সারাদেশ

সুন্দরবনের হরিণ শিকারীরা বেপরোয়া

  প্রতিনিধি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ১২:৪১:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বাগেরহাট প্রতিনিধি।।সুন্দরবনে হঠাৎ হরিণ শিকার বেড়ে গেছে।বনের আশপাশ এলাকার শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে নিয়মিত হরিণ শিকার করে মাংস ও তার চামড়া বিক্রি করছে। কাঁকড়া শিকারের টোপ বানাতেও কিছু জেলে ব্যবহার করছে হরিণের মাংস।গত ১৫ দিনে ১০ হরিণ শিকারিকে আটক করেছেন বনরক্ষীরা।তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৬ কেজি হরিণের মাংস,চারটি চামড়া,হরিণ ধরা ফাঁদ,২০ রাউন্ড গুলি ও একটি ট্রলার।

নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন জেলে জানিয়েছেন,হরিণ শিকার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে।গভীর বনে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার মাংস বিক্রি করছে শিকারিরা।জেলেরা বলছেন,শিকারিদের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের হুমকি দেওয়া হয়।কাঁকড়া শিকারিরাও ব্যাপকভাবে হরিণ শিকার করে মাংস দিয়ে টোপ তৈরি করছে।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার সোনাতলা,পানিরঘাট,রাজাপুর, রসুলপুর,মোড়েলগঞ্জের জিউধরা,পাথরঘাটর চরদুয়ানী, জ্ঞানপাড়া এলাকার শিকারিরা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে জেলে বেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে নিয়ে আসে।অনেক চোরা শিকারি আবার গোপনে সুন্দরবনে ঢুকে হরিণ শিকার করে।আর কাঁকড়ার টোপ বানাতে হরিণ শিকার করে রামপাল ও সাতক্ষীরা এলাকার কিছু জেলে।

এছাড়া সুন্দরবনের সুপতি,দুবলা,কটকা,কচিখালী,বাদামতলা, চান্দেশ্বর,টিয়ারচর,কোকিলমুনি,আন্ধারমানিকসহ গভীর বনের সুবিধাজনক স্থানে লাইলনের ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে থাকে।তারা মাছের ভেতরে বরফ দিয়ে সুবিধাজনক সময়ে লোকালয়ে হরিণের মাংস পাচার করে থাকে।প্রতি কেজি হরিণের মাংস ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

এদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় শিকারিরা নিয়মিত হরিণ শিকার করে আসছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বনরক্ষীদের হাতে দুই-চারটি হরিণ পাচারের ঘটনা ধরা পরলেও শিকারিরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে খুব সহজেই বেরিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সুন্দরবন সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসির) সদস্য ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনের হরিণ শিকারি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।বনসংলগ্ন এলাকার লোকজনই হরিণ শিকারের সাথে বেশি জড়িত।এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন,স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় শিকারিরা হরিণ শিকার করে থাকে।বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বনরক্ষীদের আরও সচেতন হতে হবে।’

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান,বনবিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে সুন্দরবনে এই অপতৎপরতা বেড়ে গেছে।’

বনবিভাগের আরও কঠোর হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ধরা পড়া হরিণ শিকারিদের জন্য কঠোর আইনও করতে হবে।’

বনবিভাগ সূত্র জানান,গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ইসহাকের চিলা এলাকা থেকে ২০ কেচি হরিণের মাংসহ একটি ডিঙ্গি নৌকা আটক করা হয়।এসময় চোরা শিকারিরা পালিয়ে যায়।২৭ জানুয়ারি দুবলার জামতলা ও আলোরকোল থেকে হরিণের মাংস ও ফাঁদসহ পাঁচ হরিণ শিকারিকে আটক করেছে বনরক্ষীরা। আটক নওরেশ, প্রদীপ,রাজিব,ইউনুস ও ইদ্রিস রামপালের শ্রীফলতলা গ্রামের বাসিন্দা।গত ২৫ জানুয়ারি সুন্দরবনের নীলকমল এলাকা থেকে ২০ কেজি হরিণের মাংস ও ২০ রাউন্ড গুলিসহ পাথরঘাটার হিরো আকন নামের এক শিকারিকে আটক করে বনরক্ষীরা।

২৩ জানুয়ারি শরণখোলার খুড়িয়াখালী গ্রামের তানজের আলীর বাড়ি থেকে দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করে শরণখোলা স্টেশনের বনরক্ষীরা।২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সুন্দরবনের কচিখালীর ডিমের চর থেকে ১৫ কেজি হরিণের মাংস,একটি ট্রলারসহ দুই শিকারিকে আটক করে কচিখালীর বনরক্ষীরা।আটক নিজাম ও ইদ্রিসের বাড়ি পাথরঘাটর পদ্মসুলুইজ এলাকায়।এর আগে ১৮ জানুয়ারি দুবলার চরের নারকেলবাড়িয়া থেকে ৫ কেজি হরিণের মাংসসহ দুই জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলে হাজতে প্রেরণ করা হয়।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন,হরিণ শিকারিদের ধরতে বনবিভাগের নিয়মিত টহল অব্যাহত আছে।নিয়মিত টহলে কারণে শিকারিরা আটক হচ্ছে।তবে আটক এসব শিকারিদের অপতৎপরতা ঠেকাতে যে আইন আছে,সেই আইন আরও কঠোর করতে সংস্কারের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন,বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি সঠিক নজরদারি না দেয় তাহলে এই অপকর্ম চলতে থাকবে।সবসময় আইন দিয়ে মানুষকে আটকানো যায় না, এক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে হবে।আর তা না হলে দুর্বৃত্তরাতো দুর্বৃত্তায়ন করবেই।সচেতনতা বাড়াতে পারলে সুন্দরবনে হরিণ শিকারিদের অপতৎপরতা ঠেকানো যাবে’।

আরও খবর

Sponsered content