অপরাধ-আইন-আদালত

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে হত্যাকাণ্ডে দুঃখপ্রকাশ: বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

  প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ , ১১:২০:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

ডেস্ক রিপোর্ট।।হাদী হত্যাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুঃখপ্রকাশকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।বিচার বিভাগের সাংবিধানিক ভূমিকা,নিরপেক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমা অতিক্রম করা হয়েছে কি না—এই প্রশ্ন এখন আইন ও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।

এই ইস্যুতে প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার শামসুল হাসান শুভ। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন— “সুপ্রিম কোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কোনো হত্যাকাণ্ডে দুঃখ প্রকাশ করা নজিরবিহীন ও হাস্যকর।শুধু বাংলাদেশ নয়,সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ আদালতের ওয়েবসাইটে এ ধরনের উদাহরণ নেই।”

⚖️ আইনি বিশ্লেষণ: সাংবিধানিক সীমা অতিক্রম?

সংবিধান অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান দায়িত্ব হলো—

বিচার প্রার্থী মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা

আইনের শাসন বজায় রাখা

নির্বাহী ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে থাকা

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে,কোনো নির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডে সর্বোচ্চ আদালতের অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্মে দুঃখপ্রকাশ করলে তা বিচারাধীন বা সম্ভাব্য বিচারাধীন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।এতে করে—

ভবিষ্যৎ মামলায় বিচারিক নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে

আদালতের ভাবমূর্তি আবেগনির্ভর বা পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে

“Judicial Overreach” বা বিচারিক সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতে পারে

ব্যারিস্টার শুভ আরও বলেন—> “সুপ্রিম কোর্টের কাজ বিচার করা,শোকবার্তা দেওয়া নয়। এই কালচার চালুর চেষ্টার আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”

🏛️ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: বিচার বিভাগকে টানার চেষ্টা?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবেগ ও জনমত তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ছে।সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দুঃখপ্রকাশ—

রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার একটি সূক্ষ্ম চেষ্টা কি না

নির্দিষ্ট ঘটনার প্রতি রাষ্ট্রীয় সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার কৌশল কি না
—এই প্রশ্নগুলো সামনে এনেছে।

একজন বিশ্লেষক বলেন,“আজ যদি একটি হত্যাকাণ্ডে দুঃখপ্রকাশ করা হয়,আগামীতে রাজনৈতিক সহিংসতা,গুম বা বিতর্কিত মৃত্যুতেও কি আদালতকে অবস্থান নিতে হবে?”

নজিরের অভাব: বিশ্বব্যাপী অনুপস্থিত চর্চা

ব্যারিস্টার শুভর দাবি অনুযায়ী—

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্টসহ
বিশ্বের কোনো শীর্ষ আদালতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত বা নির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডে শোকবার্তা প্রকাশের নজির নেই।

তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে মন্তব্য করেন— “হাদী বেঁচে থাকলে, হয়তো এই দুঃখপ্রকাশ দেখেই সে নিজেই দুঃখ পেতো।”

🔍 উপসংহার

এই ঘটনা শুধুই একটি শোকবার্তা নয়—এটি বিচার বিভাগের ভূমিকা,সীমা ও ভবিষ্যৎ আচরণ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আইনজ্ঞদের মতে,সুপ্রিম কোর্টের মতো সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে আবেগ নয়,আইন ও ন্যায়ের কঠোর কাঠামোর মধ্যেই অবস্থান করতে হবে।

নচেৎ,বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসই সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে।

আরও খবর

Sponsered content