বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংবাদ

১৩৭টি দল থেকে মেধাবী প্রতিযোগীরা এই কনটেস্টের চূড়ান্ত রাউন্ডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ

  প্রতিনিধি ৬ নভেম্বর ২০২২ , ৪:০৫:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।আগামী ৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে।

এরই মধ্যে এই আয়োজন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ।এ বছর ৭০ টি দেশ থেকে প্রায় ১৩৭টি দল থেকে মেধাবী প্রতিযোগীরা এই কনটেস্টের চূড়ান্ত রাউন্ডে অংশ নিচ্ছে। উক্ত আয়োজনকে ঘিরে ইতোমধ্যে ২০০ জন আইসিপিসি রিজিওনাল কনটেস্ট ডিরেক্টর ছাড়াও কর্মকর্তাসহ অন্তত এক হাজারেরও বেশি বিদেশি অতিথির আগমন হচ্ছে বাংলাদেশে। আইসিপিসি রিজিওনাল ডিরেক্টরবৃন্দ বিভিন্ন সিম্পোজিয়ামসহ সেমিনারে অংশ নিবেন।আইসিপিসি আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে রবিবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ার-এর বিসিসি অডিটরিয়ামে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।

অনুষ্ঠানের প্রেস ব্রিফ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং আইসিপিসি নির্বাহী পরিচালক ড. উইলিয়াম বি. পাউচার।অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ কনটেস্ট এর পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহু, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক কামরুল আহসান, হুয়াওয়ের কর্পোরেট কমিউনিকেশনস্ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ড ভিকি ঝ্যাং, জেট ব্রেইন এর বিনিয়োগ বিভাগের এসভিপি এবং গবেষণা ও শিক্ষা বিষয়ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অন্ড্রে ইভ্যানভ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার অংশ নেন।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক বলেন, এ আয়োজনটি আইসিটিতে আমাদের সক্ষমতা প্রদর্শনের দারুণ একটি সুযোগ। একই সঙ্গে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ আইসিটি নেতৃত্বদের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে দেওয়ারও একটি সুযোগ। আমরা আমাদের সব বন্ধুকে বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও আতিথেয়তার স্বাদ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক
পলক আরও বলেন, “১৩ বছরে আইসিটি খাতে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। ১৩ বছর আগে আমাদের মাত্র ৫ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল যা এখন ১৩০ মিলিয়ন। ১৩ বছর আগে কোন আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি ছিল না, প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। এখন সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার এবং সার্ভিস সেক্টর থেকে সব মিলিয়ে প্রতি বছরে সেটি ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে এসে দাড়িয়েছে।তিনি বলেন, একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ হল অনলাইন সোর্স অব ওয়ার্কার এর তালিকায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। সবশেষে তিনি বলেন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হওয়ার সফলতা অর্জন করেছি এবং সেই সফলতার ভিত্তিতে ২০৪১ সালের মধ্যে এখন আমরা টেকসই, জ্ঞাননির্ভর ও সৃজনশীল ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে চাই।”সংবাদ সম্মেলনে আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. উইলিয়াম বি. পাউচার বলেন, আইসিপিসি বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি অন্যতম বিশেষ আয়োজন। আমাদের লক্ষ্য ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের শক্তির উপর নির্ভর করে একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলা । আর এর জন্য শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন, বাংলাদেশ নতুন প্রযুক্তিকে খুব দ্রুততার সাথে গ্রহণ ও মানিয়ে নিতে সক্ষম। আমাদের দেশ আইসিটি খাতকে দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের ই-কমার্স সেক্টর দ্রুত প্রসারিত হয়েছে, আমাদের বিপিও শিল্পে উন্নয়ন বাড়ছে এবং এমনকি ইতোমধ্যে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাতেও সক্ষম হয়েছি।ইউএপির উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান আইসিপিসি ফাউন্ডেশন, বিসিসি এবং আইসিটি বিভাগের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আইসিপিসি হল সবচেয়ে পুরানো, বৃহত্তম এবং মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রিমিয়ার গ্লোবাল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা যা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার অলিম্পিক” হিসাবে বিবেচিত হয়।

এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা ইউএপি-এর জন্য অনেক বড় সম্মান ।আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহু বলেন, সমস্ত বিশ্বের সেরা প্রোগ্রামিং বিষয়ক সমস্যা সমাধানকারীদের মধ্য থেকে সেরাদের নিয়ে আমরা এই আয়োজন উদযাপন করতে এসেছি। কারণ ভবিষ্যতে এই মেধাবী সমস্যা সমাধানকারীদের খুবই প্রয়োজন। আমাদের এই মেধাবী সমস্যা সমাধানকারীদেরকে নিয়েই ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।

বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার বলেন, এই চমৎকার ফাইনাল আয়োজনের জন্য ঢাকা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।উল্লেখ্য, ৪৪তম আইসিপিসি প্রতিযোগিতায় এশিয়া পশ্চিম অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সম্মান অর্জন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। আইসিপিসি ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং হোস্ট ইউনিভার্সিটি হিসেবে ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি) ৪৫তম আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস্ ঢাকা” এর মূল আয়োজক।ঢাকার বসুন্ধরায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) তে প্রতিযোগিতার মূল প্রবলেম সলভিং অংশটি অনুষ্ঠিত হবে ১০ নভেম্বর যেখানে ৬ ঘন্টা সময়ের মধ্যে অংশগ্রহণকারীগণ সমস্যা সমাধান করবেন । সমাপনী এবং চ্যাম্পিয়নের নাম ঘোষনা করা হবে ১০ নভেম্বর ।এশিয়ার মধ্যে চীন, জাপান, থাইল্যান্ড এর পর ৪র্থ দেশ হিসেবে এবারই প্রথম বাংলাদেশ নামটি আইসিপিসি হোস্ট কান্ট্রি হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। বিশ্ব আসরে বাংলাদেশ ১৯৯৮ সাল থেকে আইসিপিসি-তে প্রতিযোগী হিসেবে অংশ গ্রহণ করে আসছে।১৯৭০ থেকে প্রায় প্রতি বছরই তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশেষভাবে আয়োজিত হয় এই কনটেস্ট।বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে মোট ৮ টি মেধাবী দল অংশ নিচ্ছে। চূড়ান্ত পর্বকে লক্ষ্য করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক এ বছরের অক্টোবর মাসে আয়োজন করা হয় একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ।আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নআইসিপিসি ঢাকার চ্যাম্পিয়ন বুয়েট হেলবেন্ট

আরও খবর

Sponsered content