প্রতিনিধি ৩১ অক্টোবর ২০২৫ , ১:২৪:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ‘ , মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘ রয়টার্স ‘ ও ফরাসি সংবাদ মাধ্যম ‘এএফপি ‘ একই দিনে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচার করে সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।রাজনৈতিক নেতাদের জন্য বিশ্বের জনপ্রিয় সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।সম্রাট জুলিয়াস সিজার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমালোচনা করে জনসমর্থন আদায় করে রোমান সাম্রাজ্যের ডিক্টেটর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।সম্রাট নেপোলিয়ন একটি সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।এর ফলে তিনি একদিন ফ্রান্সের সম্রাট নির্বাচিত হন। জার্মানির হিটলার একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে জার্মানির চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত হয়ে পরবর্তীতে ” ফ্যুয়েরার – এ পরিণত হন।

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মাত্র দশ মাস আগে,১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন,যা তার জীবনের মোড় ও ইরানের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছিলো।১৯৭৮ সালে ফ্রান্সে পলাতক থাকা অবস্থায় বার্তা সংস্থা এপি ও রয়টার্সকে একটি সাক্ষাৎকার দেন ইরানের ধর্মীয় নেতা খোমেনি।তার মাত্র ৪ মাসের মাথায় তার ভাগ্যর পরিবর্তন ঘটে।১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর কেড়েছিলেন মায়ানমারের অং সান সুচি ।১৯৮৭ সালে লন্ডনে বসে বার্তা সংস্থা এপি ও বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর মায়ানমারের অং সান সুচির ভাগ্য পরিবর্তন হয়।এর চার বছর পর ১৯৯১ সালে সু চি নোবেল পুরস্কার পান।
মাত্র কয়েক মাস আগে ভারতের জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্র যুগশঙ্খে শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। দিল্লির সিনিয়র কুটনৈতিক নয়মিনা বসু মনে করেন।এক সঙ্গে শেখ হাসিনার তিন তিনটি সাক্ষাৎকার আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হলোঃ- ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না পেলে তা কিছুতেই সম্ভব হতো না।” শেখ হাসিনার অবস্থান ও তার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখছে অমিত শাহ এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,যা জয়শঙ্করের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে করা হচ্ছে।এতে অবশ্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সবুজ সংকেত আছে।
ভারতের জনপ্রিয় মিডিয়া ” WION” এ শেখ হাসিনা দেশে ফেরার বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন , ” I would of course love to go home.So long as the Government there was legitimate. The Constitution was being upheld.and law and order genuinely prevailed.”
গত কিছুদিন আগে মার্কিন স্বনামধন্য সংবাদ সংস্থা এপি ( অ্যাসোসিয়েট প্রেস) এর সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।যা বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনার ঝড় তুলছে। হঠাৎ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামীলীগ নিয়ে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এপি ও রয়টার্সের সক্রিয় হয়ে উঠা এবং ফ্রান্স ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম এএফপি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের মতো সংবাদপত্রে শেখ হাসিনার আবার বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচিত হয়ে উঠা পশ্চিমা মিডিয়ায় আওয়ামীলীগ রাজনীতির জন্য একটা সবুজ সংকেত এটা এখন দুধের শিশুও বুঝতে পারছে।
ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টর (আইডিএমসি) ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘাতে এক লাখ ৫৯ হাজার মানুষের বাস্তুচ্যূত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছে।যা কালের কণ্ঠ সহ বেশকিছু সংবাদ খুব গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে।এসব বিশ্ব রাজনীতিতে ইউনূসের জন্য অস্বস্তিদায়ক ও লজ্জাজনক।এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে গত ১৪ মাসে গদি টিকিয়ে রাখার জন্য ইউনূস বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কি পরিমান নির্যাতন ও দমন – পীড়ন অব্যাহত রেখেছেন।এসব বিশ্ব রাজনীতিতে ইউনূস সরকারের দেউলিয়াত্বের প্রকাশ মাত্র।
বিশ্বের শীর্ষ তিনটি বার্তাসংস্থার মধ্যে এপি,এএফপি ও রয়টার্স একযুগে শেখ হাসিনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে।বিশ্বের প্রায় সব গণমাধ্যম এখনও রয়টার্সের উপর নির্ভরশীল।মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন নিহত হওয়ার পর রয়টার্সের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।রয়টার্সের সদরদপ্তর হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে।সব মিলিয়ে শেখ হাসিনা প্রশ্নে নমনীয় হতে শুরু করেছে পশ্চিমা মিডিয়া ও মার্কিন প্রশাসন।আজ বাংলাদেশে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নামে শেখ হাসিনাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়ার সব প্রক্রিয়া শেষ করছে তথাকথিত “টমোটো ট্রায়াল।” ১৯৭১ সালে এইভাবে মিথ্যা মামলায় ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলো পাকিস্তান।তার জবাবে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট শেখ মুজিবের গোপন বিচার নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেছিলেন, “নভেম্বরে পূর্ব বাংলায় হারিকেনের ধ্বংসযজ্ঞ এবং পরবর্তী কলেরা মহামারির চেয়েও ভয়াবহ হবে এর পরিণতি।ঠিক তাই হয়েছিল।৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে পাকিস্তানকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে এবং বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নিয়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীন এক বাংলাদেশ।সেই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে যারা মিথ্যা মামলায় শেখ হাসিনাকে ফাঁসি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে তারা কত বড় বোকার স্বর্গে বসবাস করছে তার প্রমাণ হচ্ছে রয়টার্স,দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও এএফপিতে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে কুয়ালালামপুরে এক বৈঠক শেষে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।এসব ইউনূসের জন্য অস্বস্তিকর শুধু নয় , ভয়াবহ দুঃসংবাদ ও বটে। এছাড়াও হেগসেথ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দং জুনের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন।
গত চৌদ্দ মাসে ইউনূসের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব,জুলাই আগষ্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিক শিষ বহির্ভূত “টমেটো ট্রায়াল” আমেরিকাকে চট্রগ্রাম বন্দর দেওয়ার প্রতিবাদে ১২ টি বাম সংগঠনের প্রতিবাদ সহ আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের একের প্রতি অপরের অবিশ্বাস থেকে এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ।” ফ্রেমওয়ার্ক পর দ্য ইউএস – ইন্ডিয়া মেজর ডিফেন্স পার্টনারশিপ ” এখন ইউনূসের জন্য গলার কাটা হয়ে দেখা দিতে পারে।যতদিন যাচ্ছে রাজনীতিতে বন্ধু হীন হয়ে পড়েছেন ইউনূস।শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সমর্থন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।এসব শেখ হাসিনার ফিরে আসার ইঙ্গিত মাত্র ।।

















