সারাদেশ

হাজারীবাগে ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি জবাইখানা তৈরি-পশু জবাই শুরু হয়নি!

  প্রতিনিধি ২ মার্চ ২০২৩ , ৫:৩৪:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে গরু-ছাগল জবাই করার জন্য রাজধানীর হাজারীবাগে ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি জবাইখানা তৈরি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।পাঁচ মাস আগে জবাইখানা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে।কিন্তু এখনো সেখানে পশু জবাই শুরু হয়নি।নতুন করে আরও প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোর পরিকল্পনা করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

এভাবে অর্থ খরচ করাকে অপচয় হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।তাঁরা বলছেন,কাজে লাগবে কি না,সেটা বিবেচনায় না নিয়েই একের পর এক প্রকল্প নেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।তারই একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জবাইখানা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন,আধুনিক পশু জবাইখানা পরিচালনা করতে যে দক্ষ জনবল দরকার হয়, তা তাঁদের নেই।সে কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিয়ে এটি পরিচালনা করতে চান তাঁরা।ইজারাদার পেতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল।ওই বিজ্ঞপ্তিতে তিন দফা সময় উল্লেখ করে দরপত্র জমা দিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল।তবে কোনো প্রতিষ্ঠান জবাইখানার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,ইজারাদার খুঁজতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিকভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জবাইখানা পরিচালনা নিয়ে আলোচনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি।আলোচনাকালে জবাইখানা পরিচালনায় আগ্রহ দেখালেও পরে আর কেউ যোগাযোগ করছেন না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হাজারীবাগে পশু জবাইখানা তৈরিতে খরচ হয়েছে ৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।সেখানে ঘণ্টায় ৩০টি গরু এবং ৬০টি ছাগল জবাই করা যাবে।প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা জবাইখানা চালু রাখা যাবে।

রাজধানীতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার পশু জবাই হয়।বর্তমানে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে যে যেভাবে ইচ্ছা পশু জবাই করে বিক্রি করছেন।বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এই প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।জবাইয়ের আগে অবশ্যই পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।অসুস্থ পশু জবাই হলে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা সম্পৃক্ত এবং যাঁরা এ মাংস খাবেন,তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকবে।জলাতঙ্কসহ নানা ধরনের রোগও হতে পারে।

এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আধুনিক পশু জবাইখানা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সময়ে।সে অনুযায়ী হাজারিবাগ ও কাপ্তানবাজারে দুটি পশু জবাইখানা নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে।কাপ্তানবাজারের জবাইখানা নির্মাণের কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।পরিকল্পনা ছিল,এ দুটি পশু জবাইখানা ঠিকমতো চললে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় আরও জবাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সমস্যা যেখানে;-তিন বছরের জন্য জবাইখানার ইজারার জন্য সাত থেকে আট কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।টাকার এই অঙ্কের কারণেই আগ্রহী প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেছেন,এই টাকা তুলতে হলে সেখানে বিপুলসংখ্যক পশু জবাই হতে হবে।কিন্তু রাজধানীর অলিগলিতে যেভাবে পশু জবাই হচ্ছে,তা বন্ধ করা না হলে কেউ হাজারীবাগে গিয়ে টাকা দিয়ে পশু জবাই করবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন,তিনি সংশ্লিষ্টদের নতুন করে ইজারা মূল্য ঠিক করতে বলেছেন।নতুন মূল্য ঠিক হলে আবারও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।যেহেতু করপোরেশনের নিজস্ব জনবল নেই।তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এটি পরিচালনা করতে হবে।প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেলে অভিযান চালিয়ে যত্রতত্র পশু জবাই বন্ধ করা হবে।

আরও ব্যয়ের পরিকল্পনা;-নাগরিকদের স্বাস্থ্যসম্মত মাংস খাওয়াতে হাজারীবাগে এই পশু জবাইখানা নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে।তখন জবাইখানার ভবন ও যন্ত্রপাতির ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৭০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পাশাপাশি আরও ১১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়।এখন সেখানে নতুন করে আরও কিছু যন্ত্রপাতি বসাতে চাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ।এ জন্য অন্তত আরও ১০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

তাঁরা বলছেন,বর্তমানে যেসব যন্ত্র আছে,সেগুলো দিয়ে জবাইয়ের পর পশুকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কাটা যাবে। একেবারে হাড় থেকে মাংস আলাদা করা যাবে না।মাংস ছোট ছোট টুকরা করা যাবে না।নতুন যে যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে,ওই যন্ত্র বসানো হলে হাড় থেকে মাংস পুরোপুরিভাবে আলাদা করা যাবে।পাশাপাশি হাতের স্পর্শ ছাড়াই ছোট ছোট টুকরা করা যাবে।

এ বিষয়ে নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন,ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া স্বভাবে পরিণত হয়েছে।করপোরেশনের প্রকৌশলীদের মাথার মধ্যে কেবল প্রকল্প ছিল।তাঁরা কার্যকারিতাভিত্তিক ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এত টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণের পরও তা চালু করা যাচ্ছে না।এ ছাড়া প্রকৌশলীদের অবহেলার জন্য সেবামূলক প্রকল্পগুলো মার খাচ্ছে। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content