অপরাধ-আইন-আদালত

সাবরিনা শারমিন ১৭ বছর বয়সে এমবিবিএস ও ৮ বছরে এসএসসি পাস!

  প্রতিনিধি ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ , ৩:০২:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেওয়ার মামলায় জেকেজির চেয়ারম্যান ও বরখাস্ত চিকিৎসক সাবরিনা শারমিন,তাঁর স্বামী জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীসহ আটজনকে ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।ওই দম্পতি এখন কারাগারে।জালিয়াতি করে বানানো দ্বিতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবরিনা শারমিন ১৭ বছর বয়সে এমবিবিএস ও ৮ বছরে এসএসসি পাস করেছেন।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে সাবরিনার দ্বিতীয় এনআইডিতে এসব তথ্য রয়েছে বলে উল্লেখ আছে।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) আদালতে এই অভিযোগপত্র দিয়েছে।সাবরিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও আয়কর বিবরণী সনদ তৈরিতে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান (ডিবি লালবাগ বিভাগে কর্মরত) সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন,তিনি গুলশান বিভাগে থাকার সময় সাবরিনার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।সাবরিনার বিরুদ্ধে জালিয়াতি করার তথ্য প্রমাণিত হয়েছে।

মহামারির মধ্যে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করে ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগে করা একটি মামলায় ২০২০ সালে ১২ জুলাই পুলিশ সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ছিলেন।গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।

জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগে গত বছরের ৩০ আগস্ট সাবরিনার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় আরেকটি মামলা হয়।ওই মামলার তদন্তের দায়িত্বে আছে ডিবি।

জাতীয় পরিচয়পত্রে যা আছে:-মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়,ডিবির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সাবরিনা ২০০৯ সালে প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র করেন।এতে তাঁর নাম লেখা রয়েছে সাবরিনা শারমিন হোসেন।তাঁর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা মোহাম্মদপুরের শ্যামলী বলে উল্লেখ রয়েছে ওই পরিচয়পত্রে। জন্মতারিখ দেওয়া আছে ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর।পেশা হিসেবে সরকারি চাকরি উল্লেখ করা আছে।বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হোসেন ও মায়ের নাম কিশোয়ার জেসমিন উল্লেখ রয়েছে।

এরপর ২০১৬ সালে সাবরিনার আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য পায় ডিবি।তাতে সাবরিনার নাম আছে সাবরিনা শারমিন হুসেন।বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া আছে গুলশান প্রগতি সরণির বাড্ডা।জন্মতারিখ দেওয়া আছে ১৯৮৩ সালের ২ ডিসেম্বর।বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হোসেন,মায়ের নাম জেসমিন হুসেন দেওয়া আছে।এতে পেশা দেওয়া আছে চিকিৎসক।

সাবরিনা এসএসসি দিয়েছেন ৮ বছর বয়সে:-আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্র অনুসারে সাবরিনা ১৯৯১ সালে এসএসসি ও ২০০০ সালে এমবিবিএস পাস করেন। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে করা দ্বিতীয় এনআইডিতে সাবরিনার জন্ম ১৯৮৩ সালে।সে অনুযায়ী সাবরিনা ৮ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন।১৭ বছর বয়সে এমবিবিএস দিয়েছেন।

সাবরিনার দ্বিতীয় আয়কর বিবরণী সনদেও একই তথ্য রয়েছে।জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে করা ওই এনআইডি ব্যবহার করে তিনি চাকরির মেয়াদকাল সাত বছর বাড়িয়েছেন।সে অনুযায়ী ২০৪২ সালের ১ ডিসেম্বর তাঁর অবসর–পরবর্তী ছুটিতে (পিআরএল পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ) যাওয়ার কথা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. রিপন উদ্দিন অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন,সাবরিনার বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জবানবন্দি, সাক্ষ্যপ্রমাণ,নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত এনআইডি সার্ভার, ২০০৯ ও ২০১৬ সালে ভোটার নিবন্ধন ফরম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিবরণী,নির্বাচনে কমিশন সচিবালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হয়। এতে উঠে এসেছে,মিথ্যা ও তথ্য বিকৃতি করে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করায় তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০–এর ১৪/১৫ ধারায় অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে করা আয়কর বিবরণী খাঁটি দলিল হিসেবে ব্যবহার করায় দণ্ডবিধির ৪৬৫, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় অপরাধের সত্যতা পাওয়া গেছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০ এর ১৪ ধারায় অপরাধ প্রমাণ হলে এর শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।১৫ ধারার শাস্তি হলো অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ ছাড়া ৪৬৫ ধারার শাস্তি হলো,দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।৪৬৮ ধারার শাস্তি হলো,সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানার দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

গত বছরে এই জালিয়াতিতে নির্বাচন কমিশন ও আয়কর বিভাগের ‘কিছু কর্মচারীর সম্পৃক্ততা’ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান।তবে পরে সাবরিনার সঙ্গে তাঁদের অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়নি।

মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন,জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে করা সাবরিনার দ্বিতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র বায়োমেট্রিক ছিল না।দ্বিতীয় জালিয়াতি করা জাতীয় পরিচয়পত্র ও আয়কর বিবরণী সনদের তথ্য প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বত্রই এ তথ্য দিচ্ছিলেন তিনি।এ ছাড়া একই কারণে সাবরিনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নথি থেকে তাঁর এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট সরিয়ে ফেলেছেন।সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাবরিনার এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট ডিবিকে দিতে পারেনি।তিনি মনে করেন,সরকারি চাকরিতে বেশি সময় থাকার উদ্দেশ্যে সাবরিনা এই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

সাবরিনাকে গ্রেপ্তারের পর হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল ডিবি।সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন,রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি দাবি করেন,২৭তম বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস (স্বাস্থ্য) উত্তীর্ণ হন তিনি।যদিও তিনি ২৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।রিমান্ডে তিনি ডিবি কর্মকর্তাদের শুধুই বিভ্রান্তিতে ফেলেছেন।’

আরও খবর

Sponsered content