প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৬:০০:২১ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।হাদীর মৃত্যু নিছক একটি হত্যাকাণ্ড নয়; এটি সময়,প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় নিলে একটি গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে।প্রশ্ন হলো—এই মৃত্যু কি কেবল সহিংসতার ফল,নাকি এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হিসাব?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে হঠাৎ করে আলোচিত হত্যাকাণ্ড,সহিংস ঘটনা কিংবা আবেগঘন ইস্যু সামনে আসা নতুন কিছু নয়।ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই জনমতকে প্রভাবিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। হাদীর মৃত্যুর পর যে আবেগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে,তা সেই পুরোনো বাস্তবতাকেই আবার সামনে এনে দাঁড় করাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণের একটি মৌলিক সূত্র হলো—যে ঘটনায় যার লাভ,সন্দেহের তীর সেদিকেই যায়।হাদীর মৃত্যুতে কার লাভ হয়েছে,আর কার ক্ষতি হয়েছে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়।যদি হাদী একজন জনপ্রিয়,জনসমর্থিত ও উদীয়মান নেতা হয়ে থাকেন,তবে তার মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা ক্ষমতাসীন পক্ষের।সহানুভূতির ঢেউ,রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আন্তর্জাতিক মনোযোগ—সবই ক্ষমতার জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করে। তাহলে প্রশ্ন আসে,এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের কৌশলগত লাভ কোথায়?
অন্যদিকে,এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যদি রাজনীতির মাঠ হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে,যদি আবেগ যুক্তির জায়গা দখল করে নেয়, এবং যদি ভোটের রাজনীতি সহানুভূতির তরঙ্গে ভাসতে শুরু করে—তাহলে তা উপকারী হয় তাদের জন্য,যারা সংঘাত ও অস্থিরতার মধ্যেই নিজেদের শক্তি খুঁজে পায়।উগ্র রাজনীতি বরাবরই লাশের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য তৈরি করতে চায়, কারণ সেখানে যুক্তির চেয়ে আবেগ বেশি কার্যকর।
আরেকটি লক্ষণীয় দিক হলো—ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও দায় নির্ধারণের প্রশ্ন দ্রুত আড়ালে চলে যাচ্ছে।তার বদলে শুরু হয়েছে দোষারোপের প্রতিযোগিতা,বাইরের শক্তির প্রসঙ্গ টেনে বিভ্রান্তি তৈরি,এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগী বয়ানের বিস্তার।এতে মূল প্রশ্নগুলো চাপা পড়ে যায়: কারা পরিকল্পনা করলো,কেন করলো,এবং এর দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক লক্ষ্য কী?
হাদীর মৃত্যুকে ঘিরে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো—এটি যেন জনগণের চিন্তাশক্তিকে দুর্বল করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত না হয়।একটি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত বিচার তখনই সম্ভব,যখন সমাজ আবেগ নয়,যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন তোলে; শ্লোগান নয়,প্রমাণ চায়।
হাদীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে প্রয়োজন নিরপেক্ষ তদন্ত,স্বচ্ছ জবাবদিহি এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন অবস্থান। যারা এই মৃত্যুকে ব্যবহার করে রাজনীতির মাঠ গরম করতে চায়,তাদের উদ্দেশ্য হাদীর ন্যায়বিচার নয়—তাদের লক্ষ্য ক্ষমতার সমীকরণ বদলানো।
বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ কোনো একটি দল নয়; সবচেয়ে বড় বিপদ হলো চিন্তাহীন আবেগ। জনগণ যতদিন মাথা খাটিয়ে প্রশ্ন করতে জানবে, ততদিন কোনো ‘মাস্টারপ্ল্যান’ই সফল হবে না।

















