প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৫:০৮:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী প্রতিনিধি।।রাজশাহীতে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রতারককে দিয়ে শাহমখদুম থানায় দায়ের করা মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিক সহ সারাদেশের সাংবাদক সমাজ।এছাড়া ওসির প্রতক্ষ্য মদদে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও ওসিকে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের ব্যানারে রাজশাহীতে কর্মরত সকল সাংবাদিক।

মানববন্ধনে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের পাশাপাশি রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাব,রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম, রাজশাহী প্রেসক্লাব,ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রাজশাহীর শাখা,জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী শাখাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও তাদের সদস্যরা অংশ নেয় এই মানব বন্ধনে। মানববন্ধনে বক্তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শাহমখদুম থানার ওসিকে অপসারণের দাবি জানান।অন্যথায় শীঘ্রই কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিক নেতারা।
ঘটনা প্রবাহ:-
গত ২৬ আগস্ট রাজশাহী নগরীর অগ্রণী ব্যাংক আরডিএ শাখায় জমি নিলামকে কেন্দ্র করে এক ঘটনায় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় একটি পত্রিকার,কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয়দানকারী প্রতারক(ঠিকাদার) আক্তারুল ইসলামের সঙ্গে:সাংবাদিকদের তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।এ সময় আক্তার একজন সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেলেন এবং অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন।ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
পরে সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ঠ থানায় প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে ওসি মাছুমা মুস্তারী মামলা না নিয়ে কেবল লিখিত অভিযোগ নেন।এরপর সাংবাদিকদের ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি।
ঘটনার ৭ দিন পর ওসি প্রতারক আক্তারকে থানায় ডেকে ওসি নিজেই এজাহার লিখে(কম্পোজ করে) আক্তারের স্বাক্ষর নেন।এর পর এজাহারটি চাঁদাবাজির মামলা হিসেবে থানায় নথিভুক্ত করা হয়।যার নং (নম্বর-২/২০২৫)।
মামলায় আসামি করা সাংবাদিকরা হলেন—‘রাজশাহীর আলো’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আজিবার রহমান,সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ফায়সাল আহম্মেদ,আরটিভির ক্যামেরাম্যান আরিফুল হক রনি,কালের কণ্ঠের মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি নাঈম হোসেন,গণমুক্তি পত্রিকার ব্যুরো প্রধান মাজহারুল ইসলাম এবং ‘আজকের প্রত্যাশা’র সাংবাদিক নাজমুল হক।
তবে আক্তার মুঠেফোনে বলেন, লতিনি মামলা সম্পর্কে কিছুই জানে না,প্রশাসনের চাপে তিনি অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন।এছাড়া তিনি প্রচন্ড মানষিক চাপে আছেন।( অডিও কল সংরক্ষিত)।
প্রতারক আক্তারের স্বাক্ষরিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে,সাংবাদিকরা তার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন।তবে ঘটনার ভিডিওচিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করছে।এমনকি প্রতারক আক্তার নিজেই স্বীকার করেন তিনি মামলা সম্পর্কে জানে না,প্রশাসনের চাপে তিনি মামলা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের দাবি,এটি পুরোপুরি ওসির প্রতিশোধমূলক মামলা,যা পুলিশের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকারই প্রমাণ।
সাংবাদিকের মামলা না নিয়ে আ’লীগের দোসর প্রতারক আক্তারুল ইসলামকে থানায় ওসি মামলা নেয়।মূলত ফ্যাসিস্ট ওসি একজন ফ্যাসিস্টকে বাঁচাতে ও নিজের নানা অপকর্ম ঢাকতে এ মিথ্যা মামলাটি নেয়। মামলার একজন আসামী ওইদিন ঢাকায় ছিলো সেও নিউজ করার অপরাধে মামলার আসামী হয়।
কে এই আক্তার:-
আওয়ামী স্বৈরাচার আমলে আওমাীলীগে প্রভাব খাটিয়ে এলজিইডি,বিএমডিএ,এমনকি গণপূর্ত ভবনে ভীতি প্রদর্শন করে কয়েক কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেন।তিনি নামে মাত্র কাজ করে কাজের বিলেও উত্তোলন করেন।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এলজিইডি ও রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের একাধিক ঠিকাদার বলেন,আক্তার স্বৈরাশাষকের এমপি মির্জা আজম কে তার নানা শ্বশুর ও নুরু ইসলাম ঠান্ডুকে নানা পরিচয় দিতেন।তাদের ভয় দেখিয়ে কাজ নেয়, কাজের কমিশন নেয়া থেকে অফিসারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন।
৫ আগস্ট ঘটনা প্রবাহের পর হঠাৎ করে তিনি ভোল্ট পাল্টিয়ে জামাত-বিএনপি বনে গেছেন।এবং একই কায়দায় প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।।
আজকের মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,“গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার।অথচ পুলিশ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে ভুক্তভোগীদের আসামি করেছে।এটি শুধু সাংবাদিকদের নয়,গণতন্ত্রকেও হুমকির মুখে ফেলছে।”
রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমসহ অন্যান্য বক্তারা বলেন,আমরা অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ওসিকে অপসারণ দাবি করছি।অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।” আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওসিকে প্রত্যাহার পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেন তাঁরা।
সাংবাদিক নেতারা মনে করছেন,এই মামলা ‘গণমাধ্যমকর্মী সুরক্ষা আইন’ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করেছে। তারা বলেন,এ ধরনের মামলা গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুল ইসলাম,রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ আরিফ,ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন রাজশাহী শাখার সাবেক সভাপতি ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থা রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রকি,রাজশাহী অনলাইন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি মীর তোফায়েল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন জাহিদ,সদস্য তন্ময় দেন নাথ,রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সদস্য রাকিবুল ইসলাম রকি,প্রেসিডিয়াম মেম্বার লিয়াকত হোসেন, রাজশাহী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার মাখন প্রমূখ।

















