জাতীয়

সীমান্তে দুর্নীতির কারণে অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না-পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

  প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৬:০৪:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আর ঢুকতে না দিতে অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিলেও সীমান্তে দুর্নীতির কারণে তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

রোববার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর লোক ঢুকে যাচ্ছে,নৌকা দিয়ে ঢুকছে।ব্যাপারটা হলো যে, শুধু যে বর্ডার দিয়ে ঢুকছে তাও না,বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। এটাকে আটকানো খুব কঠিন হয়ে যায়।”

 

অনুপ্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয় টেনে উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের নীতিগতভাবে অবস্থান ছিল, আমরা কাউকে ঢুকতে দিব না।কিন্তু পরিস্থিতি কখনও কখনও এমন দাঁড়ায়, কিছু করার থাকে না।

“সেই রকম পরিস্থিতিতে আমরা এই ৬০ হাজারকে ঢুকতে দিয়েছি। ঢুকতে দিয়েছি, ফর্মালি দিয়েছি যে তাও না। তারা বিভিন্ন পথে ঢুকে গেছেন এবং আরেকটা কথাও আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, প্রচুর দুর্নীতি আছে বর্ডারে; এটা সত্যি কথা, এটা অস্বীকার করার কোনো অর্থ নাই।”

 

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট।

এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে কক্সবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।

আগের সরকারের আমলে কয়েক দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নথিপত্র চালাচালি হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উপরন্তু মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ সব ভেস্তে দিয়েছে।

রাখাইনে তীব্র যুদ্ধের তীব্রতায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ চলার মধ্যে অগাস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেয়, আর কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

গত কয়েক মাসে ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে এর মধ্যে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে থাইল্যান্ডে দুটি ‘অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়’ সভায় যোগ দেওয়ার পর রোববার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

১৯ ডিসেম্বর মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সীমান্তবর্তী ছয় দেশকে নিয়ে থাইল্যান্ড আয়োজিত মন্ত্রী পর্যায়ের ‘অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়’ সভায় যোগ দেন তিনি। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শোয়ে যোগ দেন।

থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সানগিয়ামপঙ্গসার সভাপতিত্বে ছয় জাতির ওই আলোচনায় লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থংসাভান ফনভিহানে, চীনের সহ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন ওয়েইদং এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি অংশ নেন।

এরপর সীমান্তবর্তী ওই দেশের প্রতিনিধিরা একই ইস্যুতে আসিয়ান-পর্যায়ের ‘অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়েও’ যোগ দেন।

২০১৭ সালের মতো আবারও রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে, এমন আশঙ্কার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি এখনও মনে করি না যে, আরেকটা ঢলের মত কিছু আসবে। যদিও অনেকে এ রকম আশঙ্কা করছেন।

“আশঙ্কা আমাদের আছে, কিন্তু সেই ঢলটা ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে আমাদেরকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে।”

আসিয়ানের সঙ্গে বৈঠকেও সবার স্বার্থে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জোর দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বলেছি, সমস্যা আমাদের বেশি হবে ঠিক, কিন্তু তোমাদের প্রত্যেকেরই হবে। একেবারে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্তও পৌঁছে গেছে নৌকায় করে।

“কাজে, এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত ছিল, কিন্তু আর থাকবে না সেই রকম, সবারই সমস্যা হবে যদি সমাধান না হয়।”

আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি সেখানে স্পষ্টভাবে বলেছি যে, যদি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হয়, আপনারা যে শান্তির কথা চিন্তা করছেন, আপনারা যে স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করছেন মিয়ানমারে, এটা কোনো দিন সম্ভব না।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি তাদেরকে এটাও বলেছি যে, এখানে যে রোহিঙ্গা যারা আছে, তাদের ডেমোগ্রাফিক প্যাটার্ন দেখতে হবে, তাদের একটি বড় অংশ হচ্ছে এখনও শিশু, অনেকে টিনএজার এবং বিশের দশকে বয়স বেশিরভাগেরই…

“এই মানুষগুলির সামনে যদি আপনারা আশা দেখাতে না পারেন, টানেলের ওপারে আলো দেখাতে না পারেন, তারা ডেসপারেট থাকবে এবং ডেসপারেট লোকজন ডেসপারেট কার্যকলাপ করবেই; এটা আপনারা পছন্দ করুন বা না করুন। এটা আমি তাদেরকে স্পষ্ট করে বলেছি।”

 

কী আলোচনা মিয়ানমারের সঙ্গে

থাইল্যান্ডে ছয় জাতি মতবিনিময়ের আগে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গে তৌহিদে হোসেন বলেন, “মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যখন আমার সাথে কথা হয়েছে, তখন বলেছে, নাগরিকত্ব দীর্ঘ ইস্যু, অনেক আলোচনার বিষয় আছে।

“আমি বলেছি যে, আমি নাগরিকত্ব নিয়ে তোমার সাথে কথা বলছি না, আমার কথা হলো যে, তাদেরকে অধিকার ও নিরাপত্তার সাথে ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এটা তোমাদের দায়িত্ব এবং আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও বলেছি, আসিয়ানের এ ব্যাপারে সহায়তা চেয়েছি।”

 

সীমান্ত মিয়ানমার সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগে অসুবিধা হওয়ার কথা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার কথা বলেন উপদেষ্টা।

 

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ মিয়ানমারকে বলেছি, তোমাদের যে বর্ডার সেই বর্ডারেতো তোমাদের নিয়ন্ত্রণ নাই। এটা সম্পূর্ণভাবে একটা নন-স্টেট অ্যাক্টরের কাছে চলে গেছে; আমরাতো একটা রাষ্ট্র হিসাবে নন-স্টেট অ্যাক্টরের সাথে নেগোশিয়েট করতে পারি না।

 

“কাজেই, তোমাদেরকে দেখতে হবে যে, তোমরা কোন পদ্ধতিতে বর্ডারে এবং রাখাইনে সমস্যার সমাধান করবে। কারণ, দু মাসে আরও ৬০ হাজার মানুষ অত্যাচারিত হয়ে কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।”

 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের যতটা উদ্বেগ, বাকী দেশগুলোর ক্ষেত্রে তেমন নয়। তাদের বেশি উদ্বেগ ছিল অন্যান্য ইস্যুতে।

 

“আমার সফরের ফলাফল কী? আমি এটুকু বলব যে, যেহেতু এটা ইনফর্মাল কনসালটেশন ছিল, কাজেই আমার পক্ষে সম্ভব ছিল অনেক বেশি কথা, যেটা হয়ত এটা অফিসিয়াল ভিজিট বা অফিসিয়াল মিটিংয়ে হয়ত এটা আমি বলতে পারি না। এই সুযোগটা আমি গ্রহণ করেছি এবং আমাদের অবস্থানটা খুব পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছি তাদের কাছে।

0Shares

আরও খবর

Sponsered content

0 Shares