প্রতিনিধি ২১ নভেম্বর ২০২২ , ৪:৩০:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট প্রতিনিধি।।সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সেবাপ্রার্থী এক নারী। এতে অভিযোগ করা হয়, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি। কয়েক দফা ভোগান্তির পর আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) দিতে পারলেও পরিচালকের কক্ষে তাঁকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বানোয়াট অভিযোগ লিখে নেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার সিলেট মহানগরের মোগলাবাজার থানায় এ জিডি করেন সাহারা খানম (৫৩) নামের এক নারী। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হয়। সহারা খানম সিলেটের মোগলাবাজার থানার পাঠানপাড়া গোটাটিকর এলাকা বাসিন্দা।
জিডির তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, থানায় যেকোনো জিডি হলে তা আদালতে অবহিত করতে হয়। এ জিডির বিষয়ও আদালতের নজরে আনা হলে বাদীর উপস্থিতিতে গতকাল রোববার শুনানি হয়।পরে আদালত জিডির বিষয়টি তদন্তের আদেশ দেন। তাঁরা ওই নারীর অভিযোগ তদন্ত করছেন।
সাহারা খানমের অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জিডির বর্ণনা অনুযায়ী,১০ নভেম্বর বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয়ে পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দেন সাহারা খানম। দায়িত্বরত কর্মকর্তা এরপর তাঁকে কার্যালয়ের ২০৭ নম্বর কক্ষে ১৩ নভেম্বর এসে আঙুলের ছাপ দিতে বলেন। নির্দিষ্ট দিনে ওই কক্ষে গেলে সেখানকার কর্মকর্তা তাঁকে জানান,আবেদন অনলাইনে জমা হয়নি।তাই পরদিন তাঁকে পুনরায় আসতে হবে।
২০৭ নম্বর কক্ষ থেকে বেরোনোর সময় এক ব্যক্তি ওই নারীকে বলেন, আবেদনে ‘মার্কা’ (দালাল ধরার বিশেষ চিহ্ন)না থাকায় সেটি অনলাইনে জমা হয়নি।ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে ওই নারী পরদিন (১৪ নভেম্বর) সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গিয়ে সহায়তা চান। পাসপোর্ট কার্যালয়ের পাশেই বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। তখন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ওই নারীকে সেই কক্ষে গিয়ে তাঁর (অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার) কথা বলতে বলেন।
সাহারা খানম এরপর পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কথা বলতেই ২০৭ নম্বর কক্ষের দায়িত্বরত ব্যক্তিটি দুর্ব্যবহার করেন।এতে ব্যথিত হয়ে তিনি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক অতিরিক্ত মহাপরিচালকের সঙ্গে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান। ষতখন ওই অতিরিক্ত মহাপরিচালক তাঁকে বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলামের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
জিডিতে অভিযোগ করা হয়েছে, অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পরামর্শ অনুযায়ী সাহারা খানম পরিচালকের কক্ষের সামনে যান এবং দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর সাক্ষাতের সময় পান। দেখা হওয়ার পর তিনি পুরো বিষয় জানান।তখন মাজহারুল ইসলাম তাঁকে জানান,পাসপোর্টের জন্য ছয়েফ খান নামের এক ব্যক্তিকে আট হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।অভিযোগ দিলে আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে বলে জানান। কিন্তু তিনি এমন মিথ্যা অভিযোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সাহারা খানমের ভাষ্য অনুযায়ী,এরপর মাজহারুল ইসলাম ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেন।একপর্যায়ে কার্যালয়টির আরও দুজন কর্মকর্তাকে এনে ওই কক্ষের দরজা বন্ধ করে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য হুমকি দেন।এ অভিযোগ না করলে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা ও হত্যার হুমকিও তাঁরা দেন। পরে প্রাণভয়ে তিনি একটা সাদা কাগজে ‘ছয়েফ খানকে আমার পাসপোর্টের জন্য ৮ হাজার টাকা দিয়েছি’ বাক্যটি লিখে দেন।এরপর পাসপোর্ট কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাহারা খানমের আঙুলের ছাপ নেন।