার দলের সদস্যরা বেশি ভাড়ার লোভ দেখিয়ে কোনো একটি রিকশায় উঠে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে চালককে মারধর করে রিকশা নিয়েও পালিয়ে যেন বলেও র‌্যাব জানিয়েছে।

কমলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৮টি চুরির মামলা এবং ফজলুর নামে ১টি চুরির ও ১টি মাদকের মামলা রয়েছে বলে র‌্যাব জানায়।

আরও খবর

Sponsered content